পাকিস্তানে যেখানে ‘অনার কিলিং' বা সুফিজমের মতো মতবাদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানেই এক শিল্পী নির্দিধায় চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর শিল্পকর্ম৷ তাও আবার বিষয়বস্তু নগ্নতা হওয়া সত্ত্বেও৷ শিল্পীর নাম – মোহাম্মদ আলী৷
বিজ্ঞাপন
২৭ বছরের এই শিল্পী জানান, রক্ষণশীল পাকিস্তানে কখনো তাঁর কোনো ছবিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে করাচির এই বাসিন্দা জানিয়েছেন যে, তাঁর বেশিরভাগ কাজই ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর জন্য যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করতে হয়েছে তাঁকে৷ এরপরেও এখনো কোনো হুমকির মুখোমুখি হতে হয়নি মোহাম্মদ আলীকে৷ অথচ তরুণ, উদীয়মান এই চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্মে, যা কিনা মূলত মানব শরীরকে কেন্দ্র করে, স্থান পায় লিঙ্গ, রাজনীতি ও যৌনতা৷
তবে তিনি এও জানিয়েছেন যে, এখনও কোনো বাধার সম্মুখীন না হতে হওয়াতে নিজেই অবাক তিনি৷ কেননা যে দেশে নারীদের পর্দা মেনে চলতে হয়, যেখানে সান্ধ্য আইন আছে, প্রতিনিয়তই যেখানে ঘটে চলেছে সহিংসতার ঘটনা, সেখানে তাঁর শিল্পের বিষয়ে কেউ কথা বলছে না – এটা একরকম বিস্ময়ই জাগিয়েছে তাঁর মনে৷
বাংলাদেশে সমকামী নারীদের নিয়ে কমিক স্ট্রিপ
এক সমকামী নারীর প্রেম নিয়ে কমিক স্ট্রিপ প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকায়৷ গত পাঁচ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘ধী-এর গল্প’ নামের কমিক স্ট্রিপের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷ ফেসবুক, টুইটারেও ধী-এর গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
ধী-এর গল্প
কার্টুন চরিত্রের নাম ধী৷ মফস্বলের এক তরুণী যে কিনা অন্য এক নারীর প্রেমে পড়েছেন, তাকে নিয়েই মূলত সাজানো হয়েছে চরিত্রটি৷ বাংলাদেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ৷ আর এধরনের কমিকও এই প্রথম প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
সহায়তায় ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’
সমকামী পুরুষদের গ্রুপ ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’ ‘ধী-এর গল্প’ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে কমিকটির ফ্রি কপিও বিতরণ করা হয়৷
ছবি: Facebook/Project Dhee
টুইটারে প্রজেক্ট ধী
সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ধী প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে৷ ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে তাদের প্রোফাইল রয়েছে৷ টুইটার অ্যাকাউন্টটি অবশ্য তেমন সক্রিয় নয়৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সমকামীদের যেভাবে দেখা হয়
বাংলাদেশে সমকামীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে কার্টুনটিতে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
চলতি বছরের এপ্রিলে ধী প্রকল্পের উদ্যোগে ‘টিম বিল্ডিং’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ এই টুইটটিতে সেই কর্মসূচির কিছু ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
ইন্সটাগ্রামে ধী
ধী প্রকল্পের ইন্সটাগ্রাম পাতাটির অবস্থাও টুইটারের মতো৷ এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে সেখানে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
শাস্তিযোগ্য অপরাধ
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ সমলিঙ্গের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি করাচিতে বেশ কিছু আর্ট গ্যালারি হয়েছে, যেখানে নতুন নতুন ছবি কেনা বেচা হয়৷ এটা তরুণ শিল্পীদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে৷ শহরের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্যানভাস গ্যালারির মালিক সামিরা রাজা এএফপির প্রতিনিধিকে একটি গ্যালারি পরিদর্শনে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে শুধু নগ্ন ও সমকামীদের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে৷
