ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ পুরুষ মনে করেন রাস্তা-ঘাটে চলাফেরার সময় নারীরা মিনিস্কার্ট পরিধান না করলে ধর্ষণের ঘটনা অনেক কমে যাবে৷ তাই নারী অধিকার কর্মীরা পরিকল্পনা করছেন যে, পুরুষরা এর প্রতিবাদ হিসেবে মিনিস্কার্ট পরবেন৷
বিজ্ঞাপন
রয়টার্সের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় পুরুষ সঙ্গীদের দ্বারা৷ ন্যাশনাল কমিশন অফ ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যান বলছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়েছে৷ প্রতিবেদন বলছে, ২৫ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে ২০১৫ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার নারীর উপর পারিবারিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ৫ হাজার৷ কমিশন বলছে, বেশিরভাগ অভিযোগ করা হয় ধর্মীয় আদালতে৷ সরাসরি আদালতে গিয়ে রিপোর্ট করতে ভয় পান বেশিরভাগ নারী৷
জুলাই মাসে অনলাইনে একটি জরিপ করা হয়েছিল৷ সেখানে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয় না৷ মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ সামাজিক বাধা-বিপত্তি এবং কুসংস্কারের কারণে থানা-পুলিশ করতে চায় না বেশিরভাগ নারী৷ নারী অধিকার কর্মী সায়ালদি সাহুদে জানালেন, এ ধরনের ঘটনা রিপোর্ট করা কতটা জরুরি সেটা নারীদের বোঝান তারা৷
যেসব জনপ্রিয় তারকারা যৌন হয়রানির শিকার
শৈশবে যৌন নির্যাতন-এমন একটি ঘটনা যা নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটির মনে সারাজীবনে প্রভাব ফেলে৷ অনেক তারকার জীবনে এ ঘটনা ঘটলেও অল্প কয়েকজনরই তাদের অভিজ্ঞতা জানানোর সাহস পেয়েছেন৷ এমনই কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো এখানে৷
‘বে ওয়াচ’ আর ‘প্লেবয়’ পত্রিকার অতি জনপ্রিয় নাম পামেলা অ্যান্ডারসন৷ ১০ বছর বয়সে তাঁর বেবি সিটার পামেলাকে যৌন নির্যাতন করে৷ এরপর মাত্র ১২ বছর বয়সে পামেলার বান্ধবীর এক বড় ভাই-ও তাঁকে ধর্ষণ করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেরিলিন মনরো
হলিউড অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর শৈশব কেটেছে একটি এতিমখানায়৷ আর সেখানেই বহুবার যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে৷
ছবি: picture alliance/Heritage Images
লেডি গাগা
জনপ্রিয় পপ সংগীত শিল্পী লেডি গাগা জানিয়েছেন, ১৯ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি৷ এই ঘটনাকে নিজের গান ‘সোয়াইন’-এ তুলে ধরেছেন তিনি৷ তার চেয়ে ২০ বছরের বড় সেই ধর্ষণকারী একজন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, যাকে পরবর্তীতে দেখলে গাগা একেবারে স্তব্ধ হয়ে যেতেন৷ অনেক থেরাপি নেয়ার পর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পান লেডি গাগা৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
অনুরাগ কাশ্যপ
না কেবল নারী তারকারাই নন, পুরুষ তারকারাও ছেলেবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এমনই একজন বলিউডের বিখ্যাত চিত্র-পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ৷ ১১ বছর ধরে টানা তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চলেছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি৷ তবে সেই দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে অচিরেই সামনে এগিয়ে গেছেন অনুরাগ৷
ছবি: AP
ম্যাডোনা
বিশ্বখ্যাত পপ শিল্পী ম্যাডোনা ১৯ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন৷ প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্কে এসে তিনি যে অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া নিয়েছিলেন, সেখানেই এক ব্যক্তি তাংর মুখের সামনে ছুরি ধরে তাঁকে ধর্ষণ করে৷ সেই দুঃসহ স্মৃ্তি আজও ভুলতে পারেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অপরাহ উইনফ্রে
টিভি সেলিব্রেটি অপরাহ উইনফ্রে মাত্র ন’বছর বয়সে পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিলেন৷ উইনফ্রেকে তাঁর ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত টানা ধর্ষণ করেছে ঐ ব্যক্তি৷
ছবি: AP
সোফিয়া হায়াত
