সম্প্রতি এ রকমই রায় দিয়েছে ভারতের দুটি উচ্চ-আদালত৷নারীর আত্মসম্মানকে বিকিয়ে দেবার বিনিময়ে এটা বিচারের নামে প্রহসন নয় কি? বলা বাহুল্য, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গেলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়কে সরাসরি খারিজ করে দেয়৷
বিজ্ঞাপন
ধর্ষণ মামলায় ভারতের মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের হাইকোর্ট নিজেদের রায়ে সালিশির ওপর জোর দিয়ে ধর্ষক ও ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে মিটমাট করে নেবার কথা বলেছেন৷ যেমন ধর্ষিতাকে যদি ধর্ষক বিয়ে করে বা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে ধর্ষকের শাস্তি অনেক লঘু করে দেয়া অন্যায় নয়!
ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার আদেশ দিয়েছেল তামিলনাড়ু রাজ্যের মহিলা আদালত৷ কিন্তু সম্প্রতি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি ডি. দেবদাস সেই ধর্ষককে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন, যাতে ধর্ষক এবং ধর্ষিতা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে থাকতে পারে৷ বিচারপতি জানান, সাত বছর আগে ঐ ব্যক্তি ১৫ বছরের একটি কিশোরীকে ধর্ষণ করে৷ আর সেই বলাত্কারের ফলেই মেয়েটি গর্ভবতী হন এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন৷ বর্তমানে ২২ বছরের ঐ ধর্ষিতা তাঁর কন্যাসন্তানকে নিয়ে মায়ের কাছে থাকেন৷ কয়েক মাস আগে, অপরাধী মাদ্রাজ হাইকোর্টে আপিল করলে হাইকোর্ট তাকে জামিনে মুক্তি দেয়৷ উদ্দেশ্য, ধর্ষিতা মেয়েটিকে বিয়ে করে অপরাধীকে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দেয়া৷ জেলে থাকলে অপরাধী সেই সুযোগ পাবে না৷ বিচারপতির মতে, বহু বড় বড় মামলা বা বিতর্কের সমাধান করা সম্ভব হয়েছে মিটমাট করে বা সমঝোতার মাধ্যমে৷ এক্ষেত্রে কুমারী মায়ের জারজ সন্তান তাঁর পিতৃত্বের পরিচয় পাবে৷ বিচারপতির কথায়, ‘‘নিষ্পাপ শিশুটির তো কোনো দোষ নেই৷'' উল্লেখ্য, এর আগে অনুরূপ একটি ধর্ষণের মামলায় একই রায় দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের হাইকোর্ট৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
এ ধরণের রায়ে নারী সংগঠনগুলি তথা গোটা সমাজ স্তম্ভিত, বিস্মিত সুপ্রিম কোর্টও৷ বিতর্কিত এই রায় উল্টে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টগুলোর মধ্যে যেভাবে ধর্ষণের মামলাকে লঘু করে দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার কঠোর সমালোচনা করে৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, বিয়ে করে নেয়া বা মিটমাট করে নেয়া সাজা কমানোর ভিত্তি হতে পারে না৷ এক্ষেত্রে নরম মনোভাব নিলে সেটা হবে ধর্ষিতা, তথা সমাজের প্রতি চরম অবিচার৷ এরসঙ্গে নারীর মান-সম্মানের প্রশ্ন জড়িত৷ তাঁর কথায়, ‘‘নারীর দেহ ও মনের শুচিতা বিনিময়যোগ্য পণ্য হতে পারে না৷'' তাই অন্য ক্ষেত্রে মিটমাটের সুযোগ থাকলেও, খুন বা ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়৷ কাজেই সুপ্রিম কোর্টের মতে, ধর্ষণের মামলার সালিশি বা মিটমাট করার আইনি বৈধতা নেই৷ এ কারণেই ২০১৩ সালে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা সংশোধন করা হয়৷ আনন্দের কথা, সুপ্রিম কোর্টের ঐ রায়ের পর মাদ্রাজ হাইকোর্টও তার বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি ফিরিয়ে নিয়েছে৷
মাদ্রাজ হাইকোর্টের মনোভাব আপাত সদিচ্ছামূলক হলেও এই রায়ের সামাজিক অভিঘাত গভীর এবং সুদূরপ্রসারী৷ দেশের অন্যান্য আদালতে চলতে থাকা ধর্ষণ মামলায় তা প্রভাব ফেলতে পারে৷ এ বিষয়ে মৌলিক প্রশ্ন তুলেছে নারী সংগঠনগুলি৷ তাদের মতে, নারীর আত্মমর্যাদা বা তাঁর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিকিয়ে দেয়া ছাড়াও, এতে ধর্ষকদের কি আশকারা দেয়া হচ্ছে না? অর্থাৎ এক কথায়, বলাত্কারের পর ধর্ষিতা মেয়েটিকে বিয়ে করে নিলেই সব ঝামেলা কি চুকে যায়? এর থেকে নারীসত্তার অপমান আর কী হতে পারে? বলাত্কারের পর মেয়েটিকে বিয়ে করার ইচ্ছার মধ্যেই যে একটা বদমায়েশি লুকিয়ে নেই, কে বলতে পারে? মেয়েটির পরিবারকে টাকা-পয়সা দিয়ে রাজি করানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করার মতো একটা ধান্দাবাজি যে কাজ করবে না, কে বলতে পারে? সবথেকে বড় কথা, যে ব্যক্তির দ্বারা একটি নাবালিকা বা সাবালিকা মেয়ে দৈহিক বা মানসিকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন, তাঁর ধ্বস্ত দেহমনে যে ভয় বা ঘৃণা বাসা বেধেঁছে, স্বামী হবার পর তার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালবাসার বদলে সেই ঘৃণা ও ভয় সারাজীবন কি তাঁকে কুরে কুরে খাবে না?
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
পাশাপাশি সমাজের একাংশ আবার এটাও মনে করে যে, মেয়েটি যদি খুব গরিব ঘরের অশিক্ষিত মেয়ে হন, তাহলে ধর্ষণের ফলে যে সামাজিক কলঙ্কের কাদা তাঁর গায়ে লেপ্টে গেল, তার জন্য ভবিষ্যতে অন্য কেউ তাঁকে বিয়ে করবে না৷ নিজের এবং অবৈধ সন্তানের জীবন আর্থ-সামাজিক দিক থেকে যে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে না, কে বলতে পারে? আত্মহত্যাই হয়ত হবে তাঁর শেষ পরিণতি৷ যুক্তির দিক থেকে হয়ত এটা গ্রাহ্য নাও হতে পারে, কিন্তু জীবনের বাস্তবতা অনেক সময় তা মেনে চলে না৷ কাজেই ধর্ষক যদি প্রকৃতই তার কাজের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং স্বীকার করে যে মুহূর্তের দুর্বলতায় সে ঐ কাজ করে ফেলেছে এবং ধর্ষিতা যদি ব্যক্তিগতভাবে সেটা বিশ্বাস করে, তাহলে মেয়েটি ধর্ষককে ক্ষমা করলেও করতে পারেন৷