নওশাদ হাজতে, আরো অশান্তির আশঙ্কা
২৪ জানুয়ারি ২০২৩২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে আত্মপ্রকাশ করে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়াই করা এই ফ্রন্টের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর বিধানসভা কেন্দ্রের জনপ্রতিনিধি নওশাদ। সেখানে আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
এই উত্তেজনার রেশ এসে পড়ে কলকাতায়। রানি রাসমণি রোডে শনিবারের নির্ধারিত কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন নওশাদ। এই অনুষ্ঠান ঘিরে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
নওশাদের গাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। আইএসএফ কর্মীদের সমাবেশে আসতেও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ-প্রশাসন ও তৃণমূল একযোগে সভা বানচালের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ তোলেন আইএসএফ নেতৃত্ব।
উত্তেজনা বাড়তে থাকায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা ইট, পাথর ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয় দফায় দফায়। অনেকে আহত হন। এর মধ্যে ১৯ জন পুলিশকর্মীও আছেন।
ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় বিধায়ক নওশাদ-সহ ১৯ জনকে। এর মধ্যে এক জন নাবালক। রবিবার ধৃতদের নগর দায়রা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন। নাবালকদের পাঠানো হয়েছে জুভেনাইল হোমে।
ভাঙরের রাজনীতিতে বরাবরই উত্তেজনা থাকে। নওশাদ জেতার পর পারদ চড়েছে। শনিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা একসুরে শাসক দলকে আক্রমণ করেছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ''বিরোধীরা যেখানে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, সেখানেই তৃণমূল গুন্ডামি করছে। ভাঙরে আইএসএফ-বামপন্থীদের শক্তি এতটাই যে ওরা সুবিধা করতে পারবে না।''
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল তাদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ''বিধায়ক নওশাদকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার নিন্দা করছি। গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে চাইছে তৃণমূল।'' তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের জবাব, ''জনসমর্থন না পেয়ে গাজোয়ারি চলবে না। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। মানুষ প্রতিরোধ করবে।''
মঙ্গলবার জেলে নওশাদের সঙ্গে দেখা করতে যান একাধিক পিরজাদা। ধরনায় বসেছেন আইএসএফ-এর সমর্থকেরা। আন্দোলন কর্মসূচি জারি থাকবে বলে তারা জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ফের অশান্ত হতে পারে ভাঙর থেকে কলকাতার রাজপথ।
অন্যদিকে, নওশাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ভাঙরের তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। তার দাবি, এলাকায় গণ্ডগোল করেছে আইএসএফ। এই চাপানউতোর দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''এই এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে আইএসএফ সক্রিয়। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।''
সূত্রের খবর, বিধায়ক-সহ ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে খুনের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। সাংবাদিক আশিস ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বাংলায় আন্দোলনের চরিত্র বদলেছে। ধারাবাহিক লড়াইয়ের বদলে সহিংস রাজনীতির প্রবণতা বেড়েছে।''
পুলিশকে আক্রমণের ঘটনার সমালোচনা হচ্ছে সব মহলে, জানিয়েছেন সাবেক আইপিএস নজরুল ইসলাম। একইসঙ্গে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বিরোধীরা অনেক ক্ষেত্রে সভা করার অনুমতি পাচ্ছে না। পেলেও সেখানে হামলার অভিযোগ উঠছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্ব।''