জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম মনে করেন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা নয় চ্যালেঞ্জ শিক্ষকেরা৷ তার মতে এই কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম চালু হওয়ার পর থেকে বিতর্ক থামছে না৷ যারা এই কারিকুলাম তৈরি করেছেন তারা এর পক্ষে বললেও শিক্ষক-অভিভাবকদের একটা বড় অংশ এর বিরোধিতা করছেন৷ অনেকেই নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ তুলে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন৷ বিতর্কের মধ্যে নতুন কারিকুলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম৷
ডয়চে ভেলে : নতুন এই কারিকুলামের কাজ কবে থেকে শুরু হয়েছে?
অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম : ২০১৭ সালের মূলত চাহিদা নিরুপণ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়৷ প্রয়োজন কী? বর্তমানে অবস্থা কী? এ নিয়ে মোট ছয়টি গবেষণা হয়েছে৷ এরপর ২০২১ সালে এসে একটা রূপরেখা তৈরি করেছি৷ এটা প্রিপ্রাইমারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত৷ এটা করার সময় অনেক বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, সভা-সেমিনার কথা হয়েছে৷
তারপর একটা রূপরেখা দাঁড় করানো হয়৷ এটা প্রধানমন্ত্রীকেও দেখানো হয়েছে৷ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেখেছে৷ রূপরেখার দু'এক জায়গায় প্রধানমন্ত্রী সংশোধন দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেওয়ার পর কারিকুলাম অনুমোদনের জন্য সচিবের নেতৃত্বে সর্বোচ্চ কমিটি ন্যাশনাল কমিটি ফর কারিকুলাম কোডিনেশন (এনসিসিসি) অনুমোদন দেয়৷
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সকলের উপস্থিতিতে এটা তুলে ধরা হয়৷ কিছু মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনের পর এটা পাশ করা হয়েছে৷ এটার নাম জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১৷ এর উপর ২০২২ সালে ৬০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়৷ এর ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই প্রবর্তন করেছি৷ ২০২৪ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই প্রবর্তন করা হবে৷ ২০২৫ সালে দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে যাবে একাদশ শ্রেণি আর ২০২৭ সালে যাবে দ্বাদশ শ্রেণির বই৷ এই রূপরেখায় কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে৷ নাইনের পরীক্ষা নাইনেই হয়ে যাবে৷ এসএসসি পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণির কিছু নির্বাচিত বিষয়ের উপর হবে৷ এতে পাবলিক পরীক্ষার চাপ কমে যাবে৷ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা একাদশ শ্রেণিতেই ফাইনাল হয়ে যাবে৷ আর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দ্বাদশ শ্রেণিতেই হবে৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত রেজাল্ট এইচএসসির রেজাল্ট হিসেবে গণ্য হবে৷ ক্লাস নাইন টেনে আর বিজ্ঞান, বাণিজ্য বলে কিছু থাকবে না৷ সবাইকে সব বিষয় পড়তে হবে৷ একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে তারা শাখা ভিত্তিক পড়াশোনা করবে৷
এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কী?
