মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির কোনো জলাভূমি এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে অন্য কারোর ছিপের নাইলন সুতোয় জড়িয়ে পড়া একটি ছোট্ট পেঁচাকে বাঁচালেন এক – মহানুভব৷
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/AFP/G. Souvant
বিজ্ঞাপন
ইংরিজিতে বলে ‘স্ক্রিচ আউল’, বোধহয় খুব মিহি একটা চিঁ চিঁ আওয়াজ করে ডাকে বলে৷ একটা পাখা নাইলনের সুতোয় জড়িয়ে অসহায়ভাবে ঝুলছিল৷ তাকে ধরতে গেলে সে আবার পাখা ঝটপটিয়ে ঐ ঝোলা অবস্থাতেই গোল হয়ে ঘোরে – আর চিঁ চিঁ আওয়াজ করে ডাকে৷
মাথার ক্যামেরা বসিয়ে আমাদের মহানুভব অতি সন্তর্পণে ছোট্ট পেঁচাটিকে ধরলেন, শান্ত করলেন, তারপর নেইল ক্লিপার, মানে নখ কাটার ছোট্ট যন্ত্রটি দিয়ে পেঁচার পাখায় জড়ানো নাইলনের তারটি কাটতে শুরু করলেন৷
এক হাতে পাখিটিকে ধরে, নেইল ক্লিপার দিয়ে তার পাখার সরু হাড়ে জড়ানো সেই তেএঁটে নাইলনের সুতো কাটা প্রায় অসাধ্য৷ ওদিকে পাখিটার সাথে কথা বলে চলেছেন৷ পাখিটাও যেন বুঝতে পেরেছে, এ মানুষ আমার অপকার করবে না – বা হয়ত ঝিমিয়ে পড়েছে – কিংবা হয়ত পশুপাখিদের দুর্ভাগ্য, দুঃখ, ব্যথা-বেদনা মেনে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতার বলে স্রেফ চুপ করে রয়েছে...
‘ওরে, তুই মরে যাস না’ – আকুল হয়ে বলছেন তার ত্রাণকর্তা৷ তারপর এক হাতে সুতো কাটা সম্ভব নয় দেখে, পাখিটাকে মাটিতে রেখে দু'হাত ব্যবহার করে সুতোটা কেটে পাখার পালকগুলোকে মুক্ত করে দিলেন৷ পেঁচাটা উড়ে গিয়ে একটা ডালে বসল...
কিন্তু ডানাটা যে ঝুলে রয়েছে? আবার ধরে পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে কেমন হয়? ধরতে গেলেই পেঁচাটা জঙ্গলের ভেতর ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেশ কিছুদূর উড়ে গিয়ে অন্য একটা গাছে বসল, যেন বলছে, এখন আমি ভালো আছি...
কোথাও মুচকি হাসলেন ঈশ্বর৷
এসি/ডিজি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি বনাঞ্চল
হবিগঞ্জে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমিও এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুরুর কথা
প্রায় ১,৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে৷ তবে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে৷ পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বনটি সম্প্রসারণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়-টিলার সমন্বয়
সিলেট বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ীর বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত৷ বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে গঠিত এ বনাঞ্চল৷ এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি
দেখছেন মালায়ন বড় কাঠবিড়ালিকে৷ রামকোটা বা বড় কাঠবিড়ালি নামেও এটি পরিচিত৷ পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে বিরল প্রজাতির এই কাঠবিড়ালির একমাত্র বসবাস এই বনেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুখপোড়া হনুমান
এদের নাম ক্যাপড লিফ মাঙ্কি বা মুখপোড়া হনুমান৷ এছাড়াও ‘ফেরে’স লিফ মাঙ্কি’ বা চশমা হনুমান আর বিরল উল্লুকও আছে এই অভয়ারণ্যে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে কুলু বানর
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘নর্দান পিগ টেইলড ম্যাকেক’ বা কুলু বানরও দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়াও আছে বিরল প্রজাতির স্লো লরিজ বা লজ্জাবতী বানর৷
ছবি: DW/M. Mamun
পর্যবেক্ষণ টাওয়ার
অভয়ারণ্যের ভেতরে একটি টিলার উপরে আছে ছয়তলা পর্যবেক্ষণ বুরুজ৷ এই টাওয়ারের উপরে উঠলে বনের বিস্তীর্ণ সীমানা খালি চোখে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলাশয়
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের ভেতরে আছে বেশ কিছু জলাশয়৷ শুকনো মৌসুমে বনের ভেতরের পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলেও এসব জলাশয়ের জল বন্যপ্রাণীদের তেষ্টা মেটায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
গাছপালা সমৃদ্ধ
নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ ৬৩৮ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছপালা আর লতাগুল্ম পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
তিনটি ট্রেইল
রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের একটি ট্রেইলে বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী৷ এরকম তিনটি ট্রেইল ঘুরে প্রাণ-প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতিপ্রেমীরা৷ আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইলই ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো৷
ছবি: DW/M. Mamun
দামি প্রাণি
নাম ‘সাউথ এশিয়ান জায়ান্ট হাউস গেকো’ বা তক্ষক৷ গিরগিটি প্রজাতির ছোট্ট এই প্রাণীটি দেশি চিকিৎসায় বহুল ব্যবহার হয় বলে পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই গিরগিটিটি খুব চড়ামূল্যে বিক্রি ও পাচার হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস
কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মানুষের বাস আছে রেমা-কালেঙ্গা বনে৷ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি হলেও সাঁওতাল ও উড়ং জণগোষ্ঠীর লোকজনও আছেন সেখানে৷
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘গ্রেটার র্যাকেট টেইলড দ্রোঙ্গো’ বা বড় ভিমরাজ৷ এই অভয়ারণ্যে আছে প্রায় ১৬৫ প্রজাতির নানান পাখি৷
ছবি: DW/M. Mamun
কেমন দেখতে?
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘ব্ল্যাক ক্রেস্টেড বুলবুল’ বা কালো ঝুটি বুলবুলি পাখি৷ এই অভয়ারণ্যের আরো উল্লেখযোগ্য পাখি হলো ভিমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
থাকার ব্যবস্থা
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের পাশেই আছে নিসর্গ তরফ হিল রিসোর্ট৷ সেখানে পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়া বনের ভেতরে বন বিশ্রামাগারও আছে৷ তবে সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি
রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরে আছে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধি৷ ৩ নং সেক্টরের এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এখানেই শহিদ হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন
শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধির পাশেই বিশাল সেগুন গাছটির শরীরজুড়ে এখনো দেখা মেলে হানাদারদের সেদিনের গুলির চিহ্ন৷