বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বড় শহরগুলিতে অসহনীয় উত্তাপ বড় সমস্যা হয়ে উঠছে৷ শীতল বাতাসের ছোঁয়া পেলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে৷ বিজ্ঞানীদের মতে নগর পরিকল্পনার সময়ে বাড়িঘরের আদর্শ অবস্থান থাকলে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারবে৷
বিজ্ঞাপন
বাধার মুখে বাতাসের প্রবাহের আচরণ কী হয়? সুইজারল্যান্ডের আন্দ্রেয়াস রুবিন গবেষণাগারে একটি খালের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে পানির মধ্যে ভাসমান সাদা কণা দৃশ্যমান করে তুলছেন৷ ফলে খালি চোখেই প্রবাহের গতিপথ দেখা যাচ্ছে৷ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুবিন বলেন, ‘‘এখানে প্রবাহ বিনা বাধায় এগিয়ে চলেছে৷ তারপর সেটি একটি ভবনে ধাক্কা খাচ্ছে৷ দেখা যাচ্ছে বাড়ির সামনে ঘূর্ণি সৃষ্টি হচ্ছে এবং উপর দিয়ে পানির প্রবাহ চলে যাচ্ছে৷ পেছনে এক ‘সোয়ার্ল জোন’ তৈরি হচ্ছ৷ এই ভবনটির গায়ে এভাবে প্রবাহে পরিবর্তন ঘটছে৷ এখানে একটিমাত্র ভবনে এমনটা ঘটছে৷ শহরে অসংখ্য বাড়ির কারণে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রবাহ দেখা যাবে৷’’
গরম-নিরোধী নকশা
অবকাঠামো তৈরি হয়েছিল ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিবেচনায়৷ কিন্তু এখন তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ওঠে মানুষের৷ আর এজন্য দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনকে৷ গরমের স্বস্তি দিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য নকশা করা হয়েছে কিছু ভবন ও শহরের৷
ছবি: picture alliance/DUMONT Bildarchiv
এসিতে সমাধান নয়
এয়ার কন্ডিশনার (এসি) গরমে স্বস্তি দেয়, তা ঠিক৷ কিন্তু এর সমস্যার কথা কি চিন্তা করেছেন? আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, এসির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ ভাগ জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোনো না কোনোভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: picture-alliance
তেলআবিবের ‘গেডেস পরিকল্পনা’
ইসরায়েল তেলআবিব শহরকে মরু এলাকার গরম থেকে মুক্ত রাখার ডিজাইন করে দেন স্কটিশ স্থপতি প্যাট্রিক গেডেস৷ এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ১৯২৫ সালে৷ সেই পরিকল্পনা অনুসারে এমনভাবে শহরের ডিজাইন করা হয়, যাতে ভূমধ্যসাগরের বায়ু সরাসরি ভবনগুলো আসে৷
ছবি: JACK GUEZ/AFP/Getty Images
নাইজেরিয়ায় আরামদায়ক নকশা
চারুকলার সঙ্গে স্থাপনার মিশেলে জার্মানির যে বাউহাউস ধারণা, তা কাজে লাগিয়েছেন অনেক স্থপতি৷ নাইজেরিয়ার ওবাফেমি আউলুউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এমন নকশা করেন ইসরায়েলি স্থপতি আরিয়েহ শ্যারন৷ উষ্ণ এলাকায় ছায়া সুনিবিড় এমন বাগান ও খালি জায়গা রাখা হয়েছে বাতাস আসা-যাওয়া করার জন্য৷ এ কারণে শ্রেণিকক্ষের তাপমাত্রা সবসময় বাইরের তুলনায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে৷
ছবি: Keren Kuenberg
বার্সেলোনার অগ্রগামী চিন্তা
বাড়ি আঙ্গিনা যদি ছায়া শীতল থাকলে ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাস আসতে বাধ্য৷ ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে শহরকে গাছপালা সমৃদ্ধ রাখার কাজ বহু আগে শুরু করে বার্সেলোনা৷ কার্বন নিঃসরণ কমাতে আবাসিক এলাকা থেকে গাড়ি দূরে রাখার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/F. Heuer
