1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নচিকেতার মন্তব্যে বিতর্ক: প্রতিবাদ না কৌশল?

২ জানুয়ারি ২০২৪

শিল্পের স্বাধীনতায় শিল্পীর মতপ্রকাশের পরিধি সীমাহীন। কিন্তু তা কি অশালীন ব্যবহারকে অনুমোদন দেয়? গায়ক নচিকেতার আচরণ এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

গাযক নচিকেতা
নচিকেতা চক্রবর্তীছবি: privat

ভিন্নধারার সংগীতের ক্ষেত্রে নচিকেতা চক্রবর্তী একটি উল্লেখযোগ্য নাম। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের (এখন কবীর সুমন) হাত ধরে বাংলা গানের যে মোড় ঘোরানোর পর্ব, তার অন্যতম শরিক তিনি।

শিল্পীর আচরণ

সুমন ও নচিকেতা মঞ্চ, সোশ্যাল মিডিয়া ও গণ পরিসরে বিভিন্ন সময় বেফাঁস মন্তব্য করেছেন। এর জেরে বারবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত মাসে অন্তত দুবার বিতর্কিত কথা বলে বসেছেন 'নীলাঞ্জনা'র স্রষ্টা নচিকেতা।

চলতি মাসে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হতে চলেছে। এ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছেন নচিকেতা। হুগলির আরামবাগের একটি অনুষ্ঠানে তিনি গাইছিলেন 'কোথায় জন্মেছে রাম'। গানের ফাঁকে তিনি বলেন, "রাম জন্মভূমি নিয়ে আমাদের দেশে যা চলে সেটা ধর্মের ব্যাপার নয়, এটা আসলে রাজনৈতিক খেলা।"

এখানেই না থেমে তিনি ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপাস্য দেবতা ও তার জন্মস্থান নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেন। এতে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

নচিকেতার রাজনীতি

18:17

This browser does not support the video element.

এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল ট্রোলের মুখে পড়েছেন গায়ক। ততোধিক কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে নচিকেতাকে। তার মন্তব্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে এ প্রজন্মকেও আক্রমণ করেন নচিকেতা। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে একটি মঞ্চে 'বৃদ্ধাশ্রম' গানটি গাইছিলেন তিনি। সেই সময় কয়েকজন মোবাইলে ছবি তুলতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গায়ক।

তিনি বলেন, "এখানে তো ক্যামেরা রয়েছে। সবাই মিলে কেন ছবি তুলছো? তোমরা কি ফটোগ্রাফার? এখনকার ছেলেমেয়েদের কোনো কাজ নেই। পড়াশোনা করে না। কারো কথা শোনে না।" তাদের মোবাইল নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন নচিকেতা

অনেক জনপ্রিয় গানের এই শিল্পী বরাবরই একটু সোজাসাপ্টা, কড়া ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত করার চেষ্টা তার হতাশার প্রকাশ বলে অনেকে মনে করছেন।

রাজনীতির কাছাকাছি

বাংলা গানের চলতি ধারায় নচিকেতার উপস্থিতি এখন আর তেমন লক্ষ্য করা যায় না। সমাজের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে লেখা ও সুর দেয়া তার নতুন গান হাল আমলে প্রায় বিরল। বরং নচিকেতাকে এখন দেখা যায় শাসক দলের মঞ্চে, যেখানে তিনি ও সুমন একসঙ্গে সংগীত পরিবেশন করেন।

প্রতিবাদী শিল্পী হিসেবে পরিচিত কবীর সুমন একসময় তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। পরে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি। সুমনের 'খাও, খাও' মন্তব্যে সরকারি প্রকল্পে কাটমানির আভাস মিলেছিল স্পষ্ট ভাবে।

শিল্পীর বিরুদ্ধে কখনো সাংবাদিককে অশালীন ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। কখনো তিনি ব্যক্তি পরিসরের যৌনগন্ধী বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে বিতর্ক তৈরি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় সুমনের ফেসবুক লেখনী রুচিহীন বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।

বামপন্থীদের একাংশের মতে, এসব মন্তব্যের মাধ্যমে আদতে রাজ্যের শাসক দলকে খুশি করতে চাইছেন সুমন-নচিকেতা। একসময়ের প্রতিবাদী শিল্পীরা হয়ে উঠেছেন সরকারের অনুগ্রহভাজন। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্বজ্জনদের একাংশের বিরুদ্ধেও সাম্প্রতিক কালে এই অভিযোগ উঠছে।

শিল্পীদের প্রতিক্রিয়া

বাংলা গানের সন্ধিক্ষণে 'তোমাকে চাই' শুনিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন সুমন। সেই ধারাবাহিকতায় এসেছেন নচিকেতা, অঞ্জন দত্তরা। তাদের গানে যে সমাজচেতনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জন শোনা যেত, তা আরো অনেক শিল্পীকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশের সময় শালীনতার মাত্রা বজায় রাখতে হবে: পল্লব কীর্তনীয়া

This browser does not support the audio element.

শুধু ভাবনা নয়, সুর সংযোজনা ও গায়কীর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছিল। অনেক শিল্পীকে একইসঙ্গে গান রচনা, সুরারোপ ও কণ্ঠশিল্পীর ভূমিকায় দেখা যায়। যারা এই ট্রেন্ডের সূচনা করেছেন, তাদের কথা শুনে আজ কী অনুভূতি সেই শিল্পীদের?

এদেরই একজন পল্লব কীর্তনীয়া বলেন, " শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে শিল্পীর স্বাধীনতার কোনো সীমা নেই। কিন্তু যদি অশালীন কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে একটা সীমা থাকা উচিত। এটা শুধু কোনো শিল্পী বলে নয়, সব মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গায়ক হোন বা সাহিত্যিক, ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশের সময় শালীনতার মাত্রা বজায় রাখতে হবে।"

পিছিয়ে থাকা মানুষের কথা উঠে এসেছে সংগীতশিল্পী কাজি কামাল নাসেরে কথায়-সুরে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বৃহত্তর সমাজকে বিব্রত করে এমন কোনো কথা একজন শিল্পীর বলা উচিত নয়। তাকে প্রতিবাদ করতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিন্তু সেখানেও ভাষা এমন হবে না যা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে, মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এমন মন্তব্য একজন শিল্পীর পক্ষে বড় অপরাধ।"

নাসেরের বক্তব্য, "সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখি, বিশিষ্টদের কেউ কেউ এমন মন্তব্য করছেন যা সমাজের স্বার্থে নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থে। কোনো একটি বিশেষ পক্ষকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে।"

সুমন-নচিকেতা-অঞ্জনের পরম্পরা বহন করে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন যে শিল্পী, তিনি শিলাজিৎ। গায়ক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার কখনো খারাপ লাগলে, রাগ হলে, আমি সংগীতের মাধ্যমে, একটু বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে তার প্রতিক্রিয়া দেয়ার চেষ্টা করি। আমাকে যখন অনেক মানুষ অনুসরণ করে, তখন আমার আচরণের ক্ষেত্রে আরো বেশি দায়িত্ববান হওয়া উচিত।"

শিলাজিতের মতে, "যুক্তিতর্কের বদলে এখন চিৎকার করে দাবিয়ে রাখা যুগ। যারা ওয়াকিবহাল মানুষ, তারা জানেন, জনগণকে কোন কথা বললে প্রচার ও প্রসার ভালো হবে। সেভাবে তারা কাজ করছেন।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