নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে খারিজ হওয়ার পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিহীনতার একটি নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে৷ ডয়চে ভেলে এ বিষয়ে কথা বলেছে বিশিষ্ট বিরোধী নেতা ইমরান খানের সঙ্গে৷
বিজ্ঞাপন
ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে নবাগত বলা চলে৷ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন খান নব্বই-এর দশকের শেষের দিকে রাজনীতিতে আসেন ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বা ‘ন্যায়ের জন্য আন্দোলন’ দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷
ইমরান খানকে পাকিস্তানের চিরকালের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে গণ্য করা হয়৷ তাঁরই নেতৃত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে প্রথমবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে৷ খানকে রাজনীতিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিছুটা সময় দিতে হলেও, আজ তিনি পাকিস্তানি রাজনীতির প্রাঙ্গণে একজন ‘কি প্লেয়ার’৷
খানের পিটিআই দল ২০১৩ সালের মে মাসের সংসদীয় নির্বাচনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে; আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশও তাঁর দলের শাসনে৷ তিনি চান যে, ইসলামাবাদ সরকার মার্কিন প্রশাসনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াশিংটনের সঙ্গে জোট সহযোগিতা খণ্ড করে তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি) গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুক৷
খানের পিটিআই দলের কর্মসূচি পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি বড় অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য, কেননা খান দুর্নীতি প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক জবাবদিহিতা প্রভৃতি প্রসঙ্গের উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকেন৷
ডয়চে ভেলে: নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অনুপযোগী ঘোষিত হওয়ার পর পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে৷ তাদের এই উদ্বেগ কি যুক্তিযুক্ত?
ইমরান খান: ঐ উদ্বেগ পুরোপুরি অযৌক্তিক, কেননা পাকিস্তান গণতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে৷ গণতন্ত্রের ধারক হলো স্বচ্ছতা, নেতৃবর্গের জবাবদিহিতা, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, নিরপেক্ষ মিডিয়া ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগ৷ সব ক'টি উপাদানই পাকিস্তানে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে, বলে আমি দেখতে পাচ্ছি৷ গণতন্ত্রের পরিবর্তে পাকিস্তানে এতদিন চৌর্যতন্ত্র চলেছে৷ কিন্তু এখন অবস্থার উন্নতি ঘটছে৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে কালো টাকা সাদা করা, দুর্নীতি ও নথি জাল করার দায়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে৷
কিছু কিছু মানুষ শুধু টাকা করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা পাবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন৷ যখনই সেনাবাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে, তখনই জনগণ হর্ষ প্রকাশ করেছে৷ কিন্তু এবার সেনাবাহিনী সক্রিয় হচ্ছে না৷ আমার মতে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর গণতন্ত্র আরো জোরদার হবে৷ যিনিই ক্ষমতায় আসুন, দুর্নীতিতে লিপ্ত হবার আগে তিনি দু'বার ভেবে দেখবেন৷
পাকিস্তানের উদারপন্থিরা ছাড়া পশ্চিমের বহু রাজনৈতিক ভাষ্যকারও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের অপসারণকে একটি ‘বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান' বলে অভিহিত করেছেন৷ দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনী শরিফকে বিতাড়নের জন্য আপনাকে ও আপনার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে ব্যবহার করেছে, এমনই ধারণা তাদের৷ এ বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
ওটা একটা রসিকতা৷ আমি জানি না কারা নিজেদের উদারপন্থি বলে আর এ ধরনের বোকা বিবৃতি দেয়৷ প্রথমত, শরিফের নিজের হাতে এই সেনাপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন; এছাড়া মাত্র গত ডিসেম্বর মাসে শরিফ পকিস্তানের চিফ জাস্টিসের নিয়োগকে সহর্ষ অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
এরা দু'জনে মিলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান করতে যাবেন কী কারণে?
