ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম তৈরি করতে চায় যুক্তরাজ্য
১৮ জুলাই ২০২৫
সেখানে আইনটি পাস হলে ২০২৭ সাল থেকে এটি কার্যকর হবে৷ তখন ২০০৯ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তির কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে৷
কিশোর বয়সে ধূমপান শুরু করেছিলেন গ্যারি৷ এখন মাত্র ৪০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে হার্ট বাইপাস সার্জারির প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে৷ ছোটবেলা থেকে ধূমপান এর কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ‘‘মনে করেছিলাম, আমার কিছু হবে না৷ কিন্তু না...,'' বলেন তিনি৷
গ্যারি তার দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিও কিছুটা হারিয়ে ফেলেছেন৷ ধূমপান তার জীবন নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে, বলছেন তিনি৷
গ্যারি বলেন, ‘‘জীবনের অনেকটা সময় আমি ভেবেছি, আমার কিছু হবে না৷ আমি ঠিক থাকবো৷ যারা ধূমপানকে খারাপ মনে করতো তাদের নিয়ে হাসতাম৷ কিন্তু এখন অসুস্থ হওয়ার পর বুঝতে পারছি, আমি ভুল ছিলাম৷ এটা সত্যিই একটা ভয়ের বিষয়৷ সত্যি৷''
গ্যারির মতো গল্প রোধ করতে চায় লন্ডন সরকার৷ তাই তারা আইনটি পাসের চেষ্টা করছে৷
জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘অ্যাশ' দীর্ঘদিন ধরে এমন আইনের কথা বলে আসছে৷
অ্যাশ এর প্রধান নির্বাহী হ্যাজেল চিজম্যান বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য সরকার ধারণা করেছে, ২০৪০-এর দশকের কোনো এক সময়ে ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের হার কার্যকরভাবে শূন্যে নেমে আসবে৷ এক প্রজন্ম পর আপনি দেখতে পাবেন, তামাক ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে৷ ব্রিটিশ সমাজের জন্য এটি সত্যিই এক রূপান্তরকারী মুহূর্ত৷''
লন্ডনের এক যুব ক্লাবের সদস্য, যাদের উপর এর প্রভাব পড়বে, তারা এটি সমর্থন করছে৷
আলফ্রেডের বয়স ১৪ বছর৷ সে কখনও আইনত তামাকজাত পণ্য কিনতে পারবে না৷ সে এটিকে সম্মানের প্রতীক বলে মনে করছে৷ আলফ্রেড বলছে, ‘‘এর অংশ হতে পারলে খুব ভালো হবে... আমি কখনও ধূমপান করব না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কারণ, আমার মা এবং ভাই কিছুদিন পরপর অনেক কাশি দেন, কারণ, তারা ধূমপান করেছেন৷ তাই আমি কখনও এটা না করার কথা ভাবছি৷''
আলফ্রেড আর তার বন্ধুরা বলছে, তারা কখনও ধূমপান করেনি৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের প্রজন্মের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে৷ তবে তরুণদের মধ্যে ভ্যাপিং বেড়েছে৷ আলফ্রেড বলছে, এর একটি কারণ এর বাজারজাতকরণ পদ্ধতি৷
আলফ্রেড বলছে, ‘‘অনেক ধরনের ভ্যাপ এবং তার মতো জিনিস আছে৷ প্রায় পুরোটা সময় সিগারেট একই রকম আছ৷ কিন্তু ভ্যাপের অনেক ধরনের ফ্ল্যাভার আছে৷ তাই তারা মাঝেমধ্যে ভিন্ন স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, এবং হয়তো সেটি পছন্দ করতে পারে৷ তারা হয়তো সবগুলোই পছন্দ করতে পারে...৷''
নতুন আইনের মাধ্যমে সরকার কোম্পানিগুলোকে তরুণদের কাছে ভ্যাপ মার্কেটিং থেকে বিরত রাখারও পরিকল্পনা করছে৷ কিন্তু আলফ্রেড মনে করছে, এর পরিধি আরও বাড়ানো উচিত৷ ‘‘পরিধি অনেক বাড়াতে হবে৷ যতটা সম্ভব৷ তারা সম্ভাব্য যা কিছু করতে পারে, সব নিষিদ্ধ করতে হবে৷ ধূমপান আর ভ্যাপিং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছু৷ ধূমপান সম্পর্কিত যেকোনো কিছু,'' বলছে সে৷
হাসপাতালে ফেরা যাক৷ অস্ত্রোপচারের পর জীবনযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্যারি৷ ধূমপান ত্যাগ করতে সহায়তার জন্য তৈরি সফল এক কর্মসূচির অংশ ছিলেন তিনি৷ গ্যারি বলেন, ‘‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলছি, কেন নিজের জীবনকে বিপন্ন করছো? ... আমার বয়স যখন কম ছিল, যখন আমি শুরু করেছিলাম, তখন যদি এটা কম পাওয়া যেত, তাহলে আজ আমি এখানে থাকতাম না৷''
হাউস অফ কমন্সের এমপিরা আইনটি অনুমোদন করেছেন এবং এটি বর্তমানে হাউস অফ লর্ডসে আছে৷
আইনটি পাস হলে ব্রিটেন ২০২৭ সাল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বনেতা হয়ে উঠবে৷
শার্লট শেলসম-পিল/জেডএইচ