নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
বাড়িঘর থেকে শুরু করে প্রকাশ্য স্থান – নানা স্তরে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে৷ মোবাইল ফোন আমাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়, গুগল ব্যবহার করলেই আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের ‘প্রোফাইল'-এ তা যোগ হয়৷ সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিক, সবাই নিজেদের সম্পর্কে তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷
বার্লিনে এক ছবি প্রদর্শনীর বিষয় – কে, কার উপর, কেন নজরদারি চালাচ্ছে? সত্তরের দশকে দেখা যেত, একজন লোক অসংখ্য মনিটারের সামনে বসে আছে৷ কিন্তু একসঙ্গে এত ছবির উপর নজর রাখা কি সম্ভব? কোনো অপরাধ চোখে পড়লেও ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে যায়৷ নজরদারি ক্যামেরার চোখে ব্যাংক ডাকাতির কিছু দৃশ্যও শোভা পাচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রযুক্তির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে৷
কে কার উপর গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে?
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-এর ফোনে এনএসএ-র আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে জার্মানি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ এবারের অভিযোগ, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এনএসএ-র অনুরোধে ফ্রান্স, ইইউ সহ ইউরোপীয় নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছে৷ এর পরিণাম কী হবে?
ছবি: imago
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বন্ধুদের মধ্যে এ সব চলে না’
মোবাইল-কেলেঙ্কারির জের ধরে ক্ষুব্ধ ম্যার্কেল এমন মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে অ্যামেরিকার উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ এখন যদি প্রমাণিত হয় যে, খোদ জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর উপর নজরদারি চালিয়েছে – তাও আবার সেই অ্যামেরিকার এনএসএ-র অনুরোধে, তখন ম্যার্কেল কীভাবে মুখ দেখাবেন?
ছবি: Reuters/Y. Herman
শুধুই রাজনীতি, নাকি ব্যবসা?
শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারির কী কারণ থাকতে পারে? তাদের সাফল্যের ফর্মুলা চুরি করা? এয়ারবাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইএডিএস এই সন্দেহের বশে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে – তবে সরাসরি এনএসএ-র বিরুদ্ধে নয়৷ মনে রাখতে হবে, শুধু যাত্রীবাহী বিমান নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি করে ফ্রান্স ও জার্মানির এই কোম্পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার তাঁর দপ্তরের উপর এনএসএ ও বিএনডি-র গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অত্যন্ত বিচলিত৷ তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি বলেছেন, জার্মান কর্তৃপক্ষ ও সংসদকে এর তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে হবে৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
কেঁচো খুঁড়তে সাপ
এনএসএ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ রাশিয়ায় নির্বাসিত এই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-কে জার্মানিতে এনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব পাবার চেষ্টা করেছিলেন সবুজ দলের সদস্য হান্স ক্লিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে৷ সে যাত্রায় ফল হয়নি৷ ওয়াশিংটন-কে চটাতে সাহস পায়নি অনেক মহল৷ এবারের কেলেঙ্কারির পর সেই আপত্তি ধোপে টিকবে কিনা, বলা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোণঠাসা ম্যার্কেল প্রশাসন
এনএসএ-বিএনডি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর আস্থার পাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে৷ চ্যান্সেলর-এর দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কতটা জানতেন, কোন তথ্য গোপন করেছেন এবং সংসদে প্রশ্নের মুখে মিথ্যা কথা বলেছেন কিনা, তা জানতে চাপ বেড়েই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সহ অনেকেরই গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
6 ছবি1 | 6