অভিনেত্রী সোফিয়া হায়াতের শৈশবও খুব একটা সুখকর ছিল না৷ তিনিও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন সেই শৈশবে৷ মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর এক চাচা তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
আনুষ্কা শংকর
প্রখ্যাত সেতার বাদক রবি শংকরের কন্যা আনুষ্কা শংকর সেতার বাজিয়ে আজ নিজেও বিশ্বনন্দিত৷ পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দ্বারা সেই অনুষ্কাও যৌন হয়রানির শিকার হন৷ কিন্তু পরিবারের অতি বিশ্বস্ত হওয়ায় সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিবারকে কিছু জানাতে পারেননি৷ এতে তাঁর শৈশবের দিনগুলো ছিল ভীষণ পীড়াদায়ক৷ এছাড়া তারকা হওয়ার কারণে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বই তাঁর স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করেছে বলে জানিয়েছেন আনুষ্কা৷
কাল্কি কোচেলিন
এনডিটিভি-র এক অনুষ্ঠানে অনেক তারকা যখন নিজেদের ছোটবেলার মধুর স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন, কাল্কি কোচেলিন তখন তুলে ধরেছিলেন নিজের জীবনের এক কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা৷ ছোটবেলায় যৌন হয়রানির ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাঁকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় বলে জানিয়েছিলেন বলিউডের এই অভিনেত্রী৷ নারী অধিকার নিয়ে সর্বদা সোচ্চার কাল্কির অবশ্য স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে কোনোদিনই কোনো সংকোচ ছিল না, আজও নেই৷
ছবি: AP
9 ছবি1 | 9
এই গ্রুপটি নারী নির্যাতন রোধে পুরুষদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে৷ সম্প্রতি এক সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, নারীরা পাবলিক প্লেসে মিনিস্কার্ট না পড়লে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা অনেক কমে যাবে৷ ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীদের পোশাক এবং তারা নিজেদের কীভাবে উপস্থাপন করছে ও তাদের আচরণ প্রভাব রাখে বলে ধারণা তার৷ এর প্রতিবাদ স্বরূপ সায়ালদি ও তার দল ঠিক করেছেন মিনিস্কার্টই যদি ধর্ষণের কারণ হয়, তবে পুরুষরা মিনিস্কার্ট পরবেন৷
২০১৩ সালে জাতিসংঘ ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার ছয়টি দেশে একটি জরিপ চালিয়েছে৷ ১০ হাজার পুরুষের উপর করা এ জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি পুরুষ তার নারী সঙ্গীকে শারীরিক বা যৌন হয়রানি করেছে৷ আর এদের মধ্যে ২৫ ভাগ কোন নারী বা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে৷ ইন্দোনেশিয়ার সমাজে পুরুষ যদি বদরাগী এবং মেজাজি হয় তাহলে সমাজে তাদের খাতির করা হয় পুরুষ সিংহ বলে৷ ইন্দোনেশিয়ার ৮৫ ভাগ নারী তার পুরুষ সঙ্গীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন৷
পুরুষদের এই ধরনের নারী নির্যাতনবিরোধী প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ৷ তবে কেবল ইন্দোনেশিয়া নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন পুরুষরা৷ কলম্বিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পুরুষরা মঞ্চ নাটক এবং কনসার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷
মিনিস্কার্টের ৫০ বছর
নারীদের ছোট্ট একটি পরিধেয়: একাধারে তারুণ্য ও নারীবাদের প্রতীক; অপরদিকে অশালীন ও অশ্লীল বলে রক্ষণশীলদের চক্ষুশূল৷ এক টুকরো বস্ত্রই শুধু নয়, বিংশ শতাব্দীর সামজ ও সংস্কৃতির একটি মাইল ফলকও বটে৷ এরই নাম মিনি বা মিনিস্কার্ট৷
ছবি: Getty Images
চোখে পড়ার জন্যই যার জন্ম
মিনিস্কার্ট এমনই এক বস্তু, যা ৫০ বছর আগেও মানুষের নজর কেড়েছে এবং আজও কাড়ে৷ নন্দনতত্ত্বে নারীদেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা আর যৌন আবেদনের মধ্যে যতোটুকু ফারাক, মিনির ক্ষেত্রেও ঠিক ততটা৷ দেহ একই থাকছে, বাড়ছে কমছে শুধু হেমলাইন৷
ছবি: imago/McPHOTO
‘উদ্ধৃতি চিহ্ন’
মিনির মজাই হলো, তা যা অবারিত রাখে, অর্থাৎ সুন্দর, সুডৌল পদযুগল৷ আবার তা অবলীলাক্রমে এমন একটা নান্দনিক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সমালোচনা করার মতো আর কিছু থাকে না – নাকি থাকে?
