আধুনিক শহরে ক্লান্তিকর, ধূসর রঙের কাজ চালানো ভবনের অভাব নেই৷ এমন স্থাপত্য তার একঘেয়েমির কারণে মানুষের নজর এড়িয়ে যায়৷ স্থাপত্যের এক ছাত্র ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তার বিকল্প তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ধূসর বাস্তব থেকে বড় শহরের রঙিন স্বপ্নময় জগত৷ বাড়ির বাইরে সাদামাটা জ্যামিতিক নক্সার কাজ৷ তার উজ্জ্বল রং অতি সাধারণ ভবনকেও আকর্ষণীয় করে তোলে৷ এমন চমকপ্রদ রূপান্তর ঘটাচ্ছেন জার্মানির আলোকচিত্রী ও স্থাপত্যের ছাত্র পাউল আইস৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক এমন ভবন রয়েছে, যা চোখেই পড়ে না৷ নির্বিচারে সেগুলির উপর শহরের বাকি অংশের মতো ধূসর রং করা হয়েছে৷ ফলে এমন বাড়িঘর প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়৷’’
অনেক বড় শহরে ধূসরের নানা হেরফের মনকে বিষণ্ণ করে তোলে বলে মনে করেন পাউল৷ তাই ২০১৫ সালে তিনি রঙিন ছবির এক সিরিজ শুরু করেন৷ বার্লিনে জন্ম হলেও ২১ বছরের এই তরুণ বর্তমানে অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন৷ শহরের পুরানো তামাকের কারখানা তাঁর কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷ সংরক্ষিত এই শিল্পকাঠামো বাউহাউস শৈলির কারণে খ্যাতি অর্জন করেছে৷ প্রায় ১০০ বছর আগে সেটি ছিল এক বৈপ্লবিক নির্মাণ শৈলি৷ আজও সেই শৈলি পাউল আইস-কে মুগ্ধ করে৷ তিনি বলেন, ‘‘জানালার মতো খুঁটিনাটি বিষয়গুলির দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে, কতটা চতুরভাবে নানা সমস্যার সমাধান করা হয়েছে৷ সে সময় এত সূক্ষ্ম কাঠামো ছিল না৷ এমন প্রচেষ্টা ছিল সম্পূর্ণ নতুন৷ কোনো মহাকাশযান এনে খাড়া করে আজ যদি বলা হয়, এটাই হলো নতুন স্থাপত্য – বিষয়টি অনেকটা সে রকম৷’’
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পাঁচ সুউচ্চ ভবন
‘ইন্টারন্যাশনাল হাইরাইজ অ্যাওয়ার্ড’-এর চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে পাঁচটি ভবন৷ ১৫টি দেশের ৩৬ ভবন থেকে বেছে নেয়া হয়েছে এই পাঁচটিকে৷ এই ভবনগুলো যে শুধু সুউচ্চ এবং দেখতে সুন্দর, তা-ই নয়, টেকসইও বটে৷
ছবি: Iwan Baan
ওয়াসিয়া হোটেল ডাউনটাউন, সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের ব্যস্ততম বাণিজ্য এলাকার সবুজ এই টাওয়ারটি ডিজাইন করেছে ডাব্লিউওএইচএ আর্কিটেক্টস৷ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এই ভবনকে ‘পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ স্বর্গ’ বলে উল্লেখ করেছে৷ পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখায় ইন্টারন্যাশনাল হাইরাইজ অ্যাওয়ার্ড-এর বিচারকরা এই ডিজাইনের বেশ প্রশংসাও করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Kopter/DAM
বৈরুত টেরেসেস, বৈরুত, লেবানন
ভুমধ্যসাগরীয় আবহাওয়ায় বসবাস কেমন হয়, তার একটা নান্দনিক উপস্থাপনা করেছে স্থপতি হেরসগ এবং ডি ময়রন৷ লেবাননের জনবহুল রাজধানীতে এর অবস্থান৷ ভবনের ভেতর ও বাইরের মধ্যে এমনভাবে সামঞ্জস্য আনা হয়েছে, যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসও অনায়াসে চলাচল করতে পারে৷
ছবি: Iwan Baan
মাহানাখোন, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
