গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস নির্বাচনি রাজনীতির ক্ষেত্রে আবারো মোক্ষম চাল দিয়েছেন৷ কিন্তু ইয়ানিস পাপাদিমিট্রিউ মনে করেন, শুধু কৌশল দিয়ে আর দেশটিকে কোনোমতেই বাঁচানো সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Vlachos
বিজ্ঞাপন
অতীতের মতো এবারও সিপ্রাস আবার সবাইকে অবাক করতে পারলেন৷ প্রথমে বামপন্থি দলের এই নেতা সংসদে আস্থা ভোটের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন৷ তারপর তিনি সংসদের বিশেষ গ্রীষ্মকালীন অধিবেশন ডেকে ব্যয় সংকোচ কর্মসূচি অনুমোদন করানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলেন৷ সবার শেষে তিনি সম্ভবত স্বতঃস্ফূর্তভাবে পদত্যাগেরই সিদ্ধান্ত নিলেন৷ আচমকা মঞ্চ ত্যাগ করে প্রেসিডেন্ট প্রোকোপিস পাভলোপুলস-এর ঘাড়ে দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা কিছুদিন আগে পর্যন্তও অনেকের কাছে ভয়াবহ এক চিত্র মনে হয়েছিল৷
এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নীরব রইলেন
সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হলো, সিপ্রাসকে আরও একবার নতুন সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়া৷ তারপর প্রয়োজন পড়লে একে একে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম দলকে সেই সুযোগ দেওয়া৷ এতেও কাজ না হলে নতুন নির্বাচন ঘোষণা করার কথা৷ সে ক্ষেত্রে চরম দক্ষিণপন্থি ‘গোল্ডেন ডন' দলও তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সরকার গড়ার সুযোগ পেত৷
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পাভলোপুলস কেন নীরব রইলেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ তিনি সংবিধানের ভিন্ন ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, নাকি এক মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসছে? নাকি সিরিসা দলের বিক্ষুব্ধরা বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃতীয় বৃহত্তম দল গড়ছেন এবং সরকার গড়ার সুযোগ পাচ্ছেন? গ্রিসের রাজনৈতিক আঙিনায় অবাক করার মতো ঘটনা থাকতেই পারে না৷
ইয়ানিস পাপাদিমিট্রিউ
কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ সিপ্রাস কেন আবার জনগণের সমর্থন চাইছেন? এর উত্তর হলো, আর কোনো উপায় নেই৷ অনেক বামপন্থি সংসদ সদস্য আনুগত্য প্রত্যাহার করার পর সিপ্রাস দল ছাড়াই দলের নেতা হয়ে পড়েছেন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করাতে তাঁকে বার বার বিরোধীদের সমর্থনের উপর নির্ভর করতে হয়েছে৷ নতুন করে নির্বাচন হলে সিপ্রাস দলের প্রার্থী তালিকায় তাঁর সমর্থকদের স্থান দিতে এবং বিরোধীদের সরিয়ে রাখতে পারবেন৷ দ্রুত নির্বাচনের আরেকটি সুবিধা হলো, বরখাস্ত হওয়া জ্বালানি মন্ত্রী লাফাজানিসকে ঘিরে দলের ব়্যাডিকাল বামপন্থিরা ঘর গুছিয়ে ব্যয় সংকোচ কর্মসূচির বিরুদ্ধে স্বঘোষিত ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ার সুযোগ পাবেন না৷ বৃহস্পতিবার তিনি নির্বাচনি প্রচারের জন্য এত কম সময় নিয়ে জোরালো অভিযোগ করেছেন৷
ইতিহাস যে শিক্ষা দেয়
গ্রিসের ইতিহাসের শিক্ষা হলো, কোনো বামপন্থি দল তখনই সাফল্য পায়, যখন তারা সমাজের মধ্যপন্থিদেরও আস্থা জয় করে এবং কোনো ‘ক্যারিসম্যাটিক' নেতা এগিয়ে আসেন৷ সিপ্রাস-এর নেতৃত্বে সিরিসা পার্টি সম্ভবত সেই শর্ত পূরণ করতে পারে৷ অন্যদিকে লাফাজানিস-এর নেতৃত্বে গোষ্ঠী এখনো প্রস্তুত হয়নি৷ এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে সিপ্রাস যদি আগাম নির্বাচনে সিরিসা দলের ব়্যাডিকাল অংশকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন, তাহলে তাঁর কৌশলগত ক্ষমতার নতুন প্রমাণ পাওয়া যাবে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, সাত মাসের মধ্যে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ গ্রিসের কোনো আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না৷ বরং নতুন নির্বাচনের ফলে ব্যয়ভার আরও বেড়ে যাবে৷
গ্রিসে শরণার্থীদের ভিড়, আশ্রয়স্থল ‘জাহাজবাড়ি’
প্রতিদিন গ্রিসের কস দ্বীপে আসছে সাতশ’ থেকে আটশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাঁদের জন্য অভিনব এক আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছে গ্রিক সরকার৷ সাগরে ভেসে আসা মানুষগুলোর আশ্রয় দেয়া হচ্ছে সাগরে ভাসমান জাহাজে!
