অ্যামেরিকার নিউইয়র্কে একটি পার্কে কিছু ইঁদুরের বিবর্তন ঘটছে৷ তারা ঠিক শহুরে হয়ে উঠছে৷ তাদের জিনে হচ্ছে পরিবর্তন৷ এ নিয়ে কাজ করছেন এক বিবর্তন বিজ্ঞানী৷
বিজ্ঞাপন
মেট্রোপলিটন সিটি নিউইয়র্ক৷ সেখানকার শহুরে জীবন বদলে দেয় সবাইকে, এমনকি কিছু প্রাণী প্রজাতিকেও৷ বিবর্তন বিজ্ঞানী জেসন মুনসি-সাউথের গবেষণা এলাকা সেন্ট্রাল পার্কে৷ তিনি সাদা পায়ের ইঁদুরদের নিয়ে গবেষণা করছেন৷
১৮৭৩ সালে এই পার্কটি খুলেছে৷ এখানে এখনো প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যারা শহর তৈরির আগে থেকে থাকে এখানে৷
জেসন বলেন, ‘‘এই পার্কটা যেন দ্বীপপুঞ্জ৷ কনক্রিট, রাস্তা আর দালানকোঠার সাগরের মাঝে এই দ্বীপগুলোর অবস্থান৷ ৮৫ লাখ মানুষ থাকেন এখানে৷ তাই ইঁদুরের মতো প্রজাতিরা জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে দালান কোঠা, রাস্তা এসবের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না৷ ফলে তারা ঘুরে বেড়াতে বা ছড়িয়ে পড়তে পারে না৷ অন্যদের মাঝে তাদের জিন ছড়িয়ে দিতে পারে না৷ তাই একবার তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানে ছোট গ্যালাপ্যাগোসের মতো আচরণ করা এবং সম্ভবত অনেক প্রজাতির বিবর্তন ত্বরান্বিত করা, যেগুলো সেখানে আটকে আছে৷’’
এই জীববিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখছেন, সাদা পায়ের ইঁদুরগুলো একেক পার্কে একেক রকম হয়ে বেড়ে উঠছে কিনা৷
জঙ্গলটি বিগ অ্যাপল নামে পরিচিত নিউইয়র্ক শহর দিয়ে পরিবেষ্টিত৷ শহুরে ইঁদুরগুলো কি এই ভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে? তারা কি তাদের অন্য বন্ধুদের থেকে অনেক আলাদা? নিউইয়র্কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে একটি গ্রাম্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে বসে জেসন তুলনা করছেন৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এদের ডিএনএ৷
হাইব্রিড প্রাণী: প্রকৃতির ইচ্ছা, নাকি বিবর্তন?
লাইগার, টাইগ্রন এবং গ্রোলার বেয়ার – না, এমনিতেই এমন নাম দেয়া হয়নি তাদের৷ এরা হাইব্রিড প্রাণী৷ অর্থাৎ দুই প্রজাতির সমন্বয়ে তৈরি তারা৷
ছবি: Getty Images/Afp/Tiziana Fabi
প্রাণীদের দুনিয়ায় খামখেয়ালিপনা?
