দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিতে পারে৷ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে নকল পাকে প্রায় শরীরের অংশ হয়ে উঠতে পারে৷ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্থেসিস প্রায় নিখুঁত হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
দিনটা ছিল ২০১৬ সালের ১৬ই জুন৷ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর ডিটার ক্লাউস-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ডাক্তাররা তাঁর বাঁ পায়ের আঘাত সারাতে পারেননি৷ ফলে তাঁর জীবন আমূল বদলে গেলো৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডিটার বলেন, ‘‘জ্ঞান ফিরলে কী হবে, তা আমি আগে থেকেই জানতাম৷ প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ খুবই কঠিন ছিল৷ তবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব পাশেই ছিল৷ তারা আমাকে খুবই সাহায্য করেছে৷ তারপর কৃত্রিম পা পেয়ে অবস্থা মেনে নিলাম৷ এখন সবকিছু ভালো চলছে৷’’
অ্যাম্পুটেশন বা অঙ্গচ্ছেদের চার সপ্তাহ পর নকল পা বসানো হয়েছে৷ তারপর লুডভিগসহাফেন শহরের হাসপাতালের ল্যাবে অনুশীলন চলছে৷ ডিটার-এর সারা শরীরে স্টিকার দিয়ে নানা চিহ্ন লাগানো হয়েছে৷ ‘অপটিকাল ট্রেনিং'-এর জন্য এগুলি খুব জরুরি৷ দু'টি সাধারণ ভিডিও ক্যামেরা ও আটটি ইনফ্রারেড ক্যামেরার এক সিস্টেম সেই মার্কারগুলির অবস্থান নিখুঁতভাবে শনাক্ত করে চলে৷
ডাকিনিবিদ্যার জন্য তাদের হাত-পা কাটা হয়
তাঞ্জানিয়ার চার আলবিনো শিশু যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছে৷ তারা ‘ডাকিনিবিদ্যা’র শিকার হয়েছিল৷ ‘আলবিনিজম’ রোগে আক্রান্তদের আলবিনো বলা হয়৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
মেলানিনের অভাব
লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘স্ট্যান্ডিং ভয়েস-’এর হিসেবে, তাঞ্জানিয়ার কিছু অংশে প্রতি ১,৪০০ জনের একজন ‘আলবিনিজম’ রোগে আক্রান্ত৷ এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে জিন সমস্যার কারণে মেলানিন উৎপাদিত হয় না৷ ফলে তাদের চামড়া ও চুলের রং সাদা হয়ে থাকে৷ আর চোখের রং হয় গোলাপি৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
কুসংস্কারের শিকার
ডাকিনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতদের কাছে এই রোগে আক্রান্তদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেশ উপকারী৷ তাদের ধারণা, আলবিনোদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জাদুকরী ক্ষমতা অনেক বেশি৷ ফলে প্রায়ই আলবিনোরা হামলার শিকার হন৷ ছবিতে তাঞ্জানিয়ার তিন আলবিনো শিশুকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
জীবন্ত অবস্থায় কেটে ফেলা হয়
ডাকিনিবিদ্যার সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন, জীবিত অবস্থায় আলবিনোদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের সময় তারা যত জোরে চিৎকার করে, ততই ঐ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর ক্ষমতা বাড়ে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
বিশ্বব্যাপী আলবিনোদের সংখ্যা
‘স্ট্যান্ডিং ভয়েস’-এর হিসেবে বিশ্বের প্রতি ১৮ হাজার জনের একজন আলিবিনিজমে আক্রান্ত৷ তবে সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি৷ সেখানে তারা নানারকম বৈষম্যের শিকার হন৷ আলবিনো সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ছেড়ে দেন৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
হামলার পরিসংখ্যান