জার্মান স্থপতি ওলে শীরিনের দুটি ডিজাইন এবারের প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়েছে৷ এর একটি এই ভবন৷ ৭৭ তলা উঁচু এই ভবনটি থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ ভবন৷ পিক্সেলের অবয়বে তৈরি এই ভবন এরই মধ্যে দেশটির অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Iwan Baan
টোরে রিফর্মা, মেক্সিকো সিটি
এল বেন্জামিন রোমানোর ডিজাইন করা এই ভবনটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অফিস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে৷ ৮০৭ ফুট উঁচু এই ভবনটি মেক্সিকোর সবচেয়ে উঁচু ভবন৷ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা এলাকাটিতে কম্পন সহনীয় করেই প্রস্তুত করা হয়েছে ভবনটিকে৷
ছবি: Alfonso Merchand
চাওইয়াং পার্ক প্লাজা, বেইজিং, চীন
এই ভবনটির ডিজাইনকে একইসাথে ‘অপ্রচলিত, কিন্তু সামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন ইন্টারন্যাশনাল হাইরাইজ অ্যাওয়ার্ড-এর বিচারকরা৷ চীনের ঐতিহ্যবাহী পেইন্টিং থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ডিজাইন করেছেন বেইজিংয়ের এমএডি আর্কিটেক্টস৷ বিচারকরা বলছেন, এই ভবনে আধুনিক স্থাপত্য ভাষাকে নিজস্ব সংস্কৃতিতে অনুবাদ করেছেন ডিজাইনাররা৷
ছবি: Hufton + Crow
5 ছবি1 | 5
নিজের ছবির মাধ্যমে তিনি সমসাময়িক স্থাপত্যের সমালোচনা করতে চান৷ তাঁর মতে, আধুনিক স্থাপত্যশৈলির মধ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা ও সাহসি আইডিয়ার অভাব রয়েছে৷ পাউল আইস মনে করেন, ‘সে সময়কার বড় আকারের নির্মাণ শৈলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, সস্তায় বিপুল পরিমাণ নির্মাণের সুযোগ ছিল৷ কিন্তু অগ্রগতির লক্ষ্যে এই চিন্তাধারার সেই প্রবণতা আজ হারিয়ে গেছে৷ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো উদ্ভাবন নেই৷’’
কমপক্ষে রঙের ছোঁয়া দিতে পাউল আইস একাই এগিয়ে এসেছেন৷ লিনৎস শহরে একটি পাড়াকে তিনি লাল, হলুদ ও নীল রঙে সাজিয়েছেন৷ নেদারল্যান্ডসের এক চিত্রশিল্পীর কাছ থেকে তিনি সেই প্রেরণা পেয়েছেন৷
তবে বাউহাউস শৈলির স্থপতিদের ঐতিহ্যও তাঁর কাছে অনুকরণীয়৷ ব্রুনো টাউট বার্লিনে শ্রমিকদের বসতির নক্সার যে খসড়া তৈরি করেছিলেন, তাতে আকার-আয়তন, কার্যকারিতার পাশাপাশি রঙেরও একটা ভূমিকা ছিল৷
স্থপতি ও আলোকচিত্রী হিসেবে পাউল আইস পুরানো তামাকের কারখানা ভবনের মৌলিক সংস্কার করছেন৷ কম্পিউটারের পর্দায় তিনি অপ্রয়োজনীয় অংশ সরিয়ে, দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধন করে এক একটি অংশ রং করছেন৷ পাউল বলেন, ‘‘বাউহাউস শৈলির মতো মৌলিক রং এখানে ব্যবহার করিনি৷ বরং তার এক আধুনিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি৷’’
ফলে এমন এক মোটিফ স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আরও কিছু করার সাহস তুলে ধরছে৷ উচ্চশিক্ষা শেষ করে পাউল আইস নিজেই উদ্ভাবনী ভবনের নক্সা তৈরি করতে চান৷ তাতে রংয়ের বাহার তো থাকবেই৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি
কাঠের বাড়ি সমৃদ্ধ জার্মানির সুন্দর দশ শহর
জার্মানিতে প্রায় বিশ লক্ষ বাড়ি আছে, যেগুলোর প্রায় অর্ধেক কাঠ দিয়ে তৈরি৷ এমন বাড়ির বেশিরভাগেরই দেখা পাওয়া যাবে ছবিঘরে নাম করা দশটি শহরে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/G. Lenz
কুয়েডলিনবুর্গ