প্রায়ই হাইব্রিড প্রাণীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়৷ কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেও এটা ঘটে থাকে৷ বিশেষ করে এক প্রজাতির প্রাণী যখন অন্য কোথাও যায়, তখন সেখানকার প্রাণীদের সঙ্গে তাদের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়৷ তখন হাইব্রিড সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়৷
ছবি: imago/ZUMA Press
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাইব্রিড
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাওয়া এক প্রাণীর নাম গ্রোলার ভাল্লুক৷ ধুসরবর্ণের আর শ্বেত ভাল্লুকের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে এই ভাল্লুক৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্বেত ভালুক দক্ষিণের দিকে সরে গেছে, আর ধুসরবর্ণের ভাল্লুক সরেছে উত্তরে৷ এভাবেই তাদের মধ্যে ঘটছে মিলন৷
ছবি: Reuters/J. Urquhart
মুক্তভাবে ঘুরছে হাঙর
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এক হাঙর সন্ধান পেয়েছে যেগুলো বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে৷ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এসব শঙ্কর প্রজাতির হাঙরের দেখা মিলছে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE
হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
তবে এটা পুরোপুরি ইতিবাচক নয়৷ অনেকে আশঙ্কা করছেন, ক্রস-ব্রিডিং বা দুই প্রজাতির মধ্যে মিলনের ফলে হারিয়ে যেতে পারে শ্বেত ভাল্লুক৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. J. Richards
‘দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন উৎপাদকরা’
অনেক হাইব্রিড জেনেটিক অস্বাভাবিকতার শিকার৷ তারা সহজে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছে, আর প্রায়শই বন্ধ্যা হয়৷ এরকম এক প্রাণীর নাম লাইগার৷ বাঘ এবং সিংহের সংমিশ্রণে তৈরি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Kurskov
অপ্রত্যাশিত আগমন
চিড়িয়াখানায় হাইব্রিডের উৎপাদন ইচ্ছাকৃতভাবে তেমন একটা হয়না৷ কিন্তু প্রকৃতিকে থামানো কঠিন৷ দেখা গেলে একটি ভেড়ার সঙ্গে ছাগলের মিলন হয়ে গেলো৷ আর তখন জন্ম হয় গিপের৷ আয়ারল্যান্ডে তেমন এক প্রাণীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Murphy
নিজের পথ খুঁজে নেবে প্রকৃতি
২০১৩ সালের ঘটনা৷ ইটালির ফ্লোরেন্সের চিড়িয়াখানায় হঠাৎ এক পুরুষ জেব্রা লাফিয়ে চলে গেলো পাশের এক নারী গাধার খাঁচায়৷ আর দু’জনের মিলনে সৃষ্টি হয় মিষ্টি এবং জংকির, নাম ইপো৷
ছবি: Getty Images/Afp/Tiziana Fabi
7 ছবি1 | 7
‘‘আমাদের জিনের নমুনা দরকার৷ অতি শহুরে এলাকা ও কম বসতি এলাকায় কেমন করে এ ইঁদুরগুলো ভিন্ন তা জানা দরকার,’’ বলেন জেসন৷
জেসনের জিনগত গবেষণা বলে দেয়, কোন দিক থেকে ইঁদুরটি পরিবর্তিত হচ্ছে৷
জেসন বলেন. ‘‘তাই আপনি যদি সেন্ট্রাল পার্কের একটি ইঁদুর থেকে কিছু জিন নেন তাহলে দেখবেন এর কিছু জিন গ্রামের সেই পার্কের ইঁদুরের থেকে ভিন্ন৷ বিশেষ করে হজম ও পরিপাকের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলো৷ আর এর কারণ খাবারের প্রাপ্যতার ভিন্নতা ও মানুষের বিপুল বর্জ্য৷’’
তিনি যোগ করেন, তাই আমরা এখন পর্যন্ত আমরা যা জেনেছি তা হলো শহরে এদের পরিপাকের সঙ্গে সম্পর্কিত এক ধরনের জিন বদলে যাচ্ছে৷ এই সাদা পায়ের ইঁদুরগুলো এমন কিছু জিনিস খাচ্ছে, যেগুলো তাদের হজমও করতে হচ্ছে এবং এ থেকে পুষ্টি উপাদান আলাদা করতে হচ্ছে৷ আমরা জানি, এটিই হলো বিবর্তন৷ কারণ বিবর্তনের মানে, ডিএনএতে এমন পরিবর্তন হওয়া, যা বংশ পরম্পরায় চলবে৷’’