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
আশ্রয়
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জরুরি অবস্থার আশ্রয়স্থল এই ‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’ নামের জাহাজ৷ আড়াই হাজার মানুষের জায়গা আছে এই জাহাজে৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এই জাহাজে আশ্রয় নেয়ার আগে নিজের নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন৷ জাহাজেই আছে সে ব্যবস্থা৷ রেজিস্ট্রেশন হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গ্রিসের ভেতরে ঘুরাফেরাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সূচনা
‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’-এ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রথম দলটি ঢুকেছে ১৬ই আগস্ট৷ কয়েকদিন এ জাহাজেই থাকবেন তাঁরা৷ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে যখন তাঁরা দরকারি কাগজপত্র পেয়ে যাবেন, তখন তাঁদের এথেন্সের কাছে অন্য কোনো জাহাজে তুলে দেয়া হবে৷ শুরু হবে তাঁদের ‘দ্বিতীয় জাহাজঘর’-এ বসবাস৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
শুধু সিরীয়রা....
রাতেও জাহাজের সামনে লম্বা লাইন৷ তবে বলা হচ্ছে, ‘‘আগে শুধু সিরীয়রা ঢুকবেন, অন্যরা নয়৷’’ যুদ্ধের কারণে সিরিয়া থেকে যাঁরা পালিয়ে এসেছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাকিদের দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে৷ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্যই নেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা৷ কয়েকদিন আগে অন্য দেশ থেকে আসা লোকদের সঙ্গে সিরীয়দের প্রায় মারামারি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হলে কর্তৃপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, সবার আগে সিরীয়রা, তারপর বাকিরা ঢুকবে জাহাজে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সবার লক্ষ্য ইউরোপ
এখানে আগতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এসেছে সিরিয়া থেকে৷ এশিয়ার তিন মুসলিম প্রধান দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান আর আফ্রকিার মালি, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া থেকেও এসেছেন অনেকে৷ এমনকি ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষও এসেছে গ্রিসের দ্বীপ কস-এ৷ তুরস্কের ভিসা পাওয়া যায় বেশ সহজে৷ একবার তা পেয়ে গেলেই শুরু হয় গ্রিস হয়ে ইউরোপের বেশি উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
‘স্বপ্ন’ মাত্র চার কিলোমিটার দূরে
সিরিয়া এবং আশেপাশের দেশগুলো থেকে মানুষ কোনোরকমে একবার তুরস্কে ঢুকে পড়লেই ইউরোপের ‘স্বপ্নের জগত’ প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসে৷ তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে গ্রিসের কস দ্বীপ৷ ইস্তানবুলে এসে বেশির ভাগ মানুষ শুধু নৌকাটা বদলান, নৌকা বদলেই শুরু করেন কস-এর দিকে যাত্রা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
আনন্দাশ্রু
ইরানের এই ভদ্রলোক আনন্দে কাঁদছেন৷ অবশেষে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আনন্দ! কিন্তু তিনি জানেন না, এখনো সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পেতে কতকাল কত কাঠখড় পোড়াতে হবে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
আশ্রয়হীন
প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ মানুষ আসে কস দ্বীপে৷ ৩০ হাজার মানুষের এই দ্বীপে এখন ৭ হাজার শরণার্থীর বাস৷ অনেকেরই ভাগ্যে আশ্রয় শিবির জোটেনি৷ রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নীচেই কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সিরিয়া থেকে আসছে অনেক পরিবার
এতদিন সিরিয়া থেকে তরুণরাই বেশি আসতেন৷ ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে নারীরা এসেছেন, তরুণী বা অন্তঃসত্ত্বাও এসেছেন অনেক৷ কিন্তু আজকাল সিরিয়া থেকে পুরো পরিবারই চলে আসছে৷ নতুন দেশের অজানা পরিবেশে মুসলিম নারীদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করা অবশ্য একটু বেশি কঠিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
দীর্ঘ প্রতীক্ষা
কস দ্বীপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রেজিস্ট্রেশন করানোটা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু এই নিয়মে দরকারি কাগজপত্র পাওয়াটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে৷ কর্তৃপক্ষের কাছে মজুদ সরঞ্জাম হঠাৎ শেষ হয়ে যায়৷ তখন তিন-চার সপ্তাহও অপেক্ষা করতে হয় শরণার্থীদের৷