‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ জেনেও অনেকে খুব একটা পাত্তা দেন না৷ ব্রিটেন একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছে, সিগারেটের প্যাকেটে ধূমপানবিরোধী সতর্কতা-বার্তা লিখে খুব বেশি কাজ হয় না৷ বেশির ভাগ ধূমপায়ীই কিন্তু এগুলো পড়েই না৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনে প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটের সামনে-পেছনে, এমনকি ভেতরেও ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার মতো তথ্য, সতর্কতা-বার্তা এবং ধূমপান কত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে – তা বোঝানোর জন্য ছবি থাকে৷ সামনে লেখা থাকে ‘ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে' বা ‘ধূমপান আপনার এবং আপনার আশেপাশের সবার ভয়ংকর ক্ষতি করে' জাতীয় কিছু সতর্কতামূলক বার্তা৷ প্যাকেটের পেছনে লেখা থাকে ধূমপানের ক্ষতি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য৷ প্যাকেটের পেছনের কাগজের ভেতরের দিকে থাকে ধূমপানের কারণে পচে যাওয়া দাঁতের মাড়ি, ক্যানসারে আক্রান্ত ফুসফুস এবং ঘাড়ের ছবি৷ সব লেখা এবং ছবিরই উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা৷ অথচ ব্রিটেনের ‘টোব্যাকো কন্ট্রোল' জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষ করে টিন-এজারদের মধ্যে এ ধরণের প্রয়াস যেভাবে যতটা প্রভাব বিস্তার করবে বলে আশা করা হচ্ছিল, ততটা ঠিক হচ্ছে না৷ তাদের কাছে যেটুকু মনযোগ প্যাকেটের সামনের দিক পায়, পেছনের দিক পায় তার চেয়ে কম আর ভেতরের ছবিগুলো কেউ বলতে গেলে দেখেই না!
‘ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন’
ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ধূমপান – বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷
ছবি: AP
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷
একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেট
জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জার্মানিতে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ জার্মানিতে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE
সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ী
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করলে পারা যায়৷এর জন্য রয়েছে নানা ওষুধপত্র,গ্রুপ থেরাপি৷মনোবিজ্ঞানী, গবেষক এবং কেমনিৎস শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান বিরোধী কেন্দ্রের প্রধান প্রোফেসার স্টেফান ম্যুলিশ বলেন, ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে৷তিনি একটি গ্রুপ থোরাপিও পরিচালনা করেন৷তাঁর মতে, ‘একা চেষ্টার চেয়ে গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় সফলতা বেশি’৷
ছবি: Privat
ঘরের বাইরে ধূমপান
বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷
ছবি: picture-alliance/Coleman/Photoshot.
প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট
‘ধূমপায়ীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন৷ নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আপনাদের ফুসফুস আরো ভালোভাবে কাজ করছে’৷ একথা বলেছেন প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় দফতরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: dapd
শেষ কথা
মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
9 ছবি1 | 9
২০০৮ এবং ২০১১ – এই দু'বছরে দুবার চালানো হয়েছিল জরিপটি৷ ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সি এক হাজারেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর মধ্যে চালানো এই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে আজব কিছু তথ্য৷ ২০০৮ সালের ওই জরিপের সময় সিগারেটের প্যাকেটের সামনে আর পেছনের লেখাগুলোই শুধু ছিল৷ ২০১১ সালে প্যাকেটের ভেতরেও ছবি দেয়া শুরু হয়৷ দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া দুই তৃতীয়াংশ থেকে তিন চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী কখনো ধূমপান করেনি৷ ১৭ থেকে ২২ ভাগ কিশোর-কিশোরী শুধু অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য দু-একবার ধূমপান করেছে৷ আর শতকরা দশজন নাকি সপ্তাহে অন্তত একবার ধূমপান করে৷
তবে সতর্কতামূলক বার্তা এবং ছবির দিকে তাদের মনযোগের বাহার দেখে জরিপ পরিচালনাকারীরা অবাক৷ ২০০৮ সালে শতকরা ৫৮ জন ‘ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে' সতর্কতা-বার্তাটি মনে করে বলতে পেরেছিল৷ ‘ধূমপান আপনার এবং আপনার আশেপাশের সবার ভয়ংকর ক্ষতি করে' মনে ছিল শতকরা ৪১ জনের৷ ২০১১ সালে ওই কিশোর-কিশোরীদের অনেকের মন থেকে সেইটুকুও মুছে যায়৷ ‘ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে' কথাটি তখন মনে ছিল শতকরা ৪৭ জনের, আর ‘ধূমপান আপনার এবং আপনার আশেপাশের সবার ভয়ংকর ক্ষতি করে' মনে ছিল শতকরা মাত্র ২৫ জনের৷
স্বাভাবিকভাবেই, সিগারেটের প্যাকেটের পেছনের দিকে নজর তাদের গেছে কম৷ ভেতরের ছবিগুলো দেখেছে মাত্র শতকরা ১০ জন৷ নিয়মিত ধূমপায়ীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ৷ তাদের কেউ কেউ তো এই সতর্কতামূলক বার্তা পড়েই না, ভেতরের ছবিগুলো ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করে বাড়তি খরচ করে৷ এক ধরণের প্যাকেট কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোর সহায়তা নিয়ে মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়া ছবিগুলো তারা যে দেখেই না!