জাতিসংঘের হিসেবে, ২৬টি দেশে আলবিনোদের উপর ছয়শ’র বেশি হামলা হয়েছে৷ আর ‘স্ট্যান্ডিং ভয়েস-’এর হিসেবে, ২০০৬ সাল থেকে তাঞ্জানিয়ায় ৭৬ জন আলবিনোকে হত্যা করা হয়েছে৷ এছাড়া ৭৩টি হামলার শিকার হয়েছেন তারা৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা
তাঞ্জানিয়ায় হামলার শিকার চার আলবিনো শিশুকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷ তাদের শরীরে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লাগানো হয়েছে৷ নিউইয়র্কভিত্তিক ‘গ্লোবাল মেডিকেল রিলিফ ফান্ড’ তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রেসিডেন্ট হতে চায়
ছবিতে ১৪ বছরের মিগুলু মাগেসাকে দেখতে পাচ্ছেন৷ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে সে তার দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে৷ চিকিৎসা নেয়া ১৫ বছরের এমানুয়েল রুতেমা হতে চায় ডাক্তার৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
7 ছবি1 | 7
ফলে ডাক্তাররা ১৫ মিটার দীর্ঘ ট্র্যাকে রোগীর শরীরের নড়াচড়ার উপর নজর রাখতে পারেন৷ এ ভাবে ডিটার-এর এক ত্রিমাত্রিক লাইভ মডেল সৃষ্টি হয়৷ শল্য চিকিৎসক আড্রিয়ান হোগান বলেন, ‘‘আমরা ৩টি স্তরে জয়েন্ট অ্যাঙ্গেল ফুটিয়ে তুলতে পারছি৷ জয়েন্টের উপর শক্তি পরিমাপ করতে পারি৷ অবতার এবং লর্ড অফ দ্য রিংস-এর মতো চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের কাজে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, এটাও প্রায় একইরকম৷’’
তবে চলচ্চিত্রের মতো এ ক্ষেত্রে কোনো কৃত্রিম প্রাণী সৃষ্টি করা হয় না৷ নকল পা নিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটা যায়, সেটাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য৷
ডাক্তাররা বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে দেখেন, যেমন হিপ মুভমেন্ট, হাঁটার সময় অক্ষত পায়ের ছন্দ, আসল ও নকল পায়ের হাঁটুর অ্যাঙ্গেলে তফাত আছে কিনা ইত্যাদি৷ আড্রিয়ান হোগান বলেন, ‘‘এই সব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নির্দিষ্ট থেরাপির পরামর্শ দিতে পারি৷ কোন ধরনের নকল পা কোন রোগীর জন্য উপযুক্ত, তা বলতে পারি৷ শুধু দৈনন্দিন জীবন নয়, পেশাগত জীবনেও সেই নকল পা চালু থাকতে হবে৷ তাছাড়া সেই কৃত্রিম অঙ্গ আর্থ্রাইটিস, বাড়তি চাপ বা শরীরের অন্য কোনো অংশের ক্ষতির কারণ হলে চলবে না৷ রোগীর জীবনে দুঃখ এড়াতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এটা যতটা সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে৷ মোটকথা এই সব বিষয় বিবেচনা করতে হবে৷ একটি অংশ সামলাতে শরীরের অন্য অংশে চাপ সৃষ্টি করলে চলবে না৷’’
ডিটার ক্লাউস ল্যাবে একাধিক নকল পা পরখ করে দেখছেন – কখনো ক্রাচ নিয়ে, কখনো ক্রাচ ছাড়াই৷ একাধিক মডেলের মধ্যে পার্থক্য কী?
শারীরিক ভারসাম্যহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার ৮ উপায়
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হয়, পা দু’টো একটু নড়ে৷ কিংবা অল্পতেই ঢলে পড়ে যায়৷ এরকম শারীরিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে৷ জেনে নিন, এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু সহজ উপায়৷
ছবি: Fotolia/M. Schlecht
শিশুকালেই শুরু
এক সমীক্ষায় জানা গেছে, জার্মানিতে প্রথম স্কুলে যাওয়ার জন্য শিশুদের যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় তাতে শতকরা ৫০ ভাগ শিশুরই ভারসাম্য বা সোজা হয়ে হাঁটা-চলায় কম-বেশি সমস্যা ধরা পড়ে৷ এরকম শিশুদের যেমন রাস্তায় একা ছাড়া উচিত নয়, তেমনি এদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়াও জরুরি৷
ছবি: MTV Köln/O. Edelmeier
কেন হয়?