ছবি: Fotolia/Franz Pfluegl
‘টুইগি’
খড়কুটোর মতো পাতলা হাত-পা-ওয়ালা এই মডেলটিকে আজও লন্ডনের সুইঙ্গিং সিক্সটিজ-এর প্রতীক বলে মনে করা হয়৷ আসল নাম লেসলি হর্নবি৷ পরবর্তী জীবনে অভিনয়ও করেছেন৷ আজও তাঁর ছবি দেখলে মনে হয়, টুইগি রক্তমাংসের মানুষ নন, তিনি একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্টের থেকেও বড় – তিনি জীবন সম্পর্কে একটি মন্তব্য৷
ছবি: Getty Images
মেরি কোয়ান্ট
লন্ডনের চেলসিতে ‘বাজার’ নামধারী একটি ফ্যাশন বিপণী চালাতেন মেরি কোয়ান্ট৷ পঞ্চাশের দশকের শেষেই আরো ছোট স্কার্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, যা পর্যবসিত হয় ১৯৬৪ সালে তাঁর যুগান্তকারী সৃষ্টিতে: মিনিস্কার্ট৷ এই কাহিনির প্রামাণ্যতা নিয়ে হালে দ্বিধা দেখা দিয়েছে৷ কিংবদন্তী বলে, মেরি নাকি তাঁর প্রিয় মোটরগাড়ি, অস্টিন মিনির নামে খাটো স্কার্টটির নামকরণ করেন৷ এখানে মডেলদের সঙ্গে মেরি কোয়ান্ট (ডানদিকে)৷
ছবি: Express/Express/Getty Images
হাই আর্ট
মিনিস্কার্ট ছিল স্ট্রিট ফ্যাশন, ষাটের দশকে লন্ডনের মেয়েরা খাটো স্কার্ট পরতে শুরু করে: মেরি কোয়ান্ট নিজেই এ কথা বলেছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যেই সেই রাস্তার ফ্যাশন ‘ওৎ কুতুর’, অর্থাৎ হাই ফ্যাশনে পৌঁছে যায়৷ শুধু তাই নয়, স্বয়ং ফ্যাশন গুরু ইভ স্যাঁ লরাঁ তাঁর সুবিখ্যাত মন্ড্রিয়ান ড্রেসটিকে মিনি ড্রেস-ই করেছেন৷ পিয়েট মন্ড্রিয়ান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের এক ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী৷
ছবি: Getty Images
গ্লোরিয়া স্টাইনেম
নারীবাদের প্রথম পর্বে যাঁরা নারীদের হয়ে কলম ধরেছিলেন এবং সোচ্চার হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে পড়েন জার্মেইন গ্রিয়ার এবং গ্লোরিয়া স্টাইনেম৷ এঁরা কিন্তু ষাটের দশকে মিনিস্কার্টকে নারীমুক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করতেন এবং উভয়ে মিনিস্কার্টও পরেছেন৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
শাকিরা
কলম্বিয়ার এই গায়িকা বিশ্বজয় করেছেন গান গেয়ে৷ মঞ্চে তিনি যখন তাঁর শো দেন, তখন পঞ্চাশ বছরের পুরনো ফ্যাশান স্টেটমেন্ট মিনিস্কার্টকে বাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷
ছবি: Getty Images
7 ছবি1 | 7
ইন্দোনেশিয়ার সমস্যা হলো, নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া হয় সমাজে৷ এটা কোনো প্রভাব ফেলে না তাদের স্বাভাবিক জীবনে৷ সায়ালদির অধিকার গ্রুপটির নাম ‘মেনস অ্যালিয়ান্স', যেখানে অনেক তরুণরাও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন৷ এদেরই একজন ২৪ বছরের ফজর জাকরি বললেন, ‘‘একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতেও যদি পরিবর্তন আনা যায়, তাহলেই অনেক বড় সাফল্য আমার জন্য৷''
ইন্দোনেশিয়ায় শিশু যৌন নির্যাতনকারীদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করা এবং ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