যেসব নেতা-নেত্রীকে লক্ষ্য করে জুতা ছোঁড়া হয়েছে
ক্ষোভ প্রকাশের উপায় হিসেবে জুতা ছোঁড়া যেন বেশ জনপ্রিয় একটি উপায়৷ গত কয়েকবছরে এমন অনেক খবরই এসেছে গণমাধ্যমে৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকমই কিছু ঘটনা৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
রাহুল গান্ধী
কংগ্রেস নেতা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর পুত্র রাহুল গান্ধীকে লক্ষ্য করে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জুতা নিক্ষেপ করা হয়৷ ঘটনাটি ঘটে উত্তর প্রদেশে৷ তবে রাহুল গান্ধীকে আঘাত করার আগেই এক নিরাপত্তারক্ষী জুতাটি ধরে ফেলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মনমোহন সিং
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-ও একবার এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন৷ ২০০৯ সালে আহমেদাবাদে তাঁকে উদ্দেশ্য করে জুতা ছোড়া হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতের আরো কয়েকজন
ভারতের আরো কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও বিভিন্ন সময় এমন আকস্মিক জুতা-হামলার শিকার হয়েছেন৷ ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, বিহারের নিতীশ কুমার, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও বিজেপি নেতা এল কে আদভানির নামও রয়েছে এই তালিকায়৷
ছবি: picture alliance/Anil Shakya
হিলারি ক্লিনটন
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে জুতা ছোঁড়া হয়েছিল ২০১৪ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Angerer
পারভেজ মুশাররফ
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়া হয়েছিল ২০১৩ সালে৷
ছবি: Reuters
মাহমুদ আহমাদিনেজাদ
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদও বাদ যাননি৷ ২০১৩ সালে কায়রোয় তাঁর দিকে জুতো ছুড়ে মারা হয়৷ আহমাদিনেজাদ তখন মিশর সফর করছিলেন৷
ছবি: Getty Images
এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশ
২০০৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়ে মারেন ইরাকের এক সাংবাদিক৷ জুতো মারার সব ঘটনার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
7 ছবি1 | 7
শরিফ পানামা পেপার্স বা পানামা লিক নামের একটি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকেও ব্যাখ্যা করতে হয়েছে, পানামা লিকে তাঁর নাম ঢুকল কী করে? আমরা, পাকিস্তানের বিরোধীদলেরাও শরিফের কাছে তাঁর আয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছি, বিশেষ করে যখন সেই আয়ের সঙ্গে একাধিক অফশোর কোম্পানি সংশ্লিষ্ট যারা দৃশ্যত লন্ডনে একাধিক বিলাসবহুল আবাসনের মালিক৷
সুপ্রিম কোর্টের দু'টি বেঞ্চ যে সব প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে, শরিফ তার জবাব দিতে পারেননি৷ বিষয়টির তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা গঠিত জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিটি (জেআইটি)-র কাছেও শরিফ তাঁর আয়ের উৎস প্রমাণ করতে পারেননি৷ (প্রমাণ দেখাতে) ব্যর্থ হবার পর উনি আদালতের কাছে ওনার আয়ের উৎস সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছেন৷ উনি জাল নথিপত্র দাখিল করেছেন৷ কাজেই এটাকে বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান বলাটা কীভাবে সম্ভব?
বস্তুত ইতিহাসে এই প্রথমবার আমরা পাকিস্তানের চিফ অফ আর্মি স্টাফকে দু'বার প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করতে শুনেছি যে, সেনাবাহিনী পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সমর্থন করে৷ (পশ্চিমি) বিশ্লেষকরা যা বলছেন , তা দুর্নীতি মামলায় ধরা পড়ার পর নওয়াজ শরিফের অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়৷
আপনার দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ছিল শুধু রাজনীতিকদের লক্ষ্য করে৷ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের দুর্নীতি বা দেশের শিল্পসংস্থাগুলির দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনি কোনো আন্দোলন শুরু করেননি কেন?
জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ক্ষমতায় থাকাকালীন আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি৷ মুশাররফের আমলে আমিই ছিলাম একমাত্র রাজনীতিক, যাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল৷ আমি যে ওদের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলিনি, তা সত্য নয়৷ কিন্তু বর্তমানে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক সরকার আছে, সেই সরকারপ্রধান, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী হলেন ওদের (আর্মি জেনারেলদের) কাছে জবাবদিহি চাওয়ার মূল কর্তৃপক্ষ৷
আমি জেনারেলদের জবাবদিহিতা দাবি করব কি করে, যখন দেশের মুখ্য প্রশাসনিক ক্ষমতা একজন বেসামরিক ব্যক্তির উপর ন্যস্ত? কাজেই আমি সেই মুখ্য প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধেই অভিযান চালিয়েছি, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন৷
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সামরিক একনায়ক পারভেজ মুশাররফ একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, মিলিটারি জেনারেলদের চেয়ে রাজনীতিকরাই পাকিস্তানের বেশি ক্ষতি করেছেন৷ মুশাররফের বিরুদ্ধেও আদালতে একাধিক মামলা ঝুলছে৷ কিন্তু সে সব মামলা সম্বন্ধে আপনি অথবা আপনার দলের কর্মকর্তারা বিশেষ কিছু বলেন না কেন?
জেনারেল মুশাররফ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আমি তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছি৷ আসিফ আলি জরদারি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন আমি তাঁকে মুশাররফকে দায়ী করতে বলেছিলাম কেননা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন – কিন্তু জারদারি কোনো আগ্রহ দেখাননি৷ আপনাদের যে প্রশ্নটা করা উচিত, সেটা হলো: শরিফ মুশাররফের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি কেন?
