1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধুতির কৌলীন্য নিয়ে বিতর্কের ঝড়

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২০ জুলাই ২০১৪

ভারতের তামিলনাড়ুর এক অভিজাত ক্রিকেট ক্লাবে ধুতি পরে এক বিচারপতি এবং অন্য দু’জন আইনজীবীকে ঢুকতে না দেয়ায় দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে৷

ছবি: AFP/Getty Images

ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পোশাক বিধির দোহাই দিলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটা তামিল ঐতিহ্যের অপমান৷

ধুতি বিতর্কের ঝড়ে ধুতি সামলাতে এগিয়ে এসেছে তামিলনাড়ুর সব রাজনৈতিক দল৷ বিতর্কের সূত্রপাত সপ্তাহ খানেক আগে৷ চেন্নাই হাইকোটের বিচারপতি এবং অন্য দু'জন আইনজীবীকে ধুতি পরে যাবার জন্য তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি৷ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এটা কোনোমতেই মেনে নেয়া হবেনা৷ এটাকে তিনি মনে করেন পোশাক বিধির স্বেচ্ছাচারিতা এবং তামিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপমান৷ ক্লাবকে এ জন্য সরকারি শো-কজ নোটিশ পাঠানো হয়৷ এইসব ক্লাবের পোশাক বিধি সংশোধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী আইন পাশ করাবার কথাও বলেন৷ প্রশ্ন তোলেন, ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশ মুক্ত হবার এত বছর পরও কী করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পোশাক বিধি বলবৎ আছে দেশের তথাকথিত অভিজাত ক্লাবে? এটা সংবিধান বিরোধী, অগণতান্ত্রিক দাস মানসিকতা৷

সংসদে ধুতি শার্ট পরে যেতেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমছবি: AP

রাজ্য বিধানসভায় এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জয়ললিতা বলেন, দরকার হলে তিনি ক্লাবের লাইসেন্স বাতিল করবেন৷ আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লাবের নিয়মবিধির মধ্যে কোথাও লেখা নেই যে ধুতি পরে যাওয়া বারণ৷ এর বিরুদ্ধে ক্লাব যুক্তি দেখাচ্ছে, প্রাইভেট ক্লাব একটা নিজস্ব বাড়ির মত৷ সেখানে রীতি-নীতি আচার-আচরণ সবই তাদের নিজস্ব৷ কাজেই দোষটা ক্লাবের নয়, যাঁর অতিথি হয়ে চেন্নাই হাইকোর্টের বিচারপতি গিয়েছিলেন, তাঁর সেটা দেখা উচিত ছিল৷

ধুতি পছন্দ করতেন নরসিমহা রাওছবি: picture-alliance/AP Photo

ক্লাবের তরফে সাফাই দেয়া হয়েছে আক্ষরিকভাবে লেখা না থাকলেও এটা ক্লাবের অলিখিত পোশাক বিধি৷ তাতে বলা আছে, ক্লাবের অতিথিরা হবেন সুসজ্জিত যেটা ধরা হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে পশ্চিমি পোশাক৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ভারতীয় মহিলাদের শাড়ির বদলে স্কার্ট বা ফ্রক পরে ঢুকতে হবে? দ্বিতীয়ত, তামিলরা সাধারণত যে ভাবে ধুতি পরে থাকেন, তাতে শরীরের অনেকটাই থাকে অনাবৃত – যেটা কুরুচিকর৷ তামিল সমাজের উঁচুতলা থেকে নীচুতলা সবাই ধুতি, সাদা শার্ট সঙ্গে আঙুলের ডগা খোলা স্যান্ডল পরাই পছন্দ করেন বেশি৷ সংসদে ধুতি শার্ট পরিহিত সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, তামিলনাড়ু বিধানসভায় ডিএমকে দলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধি বা প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অন্ধ্র প্রদেশের নেতা নরসিমহা রাও তার জ্বলন্ত উদাহরণ৷ এটা কী করে কুরুচিকর হতে পারে?

ব্রিটিশ শাসনকালেও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নাকি ভাইসরয়ের বাসভবনে ধুতি-পাঞ্জাবি পরেই যেতেনছবি: Reuters//Information Department Gujarat State

ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ শাসনকালেও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নাকি ভাইসরয়ের বাসভবনে ধুতি-পাঞ্জাবি পরেই যেতেন৷ সুশীল সমাজের কাছে আশ্চর্যের বিষয়, দেশে কেন দেশীয় পোশাক পরা যাবে না, তার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে কেন? সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো প্রাইভেট ক্লাব এই ধরনের নিজস্ব পোশাক বিধি বলবৎ করতে পারে কিনা? এ জন্য বিশেষ আইন পাশ করা জরুরি কিনা? নিজেদের ধুতি সামাল দিতে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক এককাট্টা হয়েছে৷ রাজনৈতিক ইস্যুতে একমত না হলেও এই ইস্যুতে সব দলের এক সুর৷ আইন থাক বা না থাক, স্বাধীন ভারতে পছন্দমত দেশীয় পোশাক পরার ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে না কেন? শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট লুঙ্গির স্টাইলে ধুতি পরেন, বাধাটা কোথায়? বাধাটা ঔপনিবেশিক দাস মানসিকতার৷ অভিজাত শ্রেণিকে সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা বন্ধনীভুক্ত করা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