1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নকল পোশাক রপ্তানি: পোশাক শিল্পে অশনিসংকেত

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নকল পোশাক রপ্তানির একটি আন্তর্জাতিক চক্র আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা৷

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেল
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স নকল পোশাক রপ্তানির যে অভিযোগ করেছে তার সঙ্গে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কোনো সদস্য জড়িত নয়, বলছেন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মালিকরা৷ছবি: Lars Halbauer/picture alliance

তারা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স নকল পোশাক রপ্তানির যে অভিযোগ করেছে, তার সঙ্গে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর কোনো সদস্য জড়িত নয়৷

তাদের কথা, বাংলাদেশের কিছু ছোট প্রতিষ্ঠান, যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে, তাদের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে৷ বিজিএমইএ এই বিষয়ে তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দুইটি প্রতিষ্ঠান যে অভিযোগ করেছে, সে ব্যাাপারে ১৩ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে বলে জানান বিকেএমইএর নির্বাহী সভপাতি মোহাম্মদ হাতেম৷  

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দুইটি প্রতিষ্ঠান পোশাকের ডিজাইন হুবহু নকলের অভিযোগ করেছে৷ ওই সব পণ্য অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা৷ যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থি৷

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) ওই অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পর্যালেচনা শুরু করে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে জবাব চেয়েছে৷ বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রাথমিক জবাব দিয়েছে৷

এটা কোনোভাবেই আমাদের বিজিএমইএর সদস্যরা করেন না: শহীদুল্লাহ আজিম

This browser does not support the audio element.

নকল পোশাক কারা রপ্তানি করে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা কোনোভাবেই আমাদের বিজিএমইএর সদস্যরা করেন না৷ এটা হতে পারে কোনো লোকাল ফ্যাক্টরি যারা সাবকণ্ট্রাক্টে কাজ করে তারা করতে পারেন৷’’

তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশে যারা পোশাক তৈরি করেন, তাদের ক্রেতারাই পোশাকের ডিজাইন সরবরাহ করে৷ তাদের দেয়া ডিজাইন ও মান অনুযায়ী পোশাক তৈরি করে সরবরাহ করা হয়৷ তবে আজকাল বাংলাদেশের কিছু কিছু নিজস্ব ডিজাইনের পোশাকও রপ্তানি হচ্ছে৷ যারা ডিজাইন দেয় ওই ডিজাইনে শুধু তাদের জন্যই পোশাক তৈরি করা হয়৷’’ কিন্তু এগুলো চেক করার বা কেউ ওই ডিজাইন কপি করে অন্যদের সরবরাহ করছে কিনা তা নিয়ন্ত্রণ বা মনিটর করার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নাই বলে তিনি জানান৷ আর যারা অর্ডার করেন, তাদের ডিজাইন তাদের দেশে পেটেন্ট করা৷ তিনি বলেন, ‘‘যেসব বড় বড় ক্রেতা, যেমন টমি, ডিজাইন পাঠায়, তারা কখনো ডিজাইন নকল করে না৷ কারণ, তাদের দেশে আইন কড়া৷ আমাদের এখান থেকেই কেউ কেউ করে থাকতে পারে৷’’ তার কথা, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পর এটা নিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েকদফা বৈঠক করেছি৷সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি নির্দিষ্ট ফরমে কোনো দেশের ডিজাইন, কাদের ডিজাইন, কোন দেশের কারা পোশাক নেবে, তাদের কপিরাইট- সব কিছু উল্লেখ থাকতে হবে৷ একটি ফরমে এসবের ডিক্লারেশন দিতে হবে৷ সেটা ভেরিফাই করা হবে৷’’

‘‘তবে যে দেশে পোশাক যায়, তাদের কাস্টমস বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব আছে দেখার যে, কোনো নকল পোশাক সেখানে গেল কিনা৷ আর বাংলাদেশ সরকারেরও বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব এটা দেখার৷ আমরা বিজিএমইএ এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি,’’ বলেন এই পোশাক শিল্প নেতা৷

নকল পোশাক গেল কিনা তা চেক করার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেই: মোহাম্মদ হাতেম

This browser does not support the audio element.

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে নকল পোশাক গেল কিনা তা চেক করার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেই৷ কে, কী বানিয়ে কার্টনে ভরে পাঠালো তা চেক করা এখনকার ব্যবস্থায় কঠিন৷’’

তার কথা, ‘‘সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আসেনি৷ একটা কমন অভিযোগ করা হয়েছে৷ এখন তদন্তে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে৷ কিন্তু কোনো একটি বা দুইটি প্রতিষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশের পুরো পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মনে হয় না৷’’

নকল পোশাক রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক চক্র?