আফগানিস্তানে ক্ষমতার অন্তহীন লড়াই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান হামলার ১৬ বছর পরও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাসের কবল থেকে রেহাই পায়নি৷ কূটনৈতিক এলাকায় সাম্প্রতিক হামলাই বলে দিচ্ছে, জঙ্গিরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
কাবুলের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকায় হামলা
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ৩১ মে ভয়ঙ্কর ট্রাক বোমা হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে৷ এবার জঙ্গিরা হানা দিয়েছে কাবুলের ‘গ্রিন জোনে’ অবস্থিত অত্যন্ত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায়৷ হামলায় জার্মান অ্যাম্বাসিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন তালেবান এবং আইএস অতীতে এই শহরে বড় হামলাগুলো করেছিল৷
ছবি: REUTERS/O. Sobhani
অতীতের পুনরাবৃত্তি
কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় এই হামলা দীর্ঘ ধারাবাহিকতারই পুনরাবৃত্তি৷ এর আগে মে মাসেই আইএসের বোমা হামলায় ৮ বিদেশি সৈন্য প্রাণ হারায়৷ এর আগে মার্চে কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় আফগান সামরিক হাসপাতালে হামলায় রোগী-ডাক্তার-নার্সসহ ৩৮ জন নিহত এবং ৭০-এর বেশি আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
মরিয়া আক্রমণ
গত এপ্রিলে আফগানিস্তানের তালেবানরা সে দেশে থাকা যৌথ বাহিনী এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়৷ জঙ্গি সংগঠনটি বলছে, চলতি বছর তারা আক্রমণের কৌশল বদলেছে৷ ২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত মোল্লাহ আখতার মনসুরের নামে তারা এর নাম দিয়েছে, ‘অপারেশন মনসুর’৷
ছবি: Reuters
ট্রাম্পের আফগান নীতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তার আফগান নীতি ঘোষণা করেননি৷ আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলিম্যান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ট্রাম্পের আফগান নীতি অনেক ক্ষেত্রেই ওবামা প্রশাসনের মতোই হবে৷ তাঁর মতে, ওবামার মতো ট্রাম্পও হয়ত তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সমঝোতার ধারণার পথেই হাঁটবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Ernst
আফগান শান্তি প্রক্রিয়া
কিন্তু তালেবানরা শান্তি আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই জঙ্গি দল সমঝোতার পথে হাঁটবে বলে মনে হচ্ছে না৷ এখন যুদ্ধেই তাদের পূর্ণ মনোযোগ৷ ২০০১ সালের পর এরা এখন সবচেয়ে বেশি জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানি সহায়তা
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত বছর বলেছিলেন, পাকিস্তান তালেবানকে সমঝোতার টেবিলে আনবে বলে আর আশা করা যাচ্ছে না৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামাবাদ তালেবানকে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রভাব কমাতে ব্যবহার করছে৷ পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান) সাবেক মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান সম্প্রতি ধরা পড়েন৷ তালেবানের ভারত সহায়তা দিচ্ছে– এমন অভিযোগ করার পর ইসলামাবাদ তাকে মাফ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Muslim
যুদ্ধবাজ নেতাদের ভূমিকা
তালেবান ছাড়াও আফগানিস্তান জুড়ে রয়েছে নানা গোষ্ঠিগত ও আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ নেতা৷ আফগান রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে হেজবি ইসলামির নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার ২০ বছর পর এ বছরের মে মাসে কাবুলে ফিরে আসেন৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান সরকার তার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল৷ এতে অন্যান্য যুদ্ধবাজ নেতা ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সরকারের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে উৎসাহী হবে বলে আশা করেছিল সরকার৷
ছবি: Reuters/O.Sobhani
রাশিয়ার স্বার্থ
বহু বছর নিরাপদ দূরত্বে থাকার পর রাশিয়া আবার আফগানিস্তানে তার যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছে৷ কিন্তু এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, রাশিয়া আর আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে চাচ্ছে না৷ গত কয়েক মাসে চীন, পাকিস্তান ও ইরানকে সাথে নিয়ে রাশিয়া বেশ কয়েকটি আফগান-সম্মেলনও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/A. Druzhinin/RIA Novosti
অদক্ষ সরকার
ক্ষমতার এই অন্তহীন লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট গনির সমর্থন কেবলই কমছে৷ ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারে থাকা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সন্ত্রাস দমনের লড়াইকে দুর্বল করে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
9 ছবি1 | 9
শরিফ যখন ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন তিনি মুশাররফকে দায়ী করার কথা বলতেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি কিছুই করেননি৷ আমরা তাঁকে বলতে শুনতাম যে, তিনি মুশাররফ আর জরদারিকে দায়ী করবেন – কিন্তু ও সব ছিল শুধু মুখের বুলি৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আপনি পশ্চিমের সঙ্গে – বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক কামনা করবেন?
