বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ধূমপান নিয়ন্ত্রণে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ বিশ্বের ৩৮ শতাংশ ধূমপায়ী বাস করে চীন ও ভারতে৷ তাদের অনেকেই এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জানেনই না৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস৷ সেদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও বলেছে যে, অনেক দেশই ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারছে না৷
‘‘২০০০ সালে বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের ২৭ ভাগ ধূমপায়ী ছিলেন৷ ২০১৬ সালে তা কমে হয়েছে ২০ ভাগ৷ তার মানে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছিল,’’ বলছিলেন সংস্থার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ইউনিটের পরিচালক ডগলাস বেটচার৷ কিন্তু এরপর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়নেই আটকে আছে, যেহেতু জনসংখ্যা বাড়ছে৷
ধূমপান কীভাবে ছাড়বেন
ধূমপান ক্ষতিকর তা সকলেই জানি৷ ধূমপান যে মস্তিষ্ককে তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে দেয় অথবা ধূমপায়ীদের যে অপারশনের আগে বেশি অ্যানেস্থেটিকের প্রয়োজন হয় – এসব হয়ত জানি না৷ সমীক্ষার মাধ্যমে এ রকমই তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bonß
সচেতন হোন, বেশি দিন বাঁচুন
যেসব পুরুষ মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংসের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাঁদের তুলনায় যাঁরা মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংস এড়িয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার খান – তাঁদের আয়ু ১৭ বছর পর্যন্ত বেশি হতে পারে৷ জানাচ্ছে জার্মানির হাইডেলব্যার্গ শহরের ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্র৷ তাদের ২২,০০০ নারী ও পুরুষকে নিয়ে করা গবেষণায় নিকোটিন সেবনের কারণে মহিলাদের গড় আয়ু সাত আর পুরুষদের নয় বছর কমে গেছে৷
ছবি: Christian Kaufmann
ধূমপায়ী শতকরা ৫০ জনেরই অপারেশন লাগে
বয়সের সাথে দৃষ্টিশক্তি কমবে, সেটাই স্বাভাবিক৷ তবে সুইডেনে দশ বছর ধরে করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যাঁরা দিনে ১৫টির বেশি সিগারেট খান, তাঁদের চোখে ছানি পড়া বা অন্যান্য সমস্যা সময়ের আগেই দেখা দেয় এবং অপারেশনও করতে হয়৷ তবে গবেষকরা জানান, ধূমপান ছেড়ে দিলেই নাকি চোখের সুস্থতা আবার ধীরে ধীরে ফিরতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/MAST
ধূমপায়ীদের অ্যানেস্থেটিক ও ব্যথার ওষুধ বেশি লাগে
তুলনামূলকভাবে ধূমপায়ীদের বেশি মাত্রায় অ্যানেস্থেটিক এবং ব্যথার ওষুধেরও প্রয়োজন হয়৷ এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল৷ ৯০ জন ধূমপায়ী নারীর জরায়ু অপারেশনের সময় দেখা গেছে যাঁরা ধূমপান করেননি তাঁদের তুলনায় যাঁরা বেশি পরিমাণে ধূমপান করেছেন, তাঁদের বেশি আর যাঁরা কিছুটা কম করেছেন, তাঁদের অনেক কম অ্যানেস্থেটিক দিতে হয়েছে৷ পেইনকিলার বা ব্যথার ওষুধের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷
ছবি: Dean Treml/Red Bull via Getty Images
দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি
ধূমপান শুধু ফুসফুসেরই ক্ষতি করে না৷ যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের চেয়ে ধূমপায়ীদের দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তিনিগুণ বেশি৷ দীর্ঘদিন ধরে করা জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷ তবে আনন্দের কথা যে, ধূমপান ছেড়ে দিলে দাঁত পড়ার ঝুঁকিও কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/contrastwerkstatt
ধূমপান মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে দেয়
বয়সের সাথে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু ধূমপান মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে৷ ৫,১০০ পুরুষ ও ২,১০০ নারীকে নিয়ে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে করা এক গবেষণায় বেরিয়ে আসা এই তথ্যটি প্রকাশ হয়েছে ‘আর্কাইভ অফ জেনারেল সাইকিয়াট্রি’ ম্যাগাজিন-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
ধূমপান ছাড়তে বন্ধু অ্যাপের সাহায্য নিন
অনেক কাজই একসাথে করলে সফলতা আসে তাড়াতাড়ি৷ সেকথা ভেবেই হয়ত সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ধূমপান ছাড়ার সহজ পন্থা হিসেবে মোবাইলে একটি ‘ইন্টারঅ্যাক্টিভ স্মোক ফ্রি বাডি অ্যাপ’ চালু করেছে৷ এই অ্যাপটি ধূমপায়ীদের মোবাইল ফোন মারফত বা মুঠোফোনের মাধ্যমেই ধূমপান ছাড়তে সহায়তা দেয়৷