এই কারিকুলাম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ কিন্তু শিক্ষার্থীরা না৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আনন্দের সঙ্গে এটা গ্রহণ করেছে৷ তাদের পড়াশোনার যে ভীতি বা পরীক্ষার যে ভীতি সেটা এখন আর নেই৷ তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে৷ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের শিক্ষকেরা৷ তারা কোন পরিবর্তন গ্রহণ করতে অভ্যস্ত না৷ শুধু এই কারিকুলাম পরিবর্তনের সময় না, তারা সব সময় একটা বাধা ছিলেন৷ তারা অভ্যস্ততার ভিত্তিতে ক্লাস নিতে পছন্দ করেন৷ তারা সব সময় বলেন আগেরটাই ভালো ছিল৷ তারা যে কোন পরিবর্তনে যেন অস্বস্তিতে পড়েন৷ এবারও তাই৷ তারা পরিবর্তনে অভ্যস্ত হতে চাচ্ছেন না৷ আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হল, এদেশে নোট গাইডের একটা বিশাল ব্যবসা আছে৷ এই ব্যবসায়ীরা এটার সফলতার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন৷ আবার অনেক অভিভাবক ভাবছেন, পরীক্ষার খাতায় লেখা নেই, ফাস্ট, সেকেন্ড নেই এ আবার কেমন পরীক্ষা৷ তারাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ৷
শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়৷ তারা আন্দোলনেও মাঠে নেমেছেন৷ তাদের এই বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
তারা ভুল পথে আছেন৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব নয় বলে কী আমরা পেছাতেই থাকব৷ আমাদের তো শুরু করতে হবে৷ অবশ্যই যে কোন শুরুতে কিছু সমস্যা থাকতে পারে৷ এটার কারণে যদি আমরা পিছিয়ে থাকি, তাহলে তো আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পারবে না৷ তারা তো পৃথিবীর অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে পারবে না৷ আপনি তো জানেন, দুনিয়াদারির একটা ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ এটার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে আমাদের এই শিক্ষাক্রমের কোন বিকল্প নেই৷
শিক্ষকদের হাতে কিছু নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে: মো ফরহাদুল ইসলাম
বলা হচ্ছে, এই কারিকুলামে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে৷ কিন্তু শিক্ষকদের অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ এতে করে শিক্ষকেরা কী শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জনের একটা সুবিধা নিতে পারেন না?
কথাটা তো কিছুটা সত্যি৷ প্রত্যেকটা ব্যবস্থারই তো একটা বিকল্প থাকে৷ ইতিবাচকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং তারাই সারা বছর যে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন তাদের যাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে এজন্য শিক্ষকদের হাতে কিছু নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে৷ আরেকটা বিষয় হল, এতদিন আমরা পেপার পেন্সিলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরীক্ষা নিতে পারতাম৷ কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি বা ভ্যালুজের মূল্যায়ন করতে পারতাম না৷ এটার মূল্যায়ন করতে পারেন একজন শিক্ষক কাছ থেকে দেখার মাধ্যমে৷ একটা ছেলেকে না দেখে তো আপনি তার খাতা দেখে মূল্যায়ন করতে পারেন না৷ খাতা দেখে কী লিখেছে সেটার মূল্যায়ন করা সম্ভব৷ নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা পারদর্শিতার মূল্যায়ন করতে চাচ্ছি৷ উদাহরণ দিয়ে বলি, ওজুর ফরজ কত প্রকার ও কী কী? এটা সে মুখস্ত বলত৷ এটার তো দরকার নেই৷ সে যদি ওজু করে দেখাতে পারে তাহলে বুঝব যে তার যোগ্যতা অর্জন হয়েছে৷ সে পূর্ণমার্ক পাবে৷
কোন কোন দেশের কারিকুলাম দেখে এই কারিকুলাম বানানো হয়েছে?
শিক্ষা নিয়ে যে বড় বড় দেশ যেমন ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্টেলিয়াসহ ইউরোপীয় অনেক দেশের কারিকুলাম দেখা হয়েছে৷ পাশাপাশি জাপান, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তানের কারিকুলামও দেখা হয়েছে৷
এই দেশগুলোর শিক্ষকদের মান, শিক্ষা বাজেট বা শিক্ষা অবকাঠামো কী বাংলাদেশের সঙ্গে মেলানো সম্ভব?
আমি বলছি না যে, মেলানো সম্ভব৷ আমরা কিন্তু ওদের মতো করে হুবহু নিয়ে এসেছি তা কিন্তু না৷ আমরা বলছি, থিংক গ্লোবালি, এ্যাক্ট লোকালি৷ অর্থাৎ গ্লোবালি চিন্তা করব, কিন্তু দেশের সীমাবদ্ধ সম্পদ, অবকাঠামোর মধ্যে আমরা ডিজাইন করেছি৷ আমরা কিন্তু ইউরোপ থেকে ধার করে পুরোপুরি চালিয়ে দিচ্ছি, বিষয়টি এমন না৷
এখন পর্যন্ত কত ভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে?
আগের শিক্ষাক্রমগুলোকে শিক্ষাক্রম চালু করার পর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু এবার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তারপর কারিকুলাম চালু করা হয়েছে৷ গত বছর আমরা নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ দিয়েছি তারপর জানুয়ারিতে চালু করেছি৷ এবারও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে৷ সবাই প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে৷
সৃজনশীলতা বিকাশে আসলেই কী এই কারিকুলাম বিশেষ কোন ভূমিকা রাখবে?