আমার মতে পাকিস্তানের সবসময়েই সুসম্পর্ক থাকা উচিত, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে – অর্থাৎ ইরান, আফগানিস্তান, ভারত ও চীন – তারপর পশ্চিমের সঙ্গেও সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা দরকার৷ আমরা চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই কেননা পাকিস্তানের সমৃদ্ধি নির্ভর করছে চীনের উপর৷ বেইজিং তার চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে৷
ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের মুখ্য বাণিজ্যিক সহযোগীদের মধ্যে গণ্য এবং আমি তাদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সমর্থন করব৷
আপনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালেবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা কামনা করেন, যে জন্য অনেকে আপনার সমালোচনা করে থাকে৷ আপনি সন্ত্রাসী আক্রমণের জন্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলির নিন্দা করতে প্রস্তুত নন এবং ঐ সব আক্রমণের জন্য আফগানিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপকে দায়ী করে থাকেন৷ আপনি কি সত্যিই মনে করেন না যে, পাকিস্তানের সামরিক মহল আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে কিছু ইসলামপন্থি গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে, অথবা পাকিস্তানে ইসলামি কার্যকলাপের প্রসঙ্গটি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লেষের চেয়ে অনেক বেশি পুরনো?
এগুলো শুধু তাদের অভিযোগ, যারা জিহাদি আন্দোলন বা তালেবান অথবা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে কি ঘটছে, সে ব্যাপারে কিছু বোঝে না৷
সামরিক সমাধান ব্যর্থ হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে চায়, কেননা ওয়াশিংটন সামরিক পন্থায় আফগানিস্তানে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করতে পারেনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার খরচা করেও সাফল্য পায়নি৷
এবং আপনারা জানেন যে, সোভিয়েত অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ও মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টলিজেন্স এজেন্সি মিলে এই জিহাদি সংগঠনগুলোকে সৃষ্টি করে৷
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়া পর পাকিস্তান এই জিহাদি সংগঠনগুলিকে নিয়ে একা পড়ে থাকে৷ নাইন-ইলেভেনের আক্রমণের পর ওয়াশিংটন এই জিহাদি গোষ্ঠীগুলিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের ধাওয়া করতে শুরু করে – ঠিক যে মানুষগুলোকে ওরা একদিন ‘হিরো’ বলে বাহবা জানিয়েছিল৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
পাকিস্তান এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে একটি ‘ফ্রন্টলাইন স্টেট’ হয়ে দাঁড়ায়৷ পাকিস্তানকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে; আমরা এই যুদ্ধে ৭০,০০০ মানুষ হারিয়েছি, যদিও এই যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই৷ আমার মতে আমাদের এই যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত৷
সবশেষে আপনি ভারতের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক চান? পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের চেষ্টা করলেই তিনি সামরিক মহলের রোষে পড়েন, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ আপনি কি মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হলে আপনি পাকিস্তানের বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা নীতি পুরোপুরি বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন?
ওটা স্রেফ প্রোপাগান্ডা৷ অতীতে হয়ত তা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু আজ পাকিস্তানের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে শান্তি বিরাজ করা উচিত৷ সকলেই জানে যে, ভারতে এখন এক হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদী, নরেন্দ্র মোদী শাসন করছেন৷ ওঁর একমাত্র কর্মসূচি হলো পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা৷ এভাবে আমরা শান্তি স্থাপন করতে পারি না৷ ভারতে যা কিছু ঘটুক, মোদী তার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেন৷ উনি কখনো শান্তি প্রক্রিয়ায় সামিল হবার কথা ভাবেন না, শুধু তাকে বানচাল করতে চান৷
এছাড়া উনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনা দেবার অভিযোগ করে থাকেন, কিন্তু তা সত্য নয় কেননা মোদী সরকার স্বয়ং একটি স্থানীয় আন্দোলনের বিরুদ্ধে নির্মম সহিংসতা প্রয়োগ করছেন৷ সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ঐ একই রাজনৈতিক দল বিজেপি-র সদস্য হলেও, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি সবসময় শান্তির ধাণাটিকে সমর্থন করে এসেছেন৷
ইমরান খান পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট বিরোধী রাজনীতিক৷ তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা৷ রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ক্রিকেট তারকা হিসেবে স্বদেশে ও বিদেশে সুপরিচিত ছিলেন৷
শাহ মীর বালোচ, শামিল শামস/এসি
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