সামিরার কথায়, এই শিল্পকর্ম দেশের কোনো নিষিদ্ধ সংস্কার বা ট্যাবু নয়, বিশেষত শিল্পমনাদের কাছে৷ তবে এটাও ঠিক, এই ছবিগুলো সাধারণের সামনে প্রদর্শন করা যাবে না৷ কেননা তিনি চান না ঐ শিল্পীর জীবন সংকটে পড়ুন৷
তবে এটা ঠিক যে, রাজার এই ছবিগুলো মূলত পাকিস্তানের ধনী এবং উচ্চবিত্তদের শোয়ার ঘরেই স্থান পায় বা ছোট কোনো বিশেষ পরিসরে প্রদর্শিত হয়৷ করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাদিকা আসিফ বললেন, তারা যখন একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করে, তখন তাদের মাথায় রাখতে হয় সমাজের নীতি বা আদর্শকে যেন তা আঘাত না করে৷ কয়েকজন শিল্পী আশির দশকে জিয়াউল হকের সামরিক শাসন আমলে পাকিস্তানকে কট্টোর ইসলামপন্থি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দায়ী করেছেন৷ তবে তাঁর বদৌলতে ক্যালিগ্রাফির মতো শিল্পের কদর বেড়েছে বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পী মাশকুর রাজা বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বসূরিরা প্রচুর নগ্ন ছবি এঁকেছেন৷ কিন্তু এরপর ৮০- র দশকের একটা পর্যায়ে গিয়ে তাঁরা ভয় পেতে শুরু করেন এবং ক্যালিগ্রাফির দিকে মন দেন৷''
আসলে সেসময় অনেক শিল্পীর কপালে খাবারই জুটত না৷ তাই তাঁরা বিভিন্ন পোশাক শিল্পে কাজ জুটিয়েছিলেন৷ অবশ্য ১৯৮৮ সালে জিয়াউল হককে হত্যার পর করাচিতে এই গ্যালারিগুলো চালু হয়৷ আর রাজাসহ অন্য শিল্পীদের ছবি হু হু করে বিক্রি হতে থাকে৷ নব্বইয়ের দশকে বাড়ি-গাড়ি প্রতিপত্তি সবই হয় তাঁদের৷
বিছানা: আমাদের কাছে, শিল্পীদের চোখে...
ঘুম কাতুরে বাঙালির কাছে বিছানা বা শয্যা মানেই ঘুম৷ ভাত-ঘুম, শীত-ঘুম বা শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখা৷ কিন্তু বিছানার জগৎটা তো আরো বিশাল, আরো বড়, তাই না? জন্ম, মৃত্যু, ভালোবাসা, একাকিত্ব অথবা যৌথ জীবন – সবই যে এই বিছানাকে ঘিরে৷
ছবি: Detail/The Cecil Beaton Studio Archive at Sotheby`s
তোমার সঙ্গে একা...
আজকাল বিছানাতেই চলছে অফিসের কাজ, খাওয়া-দাওয়া, টিভি দেখা, স্মার্টফোনে গান শোনা, ল্যাপটপ বা ট্যাব নিয়ে ফেসবুক অথবা স্কাইপে আলাপচারিতা৷ তার সঙ্গে বিছানায় তোলা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ‘সেল্ফি’ এখন ভক্তসমাজে দারুণ ‘পপুলার’৷ এই যেমন জার্মান আলোকচিত্রী ইয়ুর্গেন টেলারের তোলা বিখ্যাত মডেল কেট মস-এর এই ছবিটি৷ সাদা চাদরে মোড়ানো কেট মস-এর এই ছবি এখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আয়োজিত একটি বিছানা প্রদর্শনীর অংশ৷
ছবি: Juergen Teller und Christine König Galerie
পপ আর উত্তেজনার মাঝে
বিছানা যেন আজ শিল্পীর ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে৷ তাই তো প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে বিশ্বখ্যাত পপ সংগীত তারকা ম্যাডোনার এই ছবিটি৷ ১৯৯৪ সালে তোলা এ ছবির ফোটোগ্রাফার বেটিনা রাইমস৷ আলুথালু পোশাক, পেছনে গোলাপের সমাহার আর মোহিনী হাসিতে ম্যাডোনাকে এ ছবিতে যেন প্রেম আর যৌবনের প্রতীক বলে মনে হচ্ছে৷ মজার বিষয়, ছবিটা যে সময় তোলা ঠিক সে সময়েই ‘বেডটাইম স্টোরিজ’ নামে নিজের অ্যালবামটি বের করেছিলেন ম্যাডোনা৷
ছবি: Detail/Bettina Rheims, Jérôme de Noirmont – Art & Confrontation
বিছানা থেকেই শুরু
ভিয়েনায় বিছানা নিয়ে প্রদর্শনীটিতে জায়গা করে নিয়েছে মধ্যযুগীয় বেশ কিছু চিত্রকর্ম এবং প্রাচীন দেওয়াল-লিখন বা ‘ফ্রেস্কো’৷ ওপরের চিত্রকর্মটির নাম ‘মাস্টার অফ দ্য ডিভিসিও আপোস্টোলোরুম’৷ শিল্পীর নাম অজানা হলেও, এটুকু জানা যায় যে তিনি সিরিয়ার মানুষ ছিলেন এবং ১৫ শতকে যিশু খ্রিষ্টের মা, ‘মাদার মেরির জন্ম’ নামের বিখ্যাত চিত্রশিল্পটিও তাঁরই আঁকা৷ বিছানা থেকেই যে জীবনের শুরু, এ ছবি তার একটি উদাহরণ তো বটেই!
