‘‘সব মুখোশ খুলে যাচ্ছে’’
৩০ মে ২০১৪ আনিসুল হক গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় করা যুদ্ধাপরাধের জন্য সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সম্ভব নয়৷
এর তিনটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলনে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই৷ জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা আপিল বিভাগে থাকায় ট্রাইব্যুনাল আইনে জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় প্রভাব পড়তে পারে৷ এছাড়া কয়েকজন জামায়াত নেতা ইতোমধ্যে বিচারের আওতায় আসায় দ্বিতীয়বারের মতো তাঁদের শাস্তি হলে তা সাংঘর্ষিক হবে কিনা – তাও বিবেচনা করতে হবে৷
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসাবে জামায়াতের বিচারের দাবিতে মঞ্চের সংগ্রাম চলবে৷
‘‘আজ আইনমন্ত্রী বলেছেন, জামাতের বিচার সম্ভব নয়৷ ট্রাইব্যুনালে কি হচ্ছে সেটাও দেখছি পত্রিকায়৷ আরো অনেক কিছুই হচ্ছে, হবে৷ ধীরে ধীরে সবকিছু পরিষ্কার হবে৷ এর আগে অবশ্য নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চকে দুর্বল করার চেষ্টা এবং বেশ কিছু গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী দিয়ে বিভাজন তত্ত্ব ‘এস্টাব্লিশড’ করার রাজনৈতিক প্রজেক্ট সম্পন্ন করা হয়েছে৷ বেশ, ধীরে ধীরে সব মুখোশ খুলে যাচ্ছে৷
ইমরানের লেখায় নারায়ণ গুপ্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মুখে এক কথা, কাজে আরেক রকম৷ এই জন্য সরকার অবশ্যই পচে যাবে এবং এর পরিণতি টের পাবে আগামী নির্বাচনে৷’’
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্রেটেজি ফোরাম’-এর ফেসবুক পৃষ্ঠায় দেয়া একটি নোট নিজের পেজে শেয়ার করেছেন আরিফ জেবতিক ৷ এতে বলা হয়েছে, আইসিএসএফ আইনমন্ত্রীর ধারণাকে সঠিক মনে করে না৷
‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর ৩ (১) ধারাটি ২০০৯ সালে সংশোধন করার ফলে স্পষ্টতই এতে যে কোনো ‘সংগঠন’-এর তদন্ত, বিচার, এবং শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ সন্দেহাতীতভাবে এই আইন অনুযায়ী – ১৯৭১ সালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যে কোনো সংগঠনের বিচারকাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারভুক্ত৷ একইভাবে, সংশোধিত ৩ (১) ধারার ফলে আইনটির ৩ (২) ধারায় ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও নিশ্চিতভাবে প্রয়োগযোগ্য৷’’
আইসিএসএফ মনে করে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন ব্যক্তির বিচার এবং ঘোষিত শাস্তির সাথে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের কোনো সম্পর্ক নেই৷ কারণ সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শাস্তির ধরণ সঙ্গতভাবেই ব্যক্তিকে প্রদত্ত শাস্তির ধরণ থেকে স্বতন্ত্র হতে পারে, যা ট্রাইব্যুনালের বিচারকবৃন্দ তাঁদের সুবিবেচনা প্রয়োগ করে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করার যোগ্যতা রাখেন৷
‘‘ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার কিংবা শাস্তিযোগ্যতার বিষয়টি একটি বিচার্য বিষয়, যা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের এখতিয়ার কেবলমাত্র ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারকদের হাতে ন্যস্ত৷ তাই আইসিএসএফ গভীর উদ্বেগের সাথে মনে করে – আইনমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ ধরনের আগাম বক্তব্য এবং আইনের আগাম ব্যাখ্যা শুধুমাত্র জনমনে বিভ্রান্তিই নয়, তা একটি স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার উপর সরকারের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তার হিসেবে গণ্য হওয়ার সুযোগও তৈরি করে৷’’
আনিসুল হক আইন কতটা জেনে এ বিষয়ে কথা বলেছেন – তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর৷
একাত্তর টেলিভিশনের আলোচনা ‘একাত্তর জার্নাল’-এ তিনি বলেন, ‘‘আনিসুল হক যে তিন বক্তব্য দিয়েছেন তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ নয়৷ মন্ত্রী সম্ভবত ১৯৭৩ সালের আইনটি ভালো করে পড়েননি৷ গতবছর আইনের যে সংশোধনী হয়েছে তা সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না বা পড়েননি৷ আইন জানলে তিনি এ কথা বলতেন না৷’’
মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চ শুক্রবার বিকালে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে৷
মঞ্চের ফেসবুক পৃষ্ঠায় আরিফুল আমীর লিখেছেন, ‘‘জামায়াতের জন্মস্থান পাকিস্তানে যদি জামায়াত নিষিদ্ধ হতে পারে বাংলাদেশে হবে না কেন?’’
সংকলন: জাহিদুল কবির
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