1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণ কেন ঠেকানো যাচ্ছে না?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা৷ একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা৷ আর এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওয়তায় তেমন আনা যাচ্ছেনা বলা চলে৷ এর কারণ, অনেকেরই আছে ক্ষমতার যোগ, তাই তারা অপ্রতিরোধ্য৷

ধর্ষণ
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৯ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়৷ দুই জন ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন৷ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) শনিবার তাদের ত্রৈমাসিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷

যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৭ জন নারী৷ প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের হত্যা এবং নির্যাতনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বলে তুলে ধরা হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে ৪২২ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে৷ এর মধ্যে ৭১ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ ২৬ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে৷ নিখোঁজের পর দুই জন ও বিভিন্ন সময়ে ২০ জন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এছাড়া রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ৭ জন শিশুর৷

এই সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০৭ জন নারী৷ এর মধ্যে ৭৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন৷ এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮ জন নারী৷

‘রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া ধর্ষণ কমবে না’

This browser does not support the audio element.

যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৫ জন নারী৷ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন৷ নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন৷ এছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৯ নারীকে৷ এই সময়ে ১১ গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এর মধ্যে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের৷ এসিডদগ্ধ হয়েছেন ৩ জন৷ সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ জন৷

আসকের এর আগের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে ৮১৮ নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছেন৷ ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ নারী৷ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১১ জন৷

মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় বিচার না পেয়ে গত বছরের ২৯ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুর রেল স্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার করেন হযরত আলী ও তাঁর মেয়ে আয়েশা আক্তার৷

২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে পরিবহন শ্রমিকরা চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে শিক্ষার্থী রূপাকে৷ তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়৷ ১৭ জুলাই বগুড়ায় এক শিক্ষার্থীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার৷

২০১৬ সালে ৭২৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ এর মধ্যে ধর্ষণের পর ৩৭ জনকে হত্যা করা হয় আত্মহত্যা করেন ৮ জন৷ সালিস ও ফতোয়ার মাধ্যমে মোট ১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হন৷ এর মধ্যে গ্রামছাড়া, সমাজচ্যুত বা একঘরে করা, মাথার চুল কেটে দেয়াসহ শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে৷

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২৩৯ জন নারী, মামলা হয়েছে ৯৫টি৷ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৯৪ জন, যার মধ্যে থানায় মামলা হয়েছে ১৮৭টি৷ নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় মোট ৬৪ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৩২টি ঘটনায় মামলা হয়েছে৷ অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হন ৩৪ নারী, এ ঘটনায় একজন মারা যান৷

আসকের এবারের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে, হবিগঞ্জের কিশোরী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা, মারমা তরুণীদের নির্যাতনের ঘটনা ও বাধা দিতে গিয়ে চাকমা রানি ইয়েন ইয়েনের হেনস্তার হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়৷

‘বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য’

This browser does not support the audio element.

আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষনের ঘটনা বাড়ছে৷ ধর্ষণের সঙ্গে হত্যা ও নিমর্মতাও বাড়ছে৷ বলা হচ্ছে, ধর্ষণের যারা শিকার হন তাদের শতকরা ৫০ ভাগ শিশু৷ আবার এই শিশুদের অর্ধেকের বয়স ১২ বছরের নিচে৷

মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হবিগঞ্জের বিউটি আক্তারের পরিবার ধর্ষণের অভিযোগ করার পরও প্রতিকার পাননি৷ শেষ পর্যন্ত বিউটিকে আবার তুলে নিয়ে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হলো৷ তনুর মামলায় কয়েকদিনের মধ্যে চার্জশিট দেয় হবে বলে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ঢাকায় যৌন হয়রানীর ঘটনায় ( ৭ মার্চ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার কথা বললেন কিন্তু এরপর আর কোনো খবর নেই৷ আসামি রাজনৈতিক বা অন্য কোনোভাবে প্রভাবশালী হলে তাকে আর আইনের আওতায় আনা যায়না৷''

তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া এই ধর্ষণ , নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না৷ আমরা বার বার বলেছি একটি স্বাধীন ও নিপেক্ষ মনিটরিং কমিটি করার জন্য৷ কিন্তু তা করা হচ্ছেনা৷ আর যেসব ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তার ২০ ভাগের বেশি থানায় মামলায় হয় না৷ শতকরা এক ভাগের বেশি শান্তি হয়না৷''

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান মনে করেন, ‘‘বিচারহীনতা এবং ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে৷ বিচার না পাওয়ায় এখন অনেকেই আর মামলা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না৷ আর ভয়ের কারণেও অনেকে মামলা করতে পারছেন না৷ সাহস পাচ্ছেন না৷ ক্ষমতা আর বিত্তের কাছে বিচার প্রার্থীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন৷ আর যারা অপরাধী, তারাও জানে যে তাদের কিছু হবেনা৷ তাই তারাও নিবৃত্ত হয় না৷''

তিনি বলেন, ‘‘এরসঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ঘৃণার সংস্কৃতি৷ এমনভাবে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হয় যে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নেন৷ বিচার চান না৷''

ধর্ষণ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়? লিখুন নিচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