ছবি: Detail/Belvedere, Wien
মন খারাপ করা...
বিছানা – এই শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জন্ম, মৃত্যু, ভালোবাসা, যন্ত্রণা, সুখ, দুঃখ আরো কত কী! তাই ভিয়েনা শহরের হাউস আর্ট মিউজিয়ামের ‘কিউরেটর’ মারিও কডো গনাটো চিত্রকর্ম, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভিডিও – সব কিছুকেই বিষয় এবং মনের ভাব অনুযায়ী ভাগ করেছেন৷ যেমন প্রদর্শনীর ‘বিষন্ন’ পর্যায়ে রয়েছে পিয়ের বোনার্দ-এর অন্যতম এই তেলচিত্রটি৷
ছবি: Detail/U. Edelmann - Städel Museum - ARTOTHEK/Bildrecht, Wien, 2015
অসুখ আর যন্ত্রণার সাথি
বিছানা নিয়ে আলোচনা শুধু ঘুম এবং সেক্সের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না৷ কারণ এখানেই যে জন্মজন্মান্তর ধরে আমরা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছি৷ অসুখ-বিসুখ হলেও বিছানার গুরুত্ব বাড়ে৷ সদ্য প্রয়াত অস্ট্রিয়ান চিত্রকর মারিয়া লাসনিগ-এর শিল্পকর্ম এটি, নাম ‘হাসপাতাল’৷ ৮৬ বছর বয়সে তিনি যখন এ ছবি এঁকেছিলেন, তখন জরা তাঁকে প্রায় গ্রাস করেছে৷
বিছানা বলতেই আমাদের কাছে হয়ত নরম, তুলতুলে তোষক-বালিশ বোঝায়৷ কিন্তু জেলখানা বা কারাগারের কথা একবার ভাবুন তো! মার্কিন শিল্পী লুসিন্ডা ডেভলিন ১৯৯০ সালে সেই ভাবনা থেকেই মার্কিন কারাগারগুলির ছবি তুলেছিলেন, বিশেষ করে সেই সব জেলখানার, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো৷ ছবিতে সে রকম বিভৎস মনে না হলেও, এখানে কিন্তু বিষাক্ত ইনজেকশনও দেওয়া হয়েছে একটা সময়৷ ভিয়েনার প্রদর্শনীতে গেলে এমন আরো বিছানার ছবি দেখতে পাবেন৷
ছবি: Detail/Lucinda Devlin und Galerie m Bochum
যুদ্ধের ক্ষতও থেকে গেছে বিছানায়
স্যার সেসিল বেটন যে শুধু রাজা-রাজরা আর বিখ্যাত মানুষের ছবি তুলে নাম কুড়িয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়৷ অসাধারণ সব যুদ্ধের ছবিও তুলেছিলেন তিনি৷ ১৯৪০ সালে জার্মান আকাশবোমায় আহত এই তিন বছরের বাচ্চাটির ছবি তুলেছিলেন তিনি৷ ‘টেডি বেয়ার’ হাতে বাচ্চাটির এ ছবি তৎকালীন যুদ্ধবিরোধী ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম৷ ২৩শে সেপ্টেম্বরের ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছিল ছবিটি৷
ছবি: Detail/The Cecil Beaton Studio Archive at Sotheby`s
7 ছবি1 | 7
অপর এক শিল্পী মুনাওয়ার আলীর কথায়, ‘‘মানব শরীর এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আঁকার বিষয়ে আমাদের বিধি-নিষেধ আছে৷ কিছু মুক্তচিন্তাকে কি কেউ কখনও আটকে রাখতে পারে?'' তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি তাঁর ভাবনাকে নতুন ধারায় ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, যখন চতুর্দিক থেকে বিধি-নিষেধ আসে, তখনই চিন্তার দ্বার খুলে যায়, উন্মেষ ঘটে সৃজনশীলতার৷
নগ্নতার মধ্যে তো কোনো খারাপ কিছু নেই৷ সেটাই প্রকৃতিক, প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি যাওয়া৷ তা নগ্নতা নিয়ে শিল্পকর্মে তাহলে বাধা কোথায়? জানান আমাদের, লিখুন নীচে৷