২০২০ সালে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চলমান রাখতে সরকারকে ২২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার নতুন ঋণ অনুমোদন করেছিল সংসদ৷ কিন্তু সরকার ১৩ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বলে মঙ্গলবার প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কোম্পানিকে সহায়তা দিতে এবং রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকার চালাতে এই ঋণ নিতে হয়েছে৷
জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় গত সপ্তাহে জানায়, ২০২০ সালে জার্মানির জিডিপি কমেছে পাঁচ শতাংশ, যা ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ের চেয়ে কম৷ ঐ সময় জিডিপি কমেছিল ৫.৭ শতাংশ৷
করোনা মহামারি শেষ হলে জি-সেভেন দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির ডেট রেশিও, অর্থাৎ অনুপাত (মোট সম্পদে ঋণের পরিমাণ) সবচেয়ে কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমরা দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ায় জার্মানি তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে৷ স্বাস্থ্যরক্ষা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা ও চাকরি ধরে রাখতে আমরা অনেক অর্থ ব্যয় করেছি৷ এ কারণে অনেক সুবিধা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে, অল্পসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছে এবং যত নতুন ঋণ লাগবে মনে হয়েছিল তার চেয়ে কম ঋণে কাজ হয়ে গেছে৷''
তবে ২০২১ সালে নতুন ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের চেয়ে বেশি হতে পারে৷ কারণ, বাজেটে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ চাওয়া হতে পারে৷
কোম্পানি ও চাকরিজীবীদের সুরক্ষায় সরকার প্রায় এক কোটি তিন লাখ কোটি টাকা (এক ট্রিলিয়ন ইউরো) ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছে৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)