1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধুতি, লুঙ্গির প্রবেশ নিষিদ্ধ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ জুলাই ২০১৭

কলকাতার এক অভিজাত শপিং মলে সম্প্রতি এক ঘটনা থেকে জানা গেল, ধুতি বা লুঙ্গি পরে ওই মলে প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি আছে৷

Indien traditionelles Kleidungsstück Dhoti
ছবি: AFP/Getty Images

আশিস অভিকুন্তক‌ একজন নবীন চলচ্চিত্র পরিচালক৷ দেশে এবং বিদেশে তাঁর ছবি নিয়মিত দেখানো হয়৷ এবারের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও আশিস নির্দেশিত ছবি দেখানো হয়েছে৷ এই আশিস এবং কলকাতার অভিনেত্রী দেবলীনা সেন সম্প্রতি গিয়েছিলেন কলকাতার কোয়েস্ট শপিং মলে৷ বিভিন্ন নামি এবং দামি আন্তর্জাতিক ডিজাইনার ব্র্যান্ডের নিজস্ব দোকান আছে এই মলটিতে৷ সেসব ব্র্যান্ডেড পণ্য যে কেবল অতি উচ্চবিত্তদেরই সাধ্যের মধ্যে, তা বলাই বাহুল্য৷ কাজেই সাধারণ, গড়পড়তা মানুষজন সচরাচর এই শপিং মলটিকে একটু এড়িয়েই চলেন৷ সেই কোয়েস্টেরই সদর দরজায় বাধা দেওয়া হয় আশিসকে৷ জানানো হয়, তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না৷ কারণ কী?‌ না নির্দেশ আছে, ধুতি বা লুঙ্গি পরা লোকজন যেন মলে না ঢোকে!‌

গোটা কলকাতা স্তম্ভিত হয়ে গেছে এই খবরে৷ বাঙালিদের শহরে ব্যবসা করছে যে শপিং মল, তারা এরকম বিভাজন করার সাহস পায় কী করে!‌ কিন্তু বিষয়টা সেখানেই শেষ হয়নি৷ আশিসের সঙ্গী দেবলীনা সেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সেদিন বাধা পেয়ে অবাঙালি আশিস ইংরেজিতে তর্ক করতে শুরু করেন দ্বাররক্ষীর সঙ্গে৷ তাতে একটু ঘাবড়ে গিয়ে ওই রক্ষী ওয়াকিটকিতে নিজের ওপরওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ এবং দেবলীনারা শুনতে পান, সেই বড়কর্তা রক্ষীটিকে বলছেন, লোকটার প্রোফাইল কী?‌ সেটা যাচাই করো৷

দেবলীনা সেন

This browser does not support the audio element.

দেবলীনা এবং আশিসের আপত্তি ঠিক এই কারণেই যে, একজন লোক সমাজের কোন স্তরে অবস্থান করে, সেটা কী করে তাঁর পোশাক থেকে নির্দিষ্ট হয়ে যায়!‌ আশিস যেহেতু ইংরেজিতে তুখোড় তর্ক করতে পেরেছেন, সেহেতু তাঁর সামাজিক উচ্চতার আন্দাজ পাওয়া গেছে৷ তখন আর ধুতিতে আপত্তি ওঠেনি৷ কিন্তু ফাঁস হয়ে গেছে শপিং মল কর্তৃপক্ষের ভ্রান্ত এবং বিদ্বেষী বিভাজন নীতি৷ যা কিনা – ধুতি আর লুঙ্গি পরা লোকেদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না৷

কোয়েস্ট মল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দাবি করেছে, গোটা ঘটনাটা অযথা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে৷ আশিস অভিকুন্তককে মাত্র ২০ সেকেন্ডের জন্যে আটকানো হয়েছিল৷ সেটাও নিরাপত্তাজনিত কারণে৷ ধুতি বা লুঙ্গি পরার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই৷

কিন্তু আজকের এই সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবিত সময়ে কোনো কিছুই গোপন রাখা যায় না৷ আশিসের সঙ্গে দ্বাররক্ষীর তর্কাতর্কির ছবি ততক্ষণে ফেসবুকে পোস্ট করে দেন দেবলীনা এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিন্দা, ধিক্কার শুরু হয়ে যায়৷ সদ্য সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরস্কার পাওয়া গদ্যকার শমীক ঘোষ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘‌আশিস অভিকুন্তক এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের সব থেকে নামি ফিল্ম-নির্দেশকদের একজন৷ আশীষের ছবি রিলিজ করে না৷ তাঁর ছবি দেখানো হয় মূলত আর্ট গ্যালারিগুলোতে৷ এছাড়া তাঁর ছবি দেশে বিদেশের নামি ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখানো হয়৷ সেই সমস্ত ফেস্টিভালে যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে কলকাতার পেজ থ্রি সেলিব্রিটি-নির্দেশকদের সিনেমা৷ যেমন গত বছরই তাঁর ছবি বার্লিনে দেখানো হয়েছিল৷ এর বাইরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক৷ আশিস ধুতি পরেন, সব সময়েই৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও৷ কিন্তু আমাদের কলকাতার কোয়েস্ট মল তাঁকে ঢুকতে দেয় না৷ কেন না তিনি ধুতি পরেছেন৷ ধুতি বাঙালির পোশাক৷ আর কোয়েস্ট মলও কলকাতাতেই৷'

তিনি আরো লিখেছেন, ‘অবশ্য বাঙালি তো কলকাতায় দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক৷ এহ বাহ্য৷ আমি চাই আপনারা ঢিল ছুঁড়ুন৷ সকলে নিয়ম করে৷ আমি চাই কোয়েস্ট মলে প্রতিটা কাচ যাক ভেঙে৷ যদি বলো চাইছি, নেহাত চাইছি....নেহাত গুণ্ডারাজ্য, আমি জানি আর কিছ নয় আর কিছু নয় এটাই গ্রাহ্য৷'‌'

শমীকের মতোই ক্ষিপ্ত শহরের আরও অনেকে৷ কেউ কেউ ভেবেছিলেন, কোয়েস্ট মলে সদলে ধুতি এবং লুঙ্গি পরে গিয়ে প্রতিবাদ দেখানোর কথা৷ কিন্তু আশিস অভিকুন্তক নিজে এ ধরনের কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত হতে চাননি৷ বরং প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কোনো কথা বলছেন না৷ দেবলীনা সেন ডয়চে ভেলেকে জানালেন, তিনি এর পর সেটাই করবেন ভাবছেন৷ কারণ ওই শপিং মল কর্তৃপক্ষ যেভাবে গোটা বিষয়টা অস্বীকার করছে, তাতে কোনোরকম প্রতিবাদও অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে৷ একটা ভুল করে সেটা স্বীকার করার সৎসাহসও এদের নেই৷ কিন্তু ধুতি বা লুঙ্গির বিরুদ্ধে ওদের নীতিটা যে ভুল, সেটা পরিষ্কার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