1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণ: আমাদের দায়

তায়েব মিল্লাত হোসেন
১৫ জানুয়ারি ২০২১

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে রাষ্ট্রের ব্যর্থতায়৷ অপরাধের সামাজিক প্রতিরোধে ঘাটতির দায় সমাজের৷ আর ব্যক্তির দোষ অনেকটাই পরিবারের৷ ধর্ষণের দায়ও নিতে হবে তাই এ তিন পক্ষকেই৷

Bangladesch Aktivistinnen gegen Vergewaltigung in Dhaka
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিশ শতকের একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে ছিল অনেক ধর্ষকও৷ তাদের শিকার হয় অন্তত দুই লাখ ৩০ হাজার নারী৷ নিপীড়িত এই নারীদের সম্মান জানাতে গিয়ে এদেশের বক্তার দল প্রায়ই ‘সম্ভ্রমহানি' শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ এখানে ‘সম্ভ্রমহানি'- আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ধর্ষণের লজ্জার ভাগ নিতে হয় ধর্ষণের শিকার নারীকেই৷ অথচ অন্য যেকোনো অপরাধের বেলায় দোষ বলুন, লজ্জা বলুন- সবই অপরাধীর৷ এর জন্যেই ধর্ষণের ঘটনায় শুধু ভূক্তভোগীর নাম-ছবি-পরিচয় প্রকাশ থেকে দূরে থাকে গণমাধ্যম৷ যেদিন এমন এক সমাজ হবে, যেখানে ধর্ষণ একটি অপরাধ, তার দায় শুধুই অপরাধীর সেদিন সামাজিক লজ্জার হাত থেকে মুক্তি মিলবে অনাচারের শিকার নারীদের৷ ‘সম্ভ্রমহানি' নামের শব্দের অপ্রয়োগ বন্ধে তাই এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সমাজকে৷ এই কাজে নেতৃত্ব দিতে পারে দেশের সুশীল সমাজ৷ কিন্তু এই কালে এসে আপাতত নেই কোনো ঈশ্চরচন্দ্র বিদ্যাসাগর; যিনি নিজের পুত্রকে বিধবার সঙ্গে বিয়ে দিবেন- এমন উপমা তৈরির পর বিধবা বিবাহ প্রচলনের আন্দোলনে সাফল্য নিয়ে আসবেন৷ এমন সমাজসংস্কারক না থাকার দায় কি স্বীকার করবে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নাগরিক সমাজ?

দুই.

যাপিত জীবনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে৷ বাড়ছে কর্মব্যস্ততা৷ সন্তানকে সময় দেয়ার মতো সময় আজকাল অনেকের হাতেই নেই৷ তাই সন্তানকে ‘কোয়ালিট টাইম' বা ‘গুণগত সময়' দিন- এমন বক্তব্য বেশি বেশি দিতে হচ্ছে মানসিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের৷ তবু এ নিয়ে মনযোগ কম অনেক অভিভাবকেরই৷ দায় এড়াতে শৈশব বা কৈশোরে সন্তানের হাতে তারা তুলে দিচ্ছেন ল্যাপটপ, মোবাইলসহ প্রযুক্তির নানা উপকরণ৷ যা হয়তো তার পাওয়ার কথা ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্ক হওয়ার পরে৷

অন্যদিকে সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মেশে, কী করে- এসব খবরই রাখে না অনেক মাতাপিতা৷ কখন, কোথায়, কী করতে হবে, কোন কোন বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে- এসব বিষয়ে পারিবারিক শিক্ষারও বালাই নেই অনেক পরিবারে৷ তাই আচমকাই কিশোর অপরাধীর খাতায় নাম চলে যায় কারো কারো সন্তানের৷ কেউবা ধর্ষক হিসেবে হয় কারাবন্দী৷ তখন অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হয় অপরাধীর অভিভাবকদের দিকেও৷ সন্তানকে মানুষ করতে না পারার অভিযোগ, অস্বীকার করার কোনো পথ থাকে না সেই শেষবেলায়৷

তিন.

কিশোর-যুবারা কেমন চুল রাখবে, কী পোশাক পরবে, কখন আড্ডা দিবে, কখন খেলবে- এগুলো দেখভাল করার কথা পরিবারের৷ হালের বাংলাদেশে কোনো কোনো এলাকায় এসব ঠিক করে দিচ্ছে পুলিশ৷ কিন্তু কিশোর অপরাধ বিষয়ে সম্প্রতি সতর্কবাণী দিতে গিয়ে পুলিশ-প্রধান আইজিপি বেনজীর আহমেদ যে ভাষ্য দিয়েছেন, তার মানে দাঁড়ায়- পিতামাতারা সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তার দায়দায়িত্বও তাদের নিতে হবে৷ ‘দায়দায়িত্ব নিতে না পারেন, তাহলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন?'- এই প্রশ্ন বাংলাদেশের আইজিপির৷

অপরাধী সে যে বয়সেরই হোক, তাকে পাকড়াও করার দায়িত্ব পুলিশের৷ বিচার করবেন আদালত৷ তাই শুধুই মাতাপিতার দোষ খুঁজে বেড়ালেই কর্তব্যকর্ম শেষ হয়ে যায় না৷ কেননা অপরাধ হয়ে গেলে দায়িত্ব চলে আসে নিরাপত্তাপ্রশাসন ও বিচারালয়ের হাতে৷ তাই ধর্ষকের মতো অপরাধী ধরার বিষয়ে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে পুলিশকে৷ করতে হবে যথাযথ তদন্ত৷ আর অপরাধ চূড়ান্ত করবেন আদালত৷ ধর্ষকের সাজা কেমন হবে- সেটার এখতিয়ারও তাদের৷ কিন্তু অপরাধীকে যদি ধরাই না যায়; কিংবা তদন্ত ও বিচারকাজে যদি বছরের পর বছর চলে যায়, তবে তো ভুক্তভোগীর ভোগান্তির মাত্রা লম্বাই হতে থাকে৷ পুলিশ ও আদালতের বেলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে রাষ্ট্রকে৷ কারণ বর্তমান ব্যবস্থায় সবকিছু সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকারে৷ ধর্ষণের দায়ও তাই কোনোক্রমেই এড়াতে পারে না সে৷ কারণ ধর্ষকও তারই নাগরিক৷ তাকে সুনাগরিক করতে না পারার ব্যর্থতা পরিবার ও সমাজের শুধু নয়, রাষ্ট্রেরও বটে৷

তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