সরকারের চরম অসহযোগিতার মধ্যেও নতুন করে আন্দোলনে নামছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ নিজেদের সংগঠিত করে কর্মসূচিও ঘোষণা করতে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিরা৷ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ‘কিছু’ ব্লগারের এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে৷
বিজ্ঞাপন
গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে খুলে বলেন তাদের আন্দোলনের পরবর্তী পরিকল্পনা, নতুন কর্মসূচি, সরকারের অসহযোগিতা, হেফাজতে ইসলামের তত্পরতা, চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়সহ সবকিছু৷
ডা. ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমেছিল৷ কিন্তু তার কিছুদিন পরই হেফাজতে ইসলাম নামে একটি অপরিচিত সংগঠন মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে৷ গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে ধর্মান্ধ শক্তিকে একত্রিত করার চেষ্টা করে তারা৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
সেই গণজাগরণ মঞ্চের বিভিন্ন জায়গার সমাবেশকে বাধা দিচ্ছে সরকারও৷ অনেক জায়গায় সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, জানান তিনি৷ তবে তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার চাঁদপুরে, তাদের জেলায়, সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এর আগে ৩০টি জেলায় তারা সম্মেলন করেছে৷ বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি জেলায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ আর ২৬ জুন শেষ হবে চট্টগ্রাম বিভাগের সম্মেলন৷ বাকি ২৪ জেলার সম্মেলন তাড়াতাড়ি শেষ করে ঢাকাতেও সম্মেলন করবে তারা৷
সম্প্রতি সরকার আরো কিছু ব্লগারকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিয়েছে – এমন কথা শোনা যাচ্ছে৷ এ বিষয়ে ডা. ইমরান বলেন, ‘‘আগেও তো কয়েকজন ব্লগারকে সরকারে গ্রেপ্তার করেছে৷ অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি৷’’ তাই বিনা দোষে কাউকে গ্রেপ্তার না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি৷ ডা. ইমরানের কথায়, ঢাকায় সম্মেলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ তরান্বিত করাসহ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিও জানাবেন তারা৷
হেফাজতে ইসলামীর ব্যাপারে সরকারের নমনীয়তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন, সদ্য শেষ হওয়া চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেফাজতের অসহযোগিতার কারণে সরকারি দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে৷ তিনি পাল্টা দাবি করে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চকে অসহযোগিতা করার কারণে অনেক প্রগতিশীল মানুষ সরকারি দলের প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন৷
এ জন্যই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো হেফাজতের মতো ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে বিশ্বাসী নই৷ আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে৷''
ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, নতুন প্রজন্ম এখন জেনে গেছে রাজাকাররা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কি ধরনের অপকর্ম করেছে৷ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণেই ঘরে ঘরে এখন শিশুরা জানে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে কত ত্যাগ করতে হয়েছে৷ তাই প্রকৃত অর্থে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সফল বলেই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মের এই নেতা৷
ডা. ইমরান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্লগে জামায়াত-শিবির কি ধরনের অপপ্রচার করেছে তা কল্পনা করাও কঠিন৷ কিন্তু এই ব্লগাররাই আবার তাদের সেই অপপ্রচার রুখে দিয়েছে৷ জামায়াত শিবিরের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ জানান ডা. ইমরান এইচ সরকার৷