গর্ভপাত নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে স্কাই টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দোদোনির বিশপ ক্রিসওসটোমোস বলেন, ‘‘নিজে থেকে না চাইলে কোনো নারীকে কখনও ধর্ষণ করা যায় না৷'' তার কথায়, ‘‘একজন নারী ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন না৷ সন্তান ধারণের জন্য নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন৷'' ধর্ষণের ফলে নারী অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন না তিনি, এ কথাও বলেন ওই বিশপ।
এই মন্তব্য ঘিরে নানা মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ রাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক, শিক্ষা ও ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী নিকি কেরামেউস ধর্মগুরুর এই মন্তব্যকে ‘অকল্পনীয় ও নিন্দনীয়' বলে উল্লেখ করেছেন৷
ইউরোপ কতটা অসাম্প্রদায়িক? কোন দিকে বেশি ঝুঁকছে ইউরোপের মানুষ? ধর্ম নিয়ে রাষ্ট্রের অবস্থান কী? সাম্প্রদায়িকতা বা সম্প্রীতি কতটা? ছবিঘরে থাকছে এমন সব প্রশ্নের উত্তর৷
ছবি: René Arnold/House of Oneপিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের এক জরিপ অনুযায়ী ইউরোপে সাড়ে ৭৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী৷ তারপর থাকা সবচেয়ে বেশি জনগোষ্ঠী ১৮ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো ধর্ম নেই৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা মুসলিমরা প্রায় ছয় শতাংশ। এছাড়াও ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের জনগোষ্ঠী এক শতাংশের কম করে৷
ছবি: Robert Harding/picture alliance পিউ রিসার্চের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশেই অর্ধেকের বেশি মানুষ ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন৷ তবে বেছে নিতে হলে কোনটি বেছে নেবেন- এমন প্রশ্নে জার্মানির ৭১ শতাংশ ও ফ্রান্সের ৬৪ শতাংশ খ্রিস্ট ধর্মের কথা বলেছেন৷ আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে খিস্টান ৬৫ শতাংশ, ‘ধর্মহীন’ ২৩ দশমিক তিন শতাংশ ও মুসলিমদের হার হবে ১০ দশমিক দুই শতাংশ৷ বাকিদের হার অনেকটা অপরিবর্তিতই থাকবে৷
ছবি: Diogo Baptista/ZUMAPRESS/picture allianceপিউ রিসার্চের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী,পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষ সরকারি নীতি থেকে ধর্মকে দূরে রাখার পক্ষপাতী৷ সুইডেনে ৯০ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৭২ শতাংশ মানুষই এমনটা মনে করেন৷ অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের ৪৫ ভাগ আর যুক্তরাজ্যের ৩৮ ভাগ মনে করেন সরকারের নীতিতে ধর্মকে সমর্থন দেয়া উচিত৷ ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশে অসাম্প্রদায়িকতা এবং নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে৷
ছবি: Sebastian Gollnow/dpa/picture allianceপিউ রিসার্চের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ধর্ম পালনে সরকারের হয়রানিতে মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকার পরই রয়েছে ইউরোপ৷ এই অঞ্চলে ৯৮ শতাংশ দেশে ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর এবং ৯১ শতাংশ দেশে উপাসনায় হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে৷ বিভিন্ন আইনের কারণে ধর্মবিধি পালনে মানুষ সমস্যায় পড়েন৷ যেমন, স্লোভেনিয়ায় অচেতন ছাড়া প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করায় মুসলিম ও ইহুদিরদের হালাল ও কোশার বিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Mesut Zeyrek/AA/picture allianceঅনেক দেশেই জনসমক্ষে বা কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাকে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ যেমন, অস্ট্রিয়ায় জনসমক্ষে মুখমণ্ডল আবৃত রাখা এবং স্কুলে ১০ বছরের কম বয়সিদের স্কার্ফ পরা নিষেধ৷ ফ্রান্সে জনসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্কার্ফ, টুপি, পাগড়ি বা ক্রস পরিধান নিষিদ্ধ৷ ২০১৫ সালে জার্মানির আদালত বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করলেও তা বাস্তবায়ন রাজ্যগুলোর উপর ছেড়ে দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Johnson২০১৯ সালে ইউরোপে ১৭টি দেশে ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে সরকার, আগের বছর এমন দেশের সংখ্যা ছিল ১৯৷ এক্ষেত্রে সবার উপরে ছিল রাশিয়া৷ গত বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ধর্মীয় উগ্রবাদের অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে ৪৩টি মসজিদ বন্ধ করেছে ফ্রান্স৷ কোভিড-১৯-এর বিধিনিষেধের কারণে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ait Adjedjou Karim/Avenir Pictures/ABACA/dpa/picture allianceসাম্প্রতিক বছরে ইউরোপের দেশে দেশে উগ্রবাদের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে৷ ২০২০ সালে ফ্রান্সে জঙ্গিবাদ সমর্থক এক মুসলিম তরুণ এক কলেজ শিক্ষককে হত্যা করেন৷ তার আগে টিউনিসিয়ার এক অভিবাসী চার্চের ভিতরে তিন খ্রিস্টানকে হত্যা করেন৷ ২০১৯ সালে জার্মানিতে সিনাগগে হামলায় মারা যান দুইজন৷ সম্প্রতি সুইডেনে উগ্র ডানপন্থি দলের নেতা রাসমুস পালুদান সুইডেনে পবিত্র কোরানের কপি পোড়ানোর ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ হন দেশটির মুসলিমরা৷
ছবি: Alain Jocard/AFP/Getty Imagesউগ্রতা আর সাম্প্রদায়িকতার বাইরে ইউরোপে সম্প্রীতির অনেক উদাহরণ আছে৷ ইহুদি এবং মুসলমানদের একত্রিত করতে জার্মানির মারবুর্গ শহরে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ৷ বার্লিনে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের এক ছাদের নীচে প্রার্থনার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ‘হাউস অব ওয়ান’৷ সম্প্রতি জার্মানির বুন্ডেসলিগার ম্যাচ চলার সময় এক ফুটবলারের ইফতারের জন্য কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রাখা হয় - যা আগে কখনও হয়নি৷
ছবি: Frank Senftleben/epd-bild নিকির দাবি, ‘‘(এটি) নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় সমাজকে বিক্ষুব্ধ করে তুলবে৷ গির্জার মনোভাবের সঙ্গে এ মন্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ৷ নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি গির্জার সহানুভূতি রয়েছে৷’’
যদিও গ্রিক সংবিধান অনুসারে রক্ষণশীল বিশ্বাসকে রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রিসের গির্জার৷ কট্টর, রক্ষণশীল পন্থাতেই তারা বিশ্বাসী৷
সমকামী সম্পর্ক, বিবাহপূর্ব যৌনতা এবং গর্ভপাতেরও বিরোধিতা করে গ্রিসের রক্ষণশীল গির্জা৷ করোনা মহামারি চলাকালীন সেবামূলক কাজেও বাধা দিয়েছিল তারা৷ গর্ভপাতকে ‘অপরাধ' বলে মনে করে তারা৷
তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘নিম্ন জন্মহারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি৷ তাই গর্ভপাত বরদাস্ত করা যায় না৷’’ ওই ধর্মগুরুর দাবি, ‘‘গর্ভপাত একটি অপরাধ৷’’
আরকেসি/এসিবি (এএফপি)