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘‘নকল পোশাক তৈরি এবং রপ্তানির একটি আন্তর্জাতিক চক্র আছে৷ সেই চক্রে বাংলাদেশের ছোটখাটো কোনো প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকতে পারে৷ ফিলিপাইন্স ও দুবাইয়ে গেলে আপনি দেখবেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল পোশাক৷ ওই পোশাক গুলো কোথা থেকে যায়? এই নকল পোশাক তৈরির অভিযোগ এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠলো৷ একই অভিযোগ চীন, ফিলিপাইন্স, হংকং, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানের বিরুদ্ধেও আছে৷’’ তিনি জানান, ‘‘অ্যাডিডাস, পুমা, নাইকি, জারা এরকম আরো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পোশাক কপি করার একটি আন্তর্জাতিক চক্র আছে৷ এটার আন্তর্জাতিক ক্রেতাও আছে আবার কারখানাও আছে৷ ওইসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে যেমন পোশাক বানিয়ে নেয়, অন্য দেশ থেকেও নেয়৷ যে কোনো দেশ থেকে কপি হতে পারে৷’’

তি জানান, ‘‘মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন্সে নকল পোশাক বিক্রি হয়৷ একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান জরিপ করে দেখেছে যে, ওইসব পোশাক চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ও বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে৷’’

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের বিজিএমই এবং বিকেএমইএর কোনো সদস্য এর সঙ্গে জড়িত নয়৷ ছোটখাটো নদীর ওপারের গার্মেন্টস কারখানাগুলো এর সঙ্গে জড়িত৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ আসার পর সরকার এবং বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ সিরিয়াসলি নিয়েছে৷ কাউকে চিহ্নিত করা গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ কোনো অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশের পুরো পোশাক শিল্প হুমকির মুখে পড়ুক আমরা তা চাই না৷’’

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আগেও উঠেছে: ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের পোশাক

সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আগেও উঠেছে৷ এবার আনুষ্ঠানিবভাবে উঠলো৷ এ ব্যাপারে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই৷ উচিত হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই তদন্ত করে আগেই ব্যবস্থা নেয়া৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পোশাক এখন ব্র্যান্ডেড পণ্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে৷ এই পর্যায়ে যদি নকল হয় তাহলে শুধু আমাদের দেশের সুনামই ক্ষুন্ন হবে না৷ যেসব দেশে আমাদের পণ্য যায় সেইসব দেশের মানুষও মুখ ফিরিয়ে নেবে৷ আর পোশাক রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো এর সুযোগ নেবে৷ বাংলাদেশ এখন আপ মার্কেটে প্রবেশ করতে যাচ্ছে৷ এই রকম সময়ে যদি সুনাম ক্ষুন্ন হয় তাহলে ক্রেতারা আমাদের পোশাক নেয়া বন্ধ করে দিতে পারে৷’’

তার মতে, ‘‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে ডেভেলপিং কান্ট্রি হবে৷ তখন কপিরাইট আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ হবে৷ ফলে নকলের কারণে বিশেষ ক্যাটাগরির পণ্য নিষিদ্ধও হতে পারে৷ আমাদের নকলের বড় ধরনের মাশুল দিতে হতে পারে৷’’

সরকার যা করছে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) অণুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অভিযোগের ব্যাপারে আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি তা জানিয়েছি৷ ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিস্তারিত জবাব দেবো৷ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যাতে কোনো ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা৷’’

পোশাক শিল্প যাতে কোনো ক্ষতির মুখে না পড়ে সেজন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি: অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআইকে সতর্ক করেছি এখান থেকে যেন কোনো নকল পণ্য রপ্তানি না হয়৷ তাদের মনিটর করতে বলেছি৷ পোশাক খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত এখানে আমরা কোনো ক্ষতি হতে দেবো না৷’’

তার কথা, ‘‘আমাদের কপিরাইট আইন, ট্রেড মার্ক অ্যাক্ট আছে৷ তাতে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে৷ শান্তির বিধান আছে৷ ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইট এনফোর্সমেন্ট রুল আছে৷ কিন্তু যার কপিরাইট সে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়৷ আমরাও চেষ্টা করছি আর তাদেরও বলেছি তারা যদি চিহ্নিত করতে পারে কোন প্রতিষ্ঠান নকল পণ্য রপ্তানি করেছে আমাদের যেন জানায়৷ তাহলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে৷ আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও কাষ্টমস কর্তৃপক্ষও কাজ করছে৷’’

আর বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের কপিরাইট পরীক্ষক ফাতেমা পারভীন সুমা জানান, ‘‘আমাদের এখানে অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ব্যবস্থা নিই৷ কিন্তু নিজেদের উদ্যোগে কপিরাইট পরীক্ষা করা আমাদের কাজ নয়৷’’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়৷ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮২ ভাগেরও বেশি আসে এই খাত থেকে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকার৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৫৯ হাজার ৬২৪ কোটি ১০ লাখ টাকার পোশাক, যা মোট পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশের মতো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