১৭ দিন পর রেশমাকে জীবিত উদ্ধার
১০ মে ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনাকে অভূতপূর্ব বলে উল্লেখ করেছেন৷
শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক ধসে পড়া ভবনের বেসমেন্টে বেঁচে থাকা মানুষের উপস্থিতি টের পান৷ রেশমা একটি ভাঙা পাইপ দিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান৷ আর তখন রাজ্জাক সুরঙ্গ দিয়ে তাঁকে দেখতে পান৷ মেয়েটি নিজের নাম জানান রেশমা৷
এরপরই রাজ্জাক উদ্ধারকারী দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তা জানালে, ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে রেশমাকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়৷ এই উদ্ধার কাজে সেনা, ফায়া সার্ভিস যৌথভাবে অংশ নেয়৷ স্বাভাবিকভাবেই, রেশমাকে বের করে না আনা পর্যন্ত সেখানে ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা৷
রড কেটে ভিতরে ঢুকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রেশমাকে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷ তখন রেশমা স্মিত হাসি দেন৷ তাঁকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে৷ উদ্ধারকারী দলের নেতা কর্নেল মইন জানান যে, রেশমা এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন৷ এমনকি তাঁর শরীরের কাপড়ও অক্ষত আছে৷
রেশমাকে উদ্ধারের আগে উদ্ধারকারী রাজ্জাক কাছাকাছি গিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেন এবং তাঁকে পানি ও জুস খেতে দেন৷
রাজ্জাক জানান, রেশমা বেসমেন্টে আটকা পড়লেও সেটা উপরের তলার মতো মিশে যায়নি৷ সেখানে হাঁটা চলা এবং নড়া চড়া করার কিছুটা সুযোগ ছিল৷ রেশমা তাঁকে জানান যে, ঐ জায়গায় বিভিন্ন ধরণের শুকনা ও জুস জাতীয় খাবার ছিল, যা তিনি খেয়েছেন৷ মঙ্গলবার শুকনা খাবার শেষ হয়ে যায় আর রসালো খাবার যায় পচে৷ ফলে গত দু'দিন ধরে তিনি অভুক্ত ছিলেন৷ এরপরেও অবশ্য সেখানে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হয়নি৷
রেশমা তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এর অপারেটর৷ তবে সেখান থেকে সে কিভাবে বেসমেন্টে গেল, তা এখনও জানা যায়নি৷ উদ্ধারকারীরা জানান, তাঁকে চিকিত্সকরা পুরোপুরি সুস্থ ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে৷
ধ্বংসস্তূপের নীচে রেশমার এই ১৭দিন বেঁচে থাকার ঘটনাকে ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখা করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ৷ তিনি জানান, একজন মানুষ কোনো রকম খাবার বা পানীয় ছাড়া সর্বোচ্চ ৯০ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারেন৷ যেহেতু সেখানে খাবার ও পানীয় ছিল তাই রেশমা বেঁচে গেছেন৷ আর যে কোনোভাবে সেখানে অক্সিজেনও ছিল৷ তবে এই ১৭ দিনে তিনি হৃদরোগ বা নিউরোলোজিক্যাল সমস্যায় পড়তে পারতেন৷ হয়ত মানসিক জোর এবং বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাঁকে সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ তিনি জানান, গবেষণায় প্রমাণিত যে নারীদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি৷
রেশমার বাবার নাম আনসার আলি৷ তাঁদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কুশিগাড়ি গ্রামে৷ সাভারের বাজার রোডে ভাড়া বাসায় তিনি ও তাঁর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক থাকেন৷ রেশমার কোনো সন্তান নেই৷
এদিকে, খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ছুটে যান রেশমাকে দেখতে৷ তিনি সেখানে রেশমাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন৷ রেশমার মা এবং ভাই-বোনকেও হাসপাতালে রেশমার কাছে নেয়া হয়েছে৷ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিত্সক ডা. কর্নেল আজিজুর রহমান জানান, রেশমা স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলছেন৷ এমনকি তিনি হাঁটাচলা করতেও পারছেন৷ বাইরে থেকে দেখে তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি৷ তবে তাঁকে পুরোপুরি পরীক্ষা করে বলা যাবে যে, তিনি আদতে কতটা সুস্থ আছে৷
উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তা মেজর মোয়াজ্জেম জানান, পুরো বেসমেন্ট সার্চ করার পর তারা আবার ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করবেন৷ তবে সেখানে আর কেউ জীবিত আছে কিনা তারা এখনও তা জানতে পারেননি৷
ওদিকে, রেশমাকে উদ্ধারের অভিযান বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সমপ্রচার করে৷ দেশের মানুষ টিভি সেটের সামনে পিনপতন নিরবতায় তা প্রত্যক্ষ করেন৷ রেশমাকে বাইরে নিয়ে এলে শুধু সাভার নয়, সারা দেশের মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে৷