1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ধর্ষণের শিকার অনেকে ফোন করে প্রতিকার পেয়েছেন’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ অক্টোবর ২০২০

তিন বছরে মানুষ ২ কোটি ৪০ লাখ বার ফোন করেছেন ৯৯৯ নম্বরে৷ তাদের ৮১ ভাগই পুরুষ আর মাত্র ১৯ ভাগ নারী৷ এক সাক্ষাৎকারে তাই অর্জনের পাশাপাশি আক্ষেপের কথাও বলেছেন সেবার দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তবারক উল্ল্যাহ৷

ছবি: Privat

ডয়চে ভেলে : ৯৯৯ নম্বরটি কি পুলিশের কাছে সহযোগিতার জন্য , নাকি জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন?

তবারক উল্ল্যাহ : এটা মূলত জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন৷ এটি আইসিটি উপদেষ্টার নির্দেশক্রমে ২০১৭ সালে পুলিশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে৷ এটি জাতীয় জরুরি সেবা৷ এটি পরিচালনার মূল ভূমিকা পালন করছে পুলিশ৷ সরকার এখন চিন্তা ভাবনা করছে এটি পরিচালনার জন্য পুলিশের আলাদা একটা ইউনিট করে এটি পরিচালনা করা হবে৷

এখনো তো অনেক ঘটনায় অনেকে ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চান না৷ কেন চান না? তারা কি আসলে জানেন না?

আমাদের দেশে এখন জনসংখ্যা ১৭/১৮ কোটি৷ সবাই তো আমাদের কাছে ফোন করে সেবা নেন না৷ না নেওয়ার বড় কারণ, তারা আসলে এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷ আমাদের দেশে যারা শহরে বসবাস করে, তারা হয়ত সবসময় মিডিয়া বা পেপার পত্রিকার রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন৷ এ কারণে তারা হয়তো এই সেবা সম্পর্কে জানেন৷ কিন্তু যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, তারা হয়ত সবসময় মিডিয়ার খবর সম্পর্কে জানেন না৷ তাদের অনেকেই এখনো এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷

‘এটির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য এখনো আমরা বড় ধরনের কোনো প্রোগ্রাম করতে পারিনি’

This browser does not support the audio element.

সবাইকে এই সেবা সম্পর্কে অবহিত করতে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?

২০১৭ সালে চালু হওয়ার পর মিডিয়ার মাধ্যমে এ সেবা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি৷ আসলে এটির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বা জনগণের দোরগোড়ায় নেওয়ার জন্য এখনো আমরা বড় ধরনের কোনো প্রোগ্রাম করতে পারিনি৷ বলতে পারেন, এটি আমাদের এক ধরনের দুর্বলতা৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসলে এটির সঙ্গে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই জড়িত৷ চাইলেই সবসময় সবকিছু সম্ভব হয় না৷ তবে এটিকে সব ধরনের মানুষের কর্ণগোচরে নেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে৷ আপনি যদি বিভাগওয়ারী কল দেখেন, তাহলে দেখবেন, সবচেয়ে বেশি কল আসে ঢাকা বিভাগ থেকে৷ ৪৬ শতাংশ৷ আপনি যদি অন্য বিভাগের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, সিলেট বিভাগ থেকে কল এসেছে ৩ শতাংশ৷ বরিশাল বিভাগ থেকেও এসেছে ৩ শতাংশ কল৷ এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়. সকল মানুষের কাছে এই সেবা পরিচিত না৷

নোয়াখালীর ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বা অন্য কেউ কি ৯৯৯-এ ফোন করেছিলেন?

আপনি তো একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার কথা বললেন৷ আসলে আমরা প্রতিদিন ৩০ হাজারের মতো কল রিসিভ করে থাকি৷ নারীর প্রতি সহিংসতার অনেক কলই কিন্তু আমরা রিসিভ করি৷ করোনার সময়েও আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা বা গৃহনির্যাতনের প্রচুর কল রিসিভ করেছি৷ অনেক নারী আসলে এই সেবা সম্পর্কে জানেন না৷ আবার অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে আমাদের কাছে ফোন করে প্রতিকার চেয়েছেন৷ আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করেছি৷ এমনকি ধর্ষকদেরও গ্রেপ্তার করেছি৷ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় এ বছরের জানুয়ারিতে আমরা ৯৬৬টি কল রিসিভ করেছি৷ ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৯টি, মার্চে এক হাজার ১৬৪টি, এপ্রিলে ৯৩১টি, মে মাসে ৯৩৪টি, জুনে ৭৫১টি, জুলাইয়ে ৩৫০টি কল পেয়েছি৷ এই কলের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷

আপনারা কি সবসময় সবার সব ফোন অ্যাটেন্ড করতে পারেন?