জেসন বলেন যে, দেখে মনে হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কের ইঁদুরগুলো ফাস্টফুড হজম করতে শিখে গেছে৷
তিনি বলেন, ‘‘এগুলো বড় কিছু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে যে, আমরা প্রজাতি হিসেবে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পৃথিবীর বাসস্থানকে কেমন করে বদলে দিচ্ছি৷ আমরা কেমন করে অন্য প্রজাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছি? আমরা তাদের ক্ষতিই শুধু করছি না, বরং তারা ভবিষ্যতে কেমন হয়ে বেড়ে উঠবে তাও বদলে দিচ্ছি৷’’
ডিয়র্ক নয়মান/জেডএ
ইঁদুরের কাছ থেকে শিখছেন চিকিৎসকেরা
মানুষের মনের নানা দিকের নতুন সব তথ্য উন্মোচন করছে ইঁদুর নিয়ে করা একটি গবেষণা৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Imago/CTK Photo
নতুন গবেষণা
বিভিন্ন প্রাণীর মানসিক আচরণ পরীক্ষা করতে আলোন চেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ইঁদুরদের পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছেন৷ নিউরোবায়োলজিস্টদের এই দলের কাজ হচ্ছে কিছু ইঁদুরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে তাদের আচরণ লক্ষ্য করা৷ বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই গবেষণা থেকে বেরোবে নতুন তথ্য৷
ছবি: Axel Griesch, Max-Planck-Institut für Psychiatrie
কোথায় হচ্ছে এই গবেষণা?
মিউনিখ শহরের মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি ও ইসরায়েলের রেহভোট শহরের ভাইসমান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের দুটি গবেষণাগারে চলছে এই গবেষণা৷ সম্প্রতি, ৯ নভেম্বর, এই গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয় ‘নেচার’ পত্রিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. & A. Rowe
কী জানা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত?
গবেষণা চালু হবার কয়েক দিনের মাথায় দেখা যায়, প্রায় ৬০ রকমের আচরণে ব্যস্ত ইঁদুরগুলি৷ এর মধ্যে রয়েছে নিজের প্রয়োজনে অন্য ইঁদুরের সাথে নম্র ব্যবহার করা, খাবার ভাগাভাগি করা, লুকানো ও নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে চাওয়ার মতো আচরণ৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife/A.Visage
নম্বর পাচ্ছে ইঁদুর!
অন্য ইঁদুরের প্রতি ব্যবহার কেমন, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে কত নম্বর পাবে একটি ইঁদুর৷ এই নম্বরের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা হয় ইঁদুরদের৷ প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ‘পার্সোনালিটি স্কেল’ বা ব্যক্তিত্ব নির্ণায়ক মান৷ এই মান বলে দিতে পারে কোন ইঁদুরের মানসিক অবস্থা কেমন৷ নম্বর থেকে জানা যাচ্ছে কোন ইঁদুর অবসাদগ্রস্ত, মানসিক বিকারগ্রস্ত বা কোন ইঁদুরটি চাপা বা খোলা মনের৷
ছবি: Colourbox/G. Dolgikh
মানুষের মনের খোঁজও আছে
বিজ্ঞানী দলের এক সদস্য ডঃ ওরেন ফোরকোশ জানান, এই ধরনের গবেষণার ফলাফলের সাথে শিশুদের মনোজগতের অনেক মিল পাওয়া যায়৷ এই গবেষণা শিশুদের নিয়ে করা গেলে তা বলে দিতে পারে শিশুর মধ্যে কোন ধরনের মানসিক আচরণের ঝোঁক রয়েছে৷
ছবি: Imago/CTK Photo
মানসিক রোগের জন্য নতুন পথ
ডঃ ফোরকোশ মনে করছেন, ব্যক্তিনির্দিষ্ট এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞানীরা কোনো এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পথ বের করতে পারবেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট ৩০ কোটি মানুষ অবসাদগ্রস্ত৷ তাদের চিকিৎসায় এই নতুন ধরনের ‘পার্সোনালাইজড থেরাপি’ বা ব্যক্তিনির্দিষ্ট চিকিৎসা কাজে লাগতে পারে৷