ইউরোপীয় সীমা সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রন্টেক্স' ভূমধ্যসাগর এলাকায় আকাশপথে টহল দেয়৷ শক্তিশালী এইচডি ক্যামেরার সাহায্যে শরণার্থীদের নৌকা শনাক্ত করে সেগুলিকে দৃশ্যমান করে তোলার ব্যবস্থা আছে এসব বিমানে৷ এই প্রযুক্তি অবশ্য সীমা সুরক্ষা কর্মীদের সঙ্গে পলাতক মানুষদের মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে৷ ইয়ুলিয়ান ব়্যোডার তাঁর ছবিতে এই বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো সীমান্তরক্ষী যখন সরাসরি কোনো ব্যক্তির মুখোমুখি হন, সেই বিষয়টি সে সময়ে আমার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছিল৷ কারণ, তাদের মধ্যে দূরত্ব ভীষণভাবে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে৷ এত বেশি প্রযুক্তি ও ব্যবধান রয়েছে, যা ক্যামেরার মাধ্যমে ঘোচানোর চেষ্টা হয়৷''
নজরদারি চিরকালই চলে আসছে৷ আদি যুগে শুধু ঈশ্বরের কথাই বলা হতো৷ কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই তিনি নাকি সবকিছু দেখে চলেছেন৷ প্রকৃতির কোলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়৷ ষোড়শ শতাব্দীর ডাচ ভাষার এক প্রবাদ বলে, ‘মাঠের চোখ আছে, জঙ্গলের কান আছে'৷ একদল নজরদারির শিকার হবার ভয়ে থাকেন, অন্যরা আবার ভয় পেয়ে নিজেরাই নজরদারি চালান৷
এক কাউন্ট কাল্পনিক নজরদারি যন্ত্র তৈরি করিয়েছিলেন৷ অথচ তার সঙ্গে আজকের সিস্টেমের অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে৷ নজরদারির ক্ষেত্রে এই বিশালাকার রাডার স্টেশন আরও এক পদক্ষেপ৷ ফটোগ্রাফি মিউজিয়ামের কিউরেটর ইয়ুকিকো ইয়ামাগাটা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সংস্খাগুলির নজরদারির ক্ষমতা বেড়ে চলায় বিষয়টি ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার কারণে সাধারণ মানুষের মনে যে ভয় ও আতঙ্ক জন্মাচ্ছে, তার ফলে এমন নজরদারি সবাই মেনেও নিচ্ছে৷''
সে কারণে নিউ ইয়র্ক শহরে মুসলিমদের উপর বছরের পর বছর ধরে নজরদারি চালানো হয়েছিল৷ সংবাদ সংস্থা এপি ২০১১ সালে পুলিশের এক গোপন বিশেষ ইউনিটের নথিপত্র প্রকাশ করে৷ বাজার করা, নামাজ পড়া, খেলাধুলার মতো সাধারণ কার্যকলাপও সেই ব্যবস্থার নজর এড়ায়নি৷ এর ফলে ভয় ও সন্দেহের একটা কঠিন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল৷
কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি ছিল এক নজরদারি-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র৷ ‘স্টাসি' বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহশালা এমন দৈনন্দিন কার্যকলাপের নথিপত্রে ভরা৷ সেই জমানায় চিঠিপত্র পেলে যে কেউ সন্দেহের পাত্র হয়ে উঠতো৷
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি৷ না, এমনিতেই নয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত৷ এই কর্তৃপক্ষ চায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে, এক ভিন্ন উপায়ে৷
ছবি: DW
শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে দাবি করা হয়৷ এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক৷ অনলাইনেও পত্রিকাটি সমান পাঠক প্রিয়৷
ছবি: DW
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ
গত ১৬ই আগষ্টের পর থেকে পত্রিকাটিতে নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন কমে যায়৷ বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও কহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম আলোতে তাদের পণ্য এবং সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপনের তারতম্য
জুলাই মাসে প্রথম আলো গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভস থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য৷
ছবি: DW
নয় কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কমে গেছে
গ্রামীণ ফোনের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষে নির্দেশে বন্ধ হয়েছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভসের হিসেব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতির মুখে ডেইলি স্টারও
বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে প্রথম আলোর সহযোগী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারেও৷ পত্রিকাটিতে জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক৷
ছবি: DW
কাদের নির্দেশে বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন?
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ফোন ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাদের বুঝিয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানায়নি৷ তবে আল-জাজিরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে৷