পিলারের উপরে ভবন
বন্যা থেকে বাঁচার জন্য উপকূলীয় এভাবে পিলারের উপরে ভবন নির্মাণের ধারা বহু পুরোনো৷ এমন ভবন ভেতরের পরিবেশ বেশ ঠাণ্ডা রাখে৷
ছবি: Reuters/S. Nesius
জলবায়ু সহায়ক নগর
প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এখন সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল হিসাবে বলা হয়ে থাকে৷ কিন্তু জলবায়ু সহায়ক নগর গড়লে রক্ষা পাওয়া সম্ভব৷ যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের হ্যুস্টনের এই পার্ক৷ ২০১৭ সালে হারিকেন হার্ভে আঘাত হানার পর শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও পার্কটি অক্ষত থাকে৷
ছবি: Photo by Jim Olive, courtesy of Buffalo Bayou Partnership
মধ্যপ্রাচ্যে জলবায়ু রক্ষা
মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ এলাকায় স্বস্তি দিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় হচ্ছে বিভিন্ন নকশা৷ আবুধাবির একটি এলাকাকে পুরোপুরি নবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হয়েছে৷ যা অন্যদের জন্যও পথ দেখাচ্ছে৷
ছবি: Masdar
ওমানের প্রাচীন ডিজাইন
আবু ধাবীর মাসদার শহরের তাপমাত্রা পার্শ্ববর্তী মরুভূমির চেয়ে ২০ ডিগ্রি কম থাকে৷ তারা এমন ধারণা নিয়েছে প্রাচীন ওমান নকশা থেকে৷ সেখানে বড় ভবনগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে বাতাস ঢুকে শহরের রাস্তায়৷
ছবি: picture alliance/DUMONT Bildarchiv
8 ছবি1 | 8
কোনো ভবনের উপর অথবা সেটির আশেপাশে শীতল বাতাসের প্রবাহ কেমন হয়? রুবিন সেই প্রবাহও দৃশ্যমান করে তুলেছেন৷ কিন্তু পথে বাধা সৃষ্টি হলে বাস্তবে ঠিক কী ঘটে? তিনি বলেন, ‘‘ভবনটি বাতাসের গতির দিকে থাকলে অবশ্যই প্রস্থ ও উচ্চতার উপর বাধা নির্ভর করে৷ ভবন যত উঁচু হবে, বাধাও তত বেশি হবে৷ এবার আমি আরও একটি বাধা সৃষ্টি করছি৷ দুটি বাধার মধ্যে জায়গায় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল হচ্ছে না৷ কারণ সামনে থেকে বাতাস এলে দুটি বাড়ির উপর দিয়ে চলে যাবে৷ মাঝের অংশে বাতাস চলাচল কম হবে৷ সেই প্রভাব দূর করতে আমরা বাতাসের যাত্রাপথ বরাবর তৃতীয় একটি বাড়ি বসিয়েছি৷ ফলে বাতাস এখন বাড়ির কাছ দিয়ে বয়ে যেতে পারছে৷’’
এই পরীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবন কোন দিকে মুখ করে থাকবে, নগর পরিকল্পনারসময়ে সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷ পাহাড়ের ধারে বাড়ি হলে শীতল বাতাস আটকে যাবে এবং বেশিদূর যেতে পারবে না৷ বাড়িগুলির আড়াআড়িভাবে উপত্যকার দিকে বসানো হলে সব দিকেই শীতল বাতাস বয়ে যাবে৷ বিষয়টি এতই সহজ৷
এমনকি বহুতল ভবনগুলিও শহরে বাতাস চলাচল তরান্বিত করতে অবদান রাখতে পারে৷ আন্দ্রেয়াস রুবিন বলেন, ‘‘বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে যেটা ঘটে, সেটা হলো বাতাসের প্রবাহ প্রথম ভবনের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ভবনের সামনে নীচে নেমে আসে৷ ফলে মাঝের অংশে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়৷ এভাবে শহরের মাঝে বাতাসের প্রবাহের উপর প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব৷ ভবনগুলির বিন্যাস অনুযায়ী শহরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা সম্ভব৷’’
বড় ভবন ছোট ভবন ঢেকে দিলে অবশ্য ছোট ভবনটি শীতল হতে পারে না৷ দূরত্ব বেশি রাখলে তবেই সেটা সম্ভব হয়৷