ছবি: DW/M. Müller
6 ছবি1 | 6
জার্মানিতে ধূমপায়ীর সংখ্যা অনেক দেশের চেয়ে কম হলেও বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি৷২০১৫ সালে ২৭ ভাগেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান করতেন৷ ২০০০ সালে তা ছিল ৩০ দশমিক ৬ ভাগ৷ বেটচার বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে গড়ে ভালো করছে৷
‘‘এর একটি বড় কারণ হলো, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে তরুণ সমাজের জন্য দাম কম রেখে ও বাধাহীনভাবে বাজারজাত করার সুযোগ পায় তামাক শিল্পগুলো,’’ বলছিলেন তিনি৷
তবে তামাক শিল্পগুলোর বাধাহীন এগিয়ে চলাই শুধু নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীন ও ভারতে যেখানে সবচেয়ে বেশি ধূমপায়ী বাস করেন, অনেকে জানেনই না যে তামাক কী ক্ষতি করতে পারে৷
বেটচার বলেন, ‘‘যেমন চীনে ৭৩ শতাংশ ধূমপায়ীই বিশ্বাস করেন না যে, ধূমপানের ফলে স্ট্রোক হতে পারে৷ এছাড়া ৬১ ভাগ মানেন না যে, এটি হার্ট অ্যাটাকেরও কারণ৷ এই তথ্য ঘাটতি কমাতে হবে৷’’
সংস্থাটির হিসেব বলছে, চীনে ৩০ দশমিক ৭ কোটি ও ভারতে ১০ দশমিক ৬ কোটি ধূমপায়ী আছেন৷ অর্থাৎ বিশ্বের ৩৮ ভাগ ধূমপায়ীর বাস এ দু'টি দেশে৷ সরকারগুলো চাইলেই এই সংখ্যা কমাতে পারে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
সারাবিশ্বে বছরে ৭০ লাখ মৃত্যুর কারণ ধূমপান৷ এর মধ্যে ধূমপায়ীদের তামাক সেবনের কারণে প্রায় ৯ লাখ অধূমপায়ী পরোক্ষভাবে এর শিকার হয়ে মারা যান৷
জেডএ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে যা যা ঘটে
একটি সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে দুশো’রও বেশি বিষাক্ত পদার্থ যা শরীরের জন্য একটি বোঝা৷ কিন্তু ধূমপান বন্ধ করার ঠিক পরপরই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কী ভাবে পরিবর্তন ঘটে, তারই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Rumkugel
মাত্র ২০ মিনিট বিরতির পর
শেষ ধূমপানের মাত্র ২০ মিনিট পরেই শরীরের রক্তচাপ ও নাড়ির গতি স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ ধূমপানের সময় সিগারেটের নিকোটিন শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখার ফলে যতটুকু বেড়ে গিয়েছিলো তা আবার নামিয়ে নিয়ে আসে৷
ছবি: Fotolia/Andrei Tsalko
১২ ঘণ্টা ধূমপান না করলে যা হয়
সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন থেকে বের হওয়া যে বিষাক্ত গ্যাস শরীর গ্রহণ করেছিলো, তা ১২ ঘণ্টা পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে আসে৷ এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে কারণ ধূমপান করার সময় রক্তে অক্সিজেন যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে৷
ছবি: Fotolia/ Gina Sanders
সিগারেট ছাড়া দুই দিন
ধূমপানের কারণে স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার যে ক্ষমতা কমে গিয়েছিলো, তা ধূমপান বন্ধ করার মাত্র দুইদিন পরেই বাড়তে শুরু করে৷
ধূমপান বন্ধের তিনদিন
ধূমপান থেকে বিরত থাকার তিনদিন পরে থেকেই বুকের ভেতরটা হালকা মনে হয় এবং শ্বাস ক্রিয়া সহজ হয়, কারণ তখন আর শরীরের ভেতরে নিকোটিন থাকেনা৷ আর সে কারণেই ধূমপান না করার লক্ষণগুলো ভালোভাবে ধরা পড়ে বা বোঝা যায়৷ তখন মাথাব্যথা, বমিভাব, প্রচণ্ড ক্ষুধা পাওয়া, হতাশা বা আতঙ্কভাব হয়ে থাকে৷
ছবি: Andrzej Wilusz/Fotolia
ধূমপান বন্ধের কয়েক মাস পর
ধূমপান বাদ দেওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় শরীরে রক্ত চলাচল অনেক ভালোভাবে হচ্ছে৷ আর আগের তুলনায় ফুসফুস শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে এবং কাশিভাবও কমতে শুরু করে৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Kaulitzki
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর, ১০ বছর বা ১৫ বছর পর
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর পর থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়৷ তাছাড়া দশ বছর ধূমপান না করলে একজন ধুমপায়ীর ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যাওয়ার ঝুঁকির তুলনায় অর্ধেক কমে যায়৷ শুধু তাই নয়, ১৫ বছর ধূমপান থেকে বিরত থাকলে তার করোনারি হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, যে জীবনে কখনো ধূমপান করেনি তার মতো৷