মূলত সৃজনশীলতা বিকাশের জন্যই এই কারিকুলাম৷ মুখস্ত পদ্ধতির পরিবর্তে সে নিজে নিজেই করবে৷ শিক্ষার্থীরা মুখস্ত না করে যদি নিজে কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে তো তার সৃজনশীলতার তো অবশ্যই বিকাশ ঘটবে৷
বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল৷ বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদা এর প্রধান ছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে দেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল৷ কুদরত-ই-খুদা কমিশন নামে পরিচিতি পাওয়া এই কমিশন ১৯৭৪ সালে রিপোর্ট পেশ করেছিল৷ এতে শিক্ষার সবস্তরে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/epd
উল্লেখযোগ্য সুপারিশ
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল কুদরত-ই-খুদা কমিশন৷ প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছিল৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি চার বছর মেয়াদি সম্মিলিত ডিগ্রি কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
কমিটি গঠন
কুদরত-ই-খুদা কমিশনের সুপারিশের আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস প্রণয়নের জন্য অধ্যাপক সামছুল হুদাকে প্রধান করে ১৯৭৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷ কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮ সালে সাত খণ্ডে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেছিল৷ সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিল ঐ কমিটি৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Eyepix/IMAGO
মজিদ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮২
এরশাদ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আবদুল মজিদ খানের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন ১৯৮২ সালে একটি শিক্ষা নীতি প্রস্তাব করেছিল৷ এতে প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলার সঙ্গে আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি ভাষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়৷ এছাড়া যারা ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করতে পারবে, ফল খারাপ হলেও তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু পরে তীব্র আন্দোলনের কারণে কমিশনের কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দীন আহমদকে প্রধান করে ১৯৮৭ সালে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়৷ তাদের রিপোর্টে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন এবং ডিগ্রি কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়৷ এছাড়া বড় জেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতে একটি করে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ১৯৯৭ সালে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা দান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদের অনুপ্রাণিত করার কথা বলেছিল ঐ কমিশন৷ এছাড়া কমিটি একটি শিক্ষানীতিও প্রণয়ন করেছিল, যেটি ২০০০ সালে সংসদে গৃহীত হয়৷ কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি৷
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance
এম.এ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০১
ড. এম এ বারীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ২০০২ সালে রিপোর্ট পেশ করে শিক্ষাক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার ও পরিবর্তনের সুপারিশ করে৷ এসব সুপারিশ ২০০৩ সালে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন কর্তৃক বিবেচনায় আনা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন, ২০০৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের রিপোর্ট তিন ভাগে বিভক্ত ছিল: সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা৷ ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য নির্বিশেষে সবার জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করেছিল৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Eyepix/IMAGO
কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন, ২০০৯
২০০০ সালের শিক্ষানীতিকে সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ এই কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরাত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট এবং ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে৷ সেটি ২০১০ সালে সংসদে গৃহীত হয়৷
ছবি: Bdnews24.com
বাস্তবায়ন কত দূর?
শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে৷ কিন্তু সেটি হয়নি৷ মাধ্যমিক শিক্ষা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছিল৷ এজন্য উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি সংযোজন করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো হয়নি৷ শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির মতো কমিশন হয়নি৷ শিক্ষা আইন হয়নি৷ স্থায়ী শিক্ষা কমিশনও হয়নি৷
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance
নতুন শিক্ষাক্রম
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়৷ এরপর এ বছর থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷ ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে৷ একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে৷
ছবি: Habibur Rahman/abaca/picture alliance
কী আছে?
নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার চেয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে৷ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে৷ পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম দুটোই আছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দশম পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাস
শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে৷ আর তারা বিজ্ঞান, মানবিক, না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, তা ঠিক হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে৷ এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ধরণ এখনকার মতো হবে না৷ শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা হবে৷ প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে৷ এরপর দুই ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে৷
ছবি: Salim/Xinhua/picture alliance
শেখার ক্ষেত্র
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে৷ এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি৷ প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন৷