বৃহস্পতিবার সকালে একিউআই ছিল ৪৩২। একিউআই চারশর উপর উঠলেই তাকে বিপজ্জনক দূষণ বলে হয়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকালে দিল্লির অনেক জায়গায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স(একিউআই) ছিল পাঁচশোর উপরে, যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বুধবার বেলা চারটের সময় জানিয়েছে, তখন দিল্লির একিউআই ছিল ৪১৮, যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। বৃস্পতিবার সকালে তা আরো বেড়ে যায়।
সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় অমৃতসর ও পাঠানকোট বিমানবন্দরে জিরো ভিসিবিলিটি ছিল। সকাল সাতটায় গোরক্ষপুর বিমানবন্দরেও একই অবস্থা হয়।
সকালেই বিমানসংস্থা ইন্ডিগো সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, কুয়াশার জন্য অমৃতসর, বারাণসী ও দিল্লিতে বিমান চলাচলে দেরি হতে পারে। যাত্রীরা যেন বিমান চলাচলের সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনে বাড়ি থেকে বের হন।
দিল্লির লাগোয়া গুরুগ্রাম, নয়ডা, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদেও ভয়াবহ বায়ুদূষণ হলেও তাদের পরিস্থিতি দিল্লির মতো অতটা খারাপ নয়। সেখানে একিউআই ৩৩০ থেকে ৩৪০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
প্রবল বায়ুদূষণ নিয়ে আলোর উৎসবে দিল্লি
দিল্লিতে দিওয়ালি মানে একদিকে যেমন আলোর উৎসব, অন্যদিকে ভয়ংকর দূষণ। প্রতিবছর একই অবস্থা হয় দিল্লির।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
আলোর মালায়
দিওয়ালি হলো আলোর উৎসব। তাই দিওয়ালির কয়েকদিন আগে থেকেই আলোয় আলোয় সেজে ওঠে দিল্লি। রাতে এক মোহময়ী রূপ নেয় ভারতের এই রাজধানী শহর। অধিকাংশ বাড়িতে, বাজারে, সরকারি ভবনে থাকে আলোর মালা। আলোকিত দিল্লিকে দেখতে ভালো লাগে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
বাড়ি সাজানোর ফুল
দিওয়ালিতে অনেকেই ফুল-মালায় বাড়ি সাজান। নানা ধরনের ঘর সাজানোর জিনিসও তারা ব্যবহার করেন। আলো ছাড়াও তাই ফুল ও অন্য ঘর সাজানোর জিনিসের চাহিদা তুঙ্গে থাকে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
দূষণের ধোঁয়া-ধুলোয়
আবার দিল্লির এই আলোর নিচেই আছে অন্ধকার। ধোঁয়া-ধুলো-দূষণের অন্ধকার। দিল্লিতে দিওয়ালি মানে দমবন্ধ করা দূষণ। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই-এর গড় ছিল ৩২৯। আবহাওয়াবিদদের পরিভাষায় যা খুবই খারাপ। আনন্দ বিহারে একিউআই ছিল ৪১৯ এবং জাহাঙ্গিরপুরিতে ৩৯৫, যা হলো মারাত্মক।
ছবি: Rouf Fida/DW
বাড়ছে অসুখ
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিল্লির এই আবহাওয়ার ফলে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত অসুবিধা হবে। সর্দি-কাশি-জ্বর হতে পারে। কিছুদিন ধরে দিল্লিতে অনেকেই ভাইরাল জ্বরে কাবু হয়ে পড়ছেন। এই জ্বর বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে অন্যতম এই দিল্লির অবস্থা আগের মতোই খারাপ।
ছবি: Sonu Mehta/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা
কয়েকদিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট এই দূষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকারের প্রবল সমালোচনা করেছে। সর্বোচ্চ আদালত মনে করছে, খড় পোড়ানো নিয়ে তারা লোকদেখানো পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিছু কৃষককে সামান্য জরিমানা করছে। বাকিদের ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষের দূষণ-মুক্ত পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার লংঘিত হচ্ছে।
ছবি: Channi Anand/AP Photo/picture alliance
অসচেতন মানুষ
দিল্লিতে রাত হলেই কানে আসছে বাজি ফাটানোর আওয়াজ। অথচ, বাজি ফাটানোর উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে। তা সত্ত্বেও দেদার বাজি ফাটছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাকে উপেক্ষা করে অসচেতন মানুষ বাজি ফাটাচ্ছে।
ছবি: Rouf Fida/DW
তবু আলোয় ভরা দিল্লি
এই দূষণকে উপেক্ষা করে দিল্লি এখন দিওয়ালির আলোয় আলোকময়। বিভিন্ন দোকানে এখনো বিক্রি হচ্ছে আলো। শেষ মুহূর্তে কেনার জন্য। আগে শুধু প্রদীপ জ্বালানো হত। মোমবাতি জ্বলত। এখন তার জায়গা করে নিয়েছে বৈচিত্রময় এলইডি বাল্ব।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
প্রদীপও টিকে আছে
তবে মাটির প্রদীপ এখনো টিকে আছে। কিছু মানুষ মাটির প্রদীপে তেল দিয়ে আলো জ্বালাতে ভালোবাসেন। প্রদীপের ভিতর মোমবাতি লাগানোরও চল হয়েছে। তাই প্রদীপ যে একেবারে চলে গেছে এমন নয়।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
দিওয়ালি বাজার
দিল্লিতে নানা জায়গায় বসে দিওয়ালি বাজার। সেখানে ঘর সাজানোর নানান জিনিস পাওয়া যায়। পাওয়া যায় উপহার দেয়ার জিনিস। দিল্লিতে দিওয়ালিতে উপহার দেয়ার একটা চল আছে। তাই দিওয়ালি বাজারও জমজমাট হয়। তবে এখন ই-কমার্সের যুগে অবশ্য অনেকেই ঘরে বসে জিনিস আনিয়ে নেন।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
আলোর এই ঝরনাধারায়
দিল্লির একটি আবাসনের দৃশ্য। আলোর ঝরনাধারা বইছে যেন। অনেক বাজারই এভাবে সেজে ওঠে রাজধানীতে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
খাবার জিনিসও
দিওয়ালি মানে তো দেদার খাওয়া-দাওয়া। তাই দিল্লির প্রতিটি বাজারে নানান ধরনের নোনতা খাবার বিক্রি হচ্ছে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
সাজাব যতনে
অনেকেই দিওয়ালিতে বাড়ি সুন্দর করে সাজান। দিওয়ালির সময় সেই ঘর সাজানোর জিনিসে দোকান ভরে যায়। ।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
আলোর চাহিদা তুঙ্গে
তবে এই সময় সবচেয়ে বেশি থাকে আলোর চাহিদা। দিল্লিতে প্রতিটি পাড়ায় তাই বিভিন্ন ধরনের আলো নিয়ে অস্থায়ী দোকান বসে যায়।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
13 ছবি1 | 13
এই আবহাওয়ায় বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থ প্রতীম বোস আগে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছিলেন, এই সময় বেশ কিছু সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন। বাড়ি থেকে বেরনোর আগে গার্গল করা, স্টিম নেয়া খুবই জরুরি।
আবহাওয়া দপ্তরের আশা, দিল্লিতে এবার হাওয়ার গতিবেগ বাড়বে। তার ফলে বায়ুদূষণের মাত্রাও কমবে।