এই শহরে ১,৩০০-র বেশি কাঠের বাড়ি রয়েছে৷ ১৯৯৪ সালে শহরের পুরোনো অংশকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/GTW
সেলে
এই শহরে কাঠের বাড়িগুলো একের পর এক এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন লকেটে গাঁথা মুক্তা! এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ১৫৩২ সালে, নাম হপেনার হাউস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hollemann
ফ্রিৎসলার
গত কয়েক শতকে এই শহরের রূপে পরিবর্তন হয়নি৷ এখনো সেখানে গেলে কাঠের বাড়ি আর সরু লেনের দেখা পাওয়া যাবে৷ এসবের মাঝে পাওয়া যাবে ছোট রেস্তোরাঁ, আইসক্রিমের দোকান আর ক্যাফে – নীরব, শান্তির এক পরিবেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Zucchi
মোনশাউ
সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর হওয়ার কারণে মোনশাউকে ‘আইফেলের মুক্তা’ নামে ডাকা হয়৷ প্রায় তিনশ’র মতো তালিকাবদ্ধ ভবন আছে সেখানে৷ পাথর বাঁধানো পথ ধরে হাঁটতে গিয়ে আর্ট গ্যালারি আর বুটিকের সন্ধান মিলবে৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/R. Kiedrowski
ব্যার্নকাস্টেল-কুয়েস
মোজেল নদীর ধারে আঙুর খেত সমৃদ্ধ শহর ছিল ব্যার্নকাস্টেল৷ ১৯০৫ সালে এটি নদীর অপর পাশের কুয়েসের সঙ্গে মিলে যায়৷ ফলে শহরটির নাম এখন ব্যার্নকাস্টেল-কুয়েস৷ স্থান স্বল্পতার কারণে সেখানে বাড়িগুলো যতটা সম্ভব উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/M. Moxter
এসলিঙেন
এই শহরে গেলেও অনেক আঙুর খেতের দেখা মিলবে৷ তের থেকে ষোলো শতকের মধ্যে নির্মিত ২০০-র বেশি কাঠের বাড়ি আছে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/J. Pfeiffer
ট্যুবিঙেন
বিশ্ববিদ্যালয় শহর বলে ট্যুবিঙেনের মোট বাসিন্দার তিনজনের একজন শিক্ষার্থী৷ মধ্যযুগে নির্মিত কাঠের বাড়িসহ শহরের সরু লেন, রাস্তা, সবকিছু ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা আছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/E. Bömsch
রটেনবুর্গ অব ডেয়ার টাউবার
কাঠের বাড়ি দেখার জন্য সম্ভবত জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত শহর এটি৷ প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ পর্যটক সেখানে যান৷ ঐতিহাসিক ভবন, আঁকাবাঁকা চলার পথ, কাঠের বাড়ি, ৪২টি দরজা আর টাওয়ার সমৃদ্ধ মধ্যযুগীয় এই শহরের প্রাচীর – পর্যটক আকর্ষণের জন্য আর কি কিছু চাই!
ছবি: picture-alliance/imagebrokerW. Dieterich
বামব্যার্গ
ছবিতে শহরের পুরনো টাউন হল দেখতে পাচ্ছেন৷ রেগনিৎস নদীর মাঝে একটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সেখানে এটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ টাউন হলের পেছনে সারি ধরে কাঠের অনেক বাড়ি রয়েছে, যেখানে একসময় জেলেরা বাস করতেন৷ বামব্যার্গে প্রায় ২,৪০০ তালিকাভুক্ত ভবন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/G. Lenz
স্টাডে
হামবুর্গের কাছে এই ছোট্ট শহরটি অবস্থিত৷ ‘জার্মান টিম্বার ফ্রেম রুট’-এর মধ্যে এই শহরটিও পড়বে৷ আপনি যদি এমন একের অধিক শহর দেখতে চান, তাহলে ঐ রুটের একটি অংশ দেখলেও চলবে৷ রুটটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ৷ উত্তরে এলবে নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণ লেক কনস্টান্স পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি৷