বুধবার ধূমকেতুতে নামে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ইএসএ-র যান ফিলা৷ সেই থেকে চলছে সৌরজগতের সৃষ্টিরহস্যসহ আশ্চর্যজনক সব তথ্য জানার অপেক্ষা৷ ইউরোপের বিজ্ঞানীদের আশা, ধীরে ধীরে চমকে দেয়ার মতো অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাবে ফিলা৷
বিজ্ঞাপন
ইএসএ-র ছোট্ট মহাকাশযান ফিলা প্রথমবারের মতো ধূমকেতু ৬৭পি/চুরইউমভ-গেরাসিমেনকোয় নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করে৷ ইএসএ ধূমকেতুতে নিজেদের তৈরি যান নামিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল ২১ বছর আগে৷ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন, অর্থাৎ একহাজার ৩০ কোটি ইউরোর বাজেট অনুমোদিত হয় ১৯৯৩ সালে৷ সে বছরই শুরু হয় রোজেটা মিশন৷ রোজেটায় চড়ে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ১০০ কিলোগ্রাম ওজনের অদ্ভুত এক যান ফিলা৷ ধূমকেতুর দিকে যাত্রা মানে সরাসরি সূর্যের দিকে এগিয়ে চলা৷ যেনতেন গতিতে নয়, সেকেন্ডে ১৮ কিলোমিটার বেগে ১০ বছর ধরে ছুটে গত অগাস্টে অবশেষে ধূমকেতু ৬৭পি/চুরিউমভ-গেরাসিমেনকোকে নাগালে পায় ফিলা৷ তারপর থেকে চলেছে ধূমকেতুর গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে, তাকে ছোঁয়া, অর্থাৎ তার ওপর চেপে বসার চেষ্টা৷ ফিলা সেই কাজটি করতে পেরেছে বুধবার৷
শতাব্দীর সেরা ধূমকেতু আইসন আর নেই!
ছবি: Reuters
মর্মান্তিক বিদায়
যুক্তরাষ্ট্রের সৌর পদার্থবিদরা ধূমকেতু আইসনের গতিবিধির দিকে নজর রাখছিলেন৷ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় যখন সূর্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছায় এটা, তখন তারা এটিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল ধূমকেতু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে নাসা টুইটারে জানায়, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আইসন আর নেই৷ টেলিস্কোপে সূর্যের পাশে বিশালাকার বরফ ও ধুলোর জায়গায় কেবল একটি ক্ষীণ স্রোতরেখা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
তীব্র তাপই মৃত্যুর কারণ
বৃহৎ আকার সত্ত্বেও, আইসন সম্ভবত সূর্যের কাছাকাছি এসে তীব্র তাপ ও তাপস্রোত সইতে না পেরে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছে৷ ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, গ্রিনিচ মান সময় ২১:৩০ মিনিটে আইসন নিশ্চিহ্ন হয়েছে৷ ইএসএ টুইটারে জানিয়েছে, সোহোতে অবস্থানরত আমাদের বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন আইসন আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শতাব্দীর সেরা ধূমকেতু
সাম্প্রতিক কালে দৃশ্যমান বিভিন্ন উজ্জ্বল ধূমকেতুর মধ্যে আইসন অন্যতম৷ অনেকে এটিকে শতাব্দীর সেরা ধূমকেতু আখ্যা দিয়েছেন৷ ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের (আইএসওএন) মাধ্যমে ধূমকেতুটি আবিষ্কার করা হয়েছে বলে এটির নাম দেওয়া হয়েছে সি/২০১২ এস১ (আইএসওএন বা আইসন)৷
ছবি: Reuters
বৃহদাকার ধুমকেতু
১৪ মাস আগে এই ধূমকেতুটিকে আবিষ্কৃত হয়৷ এরপর এটিকে নিয়ে অনেক আশা ছিল জ্যোর্তিবিদদের৷ আইসনের বয়স ৪৬০ কোটি বছর বলে ধারণা করা হয়৷ আইসন অন্যান্য ধূমকেতুর তুলনায় বেশ বড়৷ এর পরিধি এক কিলোমিটারেরও বেশি৷
ছবি: cc-by/LarryBloom
টিকে থাকা নিয়ে সংশয় ছিল
আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, সূর্যের কাছাকাছি গেলে ধূমকেতু আইসন বাঁচবে কিনা৷ তবে, সূর্য থেকে মাত্র ১০ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব দিয়ে যাওয়ার সময়ই এটি ধ্বংস হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সূর্যকে অতিক্রম করার সময় ২৭৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটি ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে মহাকাশে ভস্মীভূত হয়৷ এর আগে অন্য কোন ধূমকেতু সূর্যের এত কাছ দিয়ে যায়নি৷
ছবি: picture alliance / dpa
বাংলাদেশ থেকে দেখা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইসন ধূমকেতু শনাক্ত করা হয়েছে এ বছরের নভেম্বরে৷ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া গ্রাম থেকে ৩ নভেম্বর ভোর পাঁচটায় আইসন শনাক্তকরণের পাশাপাশি ধূমকেতুটির একটি ছবি তোলা হয়৷ বাংলাদেশের বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে সেই ছবিটি তোলা হয়েছিল৷
ছবি: Anushandhitshu Chokro Science Organization
লভজয়ের পরিণতি
সৌরমণ্ডলের একেবারে দূর প্রান্তের বরফ-ঠাণ্ডা এলাকা ‘উর্ট ক্লাউড’ থেকে এসেছিল ধূমকেতু আইসন৷ ধূমকেতুটি ঘণ্টায় ১০ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে সূর্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু শক্তিধর নক্ষত্র সূর্যের তেজের কাছে শেষ পর্যন্ত টিকল না এটি৷ পরিণতি হলো ধূমকেতু লভজয়ের মতোই৷ ২০১১ সালে সূর্যের কক্ষপথের কাছে এসে ধ্বংস হয়ে যায় লভজয়৷
ছবি: NASA/Don Davis
ধূমকেতু কি?
ধূমকেতু হলো ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক পদার্থ৷ এটি সৌরজাগতিক বস্তু বা সূর্যের খুব কাছ দিয়ে পরিভ্রমণ করার সময়, কখনো কখনো তার লেজ প্রদর্শণ করে৷ এটি প্রস্থে কয়েকশ’ মিটার থেকে দশ কিলোমিটার এবং দৈর্ঘ্যে কয়েকশ’ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হলে পারে৷
ছবি: NASA/Science dpa
হ্যালির ধূমকেতু
প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পর পর পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠা একটি ধূমকেতু হ্যালি৷ বিখ্যাত ইংরেজি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে৷ এর অফিসিয়াল ডেসিগনেশন হচ্ছে ১পি/হ্যালি৷
ছবি: AP
9 ছবি1 | 9
বিশ্বের সবচেয়ে সফল স্পেস এজেন্সি ইএসএ-র বিজ্ঞানীরা বুধবার থেকে তুমুল উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা আর আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন ফিলার দিকে৷ সঙ্গে একটু দুশ্চিন্তাও আছে৷ কথা ছিল ধূমকেতুকে পুরোপুরি নাগালে পেলে ফিলা দু-দুটো হারপুন ছুড়ে নিজেকে ধূমকেতুর সঙ্গে আটকে ফেলবে৷ সেই কাজে ফিলা কিছুটা ব্যর্থ৷ হারপুন দুটো ঠিকভাবে কাজ করেনি৷ তারপরও অবশ্য ফিলা থেকে রোবট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মিশন কন্ট্রোলরুম জার্মানির ডার্মস্টাট শহরে৷ বুধবার সেখান থেকে জানানো হয়, ফিলা ইতিমধ্যে তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে৷ ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে আগামীতে ধূমকেতুর শরীর ফুটো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নানা ধরনের তথ্য পাঠাবে ফিলা৷
ফিলা কোনো কারণে ব্যর্থ হলেও তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া রোজেটা কাজ চালিয়ে যাবে৷ রোজেটার মিশন শেষ হবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে৷