জার্মানির শরীরচর্চা সমিতির প্রধান ডা. ডিটার ব্রাইটহেকার জানান, হাঁটা-চলা কম করায় শরীর জড়োসড়ো এবং কুকড়ে যায়৷ আর এর ফলে পরে সোজা হয়ে দাড়ানো বা হাঁটাও একসময় কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: DW
সোজা হয়ে হাঁটুন
প্রথমেই কয়েক মিটার লম্বা একটি সুতো বা ফিতে ফ্লোরের ওপর টেপ দিয়ে আটকে নিন৷ তারপর একদম সোজা তার ওপর দিয়ে হেঁটে যান৷ অসুবিধা হচ্ছে? এঁকে-বেঁকে যাচ্ছেন ? নিজেকে শক্ত রেখে আবার উল্টো দিকে ফেরত যান৷ নিয়মিত এভাবে করলে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে৷
ছবি: Fotolia/Arsgera
পেশি শক্ত করতে যা করবেন
পেশি শক্ত হলেই ভারসাম্য ফিরে আসবে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে৷ বিশেষ করে এক্ষেত্রে ছোট-বড় সকলেরই সাইকেল চালানো উচিত, কারণ, আমরা জানি সাইকেল চালানো শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য একটি সহায়ক ব্যায়াম৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
ট্রাম্পলিন
বাড়িতে একটি মিনিট্রামপোলিন বা বাতাসভরা একটি বড় বালিশে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে অনুশীলন করুন৷ উপকার পাবেন অবশ্যই৷
ছবি: Fotolia/M. Schlecht
ট্রেন বা বাসে
চলন্ত বাস বা ট্রেনে উঠে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন৷ যানটি আঁকাবাঁকা পথে যাওয়ার সময় নিজেকে সোজা রাখার চেষ্টা করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
প্র্যাকটিস
তাছাড়াও আপনি যখন সকাল এবং রাতে দ্রাত ব্রাশ করেন কিংবা এমনিতেই কখনো দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন কিছুক্ষণ চোখ দুটো বন্ধ করে রাখুন৷এভাবে প্র্যাকটিস করলে দেখবেন ভারসাম্য ফিরে আসছে, পা দুটোতে জোর পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Büttner
সহজ অনুশীলন
চেয়ার বা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় কোনো সাপোর্ট ছাড়া বা কিছু না ধরে ওঠার চেষ্টা করবেন৷ কিছুটা সতর্ক হয়ে ওপরের নিয়মগুলো একটু মেনে চললে ছোট-বড় সকলেই ভারসাম্যহীনতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন৷ এসব কথা জানান ডা. ডিটার ব্রাইটহেকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Reinhardt
8 ছবি1 | 8
‘হলিউডি' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর নিজস্ব উপলব্ধির সঙ্গে তাঁর মুভমেন্টের নিখুঁত বিশ্লেষণ তুলনার সুযোগ থাকে৷ কাটা যাওয়া পায়ের হাঁটুর জয়েন্টের বিকল্প হিসেবে এমন এক নকল পায়ের প্রয়োজন রয়েছে, যা পাটিকে সঠিক অ্যাঙ্গেলে ভাঁজ করতে পারে, সামনে চলা সম্ভব করতে পারে এবং শক্তি প্রয়োগ করে পা তুলতে পারে৷ এই প্রযুক্তি ছাড়া সে সব বিষয় পরীক্ষা করা কার্যত অসম্ভব৷
এমন মডেলের মূল্য প্রায় ৫০,০০০ ইউরো অথবা তারও বেশি হতে পারে৷ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় হাঁটুর জয়েন্টের কাজ করতে পারে এই নকল পা৷ রোগীর হাঁটা বিশ্লেষণ করে সেই তথ্য ব্লুটুথ পদ্ধতির মাধ্যমে তাতে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব৷ ডিটার ক্লাউস বলেন, ‘‘প্রত্যেক নকল পায়ের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ প্রত্যেকটি নিয়ে আলাদা করে হাঁটতে শিখতে হয়৷ তবে এইটি পেয়ে আমি থেমে গেলাম৷ কারণ এটির মধ্যে সব সম্ভাব্য গুণাগুণ রয়েছে৷ এই নকল পা নিয়ে আমি আবার সমাজের অংশ হতে পারি৷’’
স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটা, ধীরে বা দ্রুত হাঁটা, নিরাপদে হাঁটা – ডিটার চ্যালেঞ্জ সামলে সবকিছু ভালোভাবে রপ্ত করেছেন৷ ল্যাবে ‘মোশন ক্যাপচার'-এর মাধ্যমে নকল পা আরও প্রস্তুত করে তোলার পর ডিটার নিরাপদে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন৷
দুর্ঘটনার প্রায় এক বছর পর নকল পা কার্যত তাঁর শরীরের অংশ হয়ে উঠেছে৷ অথচ শুরুতে তাঁর প্রত্যাশা ছিল খুবই সীমিত৷ আজ তিনি এর সাহায্যে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন৷