না৷ অনেক সময় এমন ফোন আমাদের কাছে আসে, সেখানে সেবা দেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না৷ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা ২ কোটি ৩৯ লাখের বেশি কল রিসিভ করেছি৷ আমরা কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক কলের সেবা দিতে পারিনি৷ দিতে পেরেছি মাত্র ২১ শতাংশ, অর্থাৎ ৫০ লাখ কলের সেবা৷ ৭৯ শতাংশ কলের সেবা কিন্তু দেওয়া যায়নি৷ আমাদের নির্ধারিত সেবা হচ্ছে তিনটি৷ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স৷ আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু জরুরি সেবা কোনটি সেটা ডিফাইন করতে পারে না৷ সে যখন বিপদে পড়ে, তখন তার জন্য সেটা কিন্তু জরুরি৷ আমার জন্য হয়ত সেটা জরুরি না৷ ফলে সে তার যখনই প্রয়োজন, তখনই ফোন দিচ্ছে৷ 

আপনাদের বর্তমানে জনবল কত? এটা কি যথেষ্ট?

বর্তমানে ১০০টি ওয়ার্ক স্টেশনে সাড়ে ৪শ' জনবল বর্তমানে কাজ করছে৷ প্রথম মাত্র ১০০ জন দিয়ে এটা শুরু করেছিলাম৷ এই যে ১০০ থেকে সাড়ে ৪শ'তে আসা, সেটা কিন্তু একদিনে হয়নি৷ গত তিন বছরে হয়েছে৷ দিন দিন আমার সেবার চাহিদা বাড়ছে৷ এই চাহিদার প্রেক্ষিতেই কিন্তু আমার সেবার জনবল বাড়াতে হচ্ছে৷ আমরাও চেষ্টা করছি, চাহিদার পাশাপাশি জনবল বাড়াতে৷

এ পর্যন্ত কতজন মানুষকে সেবা দিয়েছেন আপনারা?

আমি যদি সুনির্দিষ্ট করে বলি, তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৩ জনকে আমরা সেবা দিতে পেরেছি৷

এ পর্যন্ত কত মানুষ আপনাদের কাছে সেবা চেয়েছেন?

আমরা ধরে নেব যে, যারা আমাদের কাছে কল দিয়েছেন, তারা সবাই সেবা পাওয়ার জন্যই করেছেন৷ আসলে এটি পৃথক করা কঠিন যে, আমাদের কাছে কতজন সেবা চেয়েছেন৷ আমরা যে ২ কোটি ৪০ লাখ ফোন রিসিভ করেছি, এর মধ্যে সবাই তো সেবা পাওয়ার জন্য ফোন দেননি৷

কোন ধরনের সহযোগিতা মানুষ বেশি চান?

আমরা সবচেয়ে বেশি কল পেয়েছি, ব্যাক্তি, সম্পদ বা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের মারামারি, হামলা, আক্রমণ- এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে৷ এরপর বিভিন্ন দূর্ঘটনাজনিত সমস্যার জন্য৷ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, হুমকি, মাদক, চুরি, শব্দ দূষণ, গৃহনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, জুয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যা নিয়ে মানুষ আমাদের ফোন করেন৷

আপনারা কী ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন?

আমরা যে সেবা দিয়েছি, এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ সেবাই হচ্ছে পুলিশি সেবা৷ এরপর ১২ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস এবং সর্বশেষ ১১ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা৷

কারা বেশি সহযোগিতা চান? নারী, না পুরুষ?

এ পর্যন্ত আমরা যে কল পেয়েছি, তার মধ্যে শতকরা ৮১ ভাগ পুরুষ আর ১৯ ভাগ নারী৷

অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করলে কি যথেষ্ট সাড়া পান?

ধরুন, একজন মিরপুর থেকে ফোন করে সহযোগিতা চাইলেন৷ আমি কনফারেন্স কলে হয়তো মিরপুর থানায় ধরলাম৷ তারা যখন ফোর্স পাঠাতে যাবে, তখন দেখা গেল তাদের যে টহল ভেহিকেল আছে সেটা অন্য জায়গায়৷ ফলে আসলে আমরা যে সেবাটা দিতে চাই, বাস্তব পরিস্থিতির কারণে সেটার তারতম্য ঘটে৷ কোথাও হয়ত দ্রুতই দিতে পারছি, আবার কোথাও হয়ত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লেগে যাচ্ছে৷ ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি কল পাই, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি৷ এখানে সেবা দিতে গিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷

যেসব কর্মকর্তা ঠিকমতো কাজটি করেন না, তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়? এখন পর্যন্ত কি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

অবশ্যই নিয়েছি৷ আমাদের কল পাওয়ার পর রেসপন্স করেনি বা ওই নাগরিককে যে সময়ের মধ্যে সেবাটা দেওয়া দরকার, সেটি যথাযথ দিতে পারেননি, এই কারণে থানার অফিসার ইনচার্জ প্রত্যাহার হয়েছেন৷ এমন উদাহরণ একটি না, একাধিক রয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