1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ শিক্ষকরা’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ নভেম্বর ২০২৩

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম মনে করেন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা নয় চ্যালেঞ্জ শিক্ষকেরা৷ তার মতে এই কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে৷

বাংলাদেশের একটি স্কুলে ডিজিটাল ক্লাসরুম
২০২২ সালে ৬০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance

বাংলাদেশে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম চালু হওয়ার পর থেকে বিতর্ক থামছে না৷ যারা এই কারিকুলাম তৈরি করেছেন তারা এর পক্ষে বললেও শিক্ষক-অভিভাবকদের একটা বড় অংশ এর বিরোধিতা করছেন৷ অনেকেই নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ তুলে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন৷ বিতর্কের মধ্যে নতুন কারিকুলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম৷

ডয়চে ভেলে : নতুন এই কারিকুলামের কাজ কবে থেকে শুরু হয়েছে?

অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম : ২০১৭ সালের মূলত চাহিদা নিরুপণ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়৷ প্রয়োজন কী? বর্তমানে অবস্থা কী? এ নিয়ে মোট ছয়টি গবেষণা হয়েছে৷ এরপর ২০২১ সালে এসে একটা রূপরেখা তৈরি করেছি৷ এটা প্রিপ্রাইমারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত৷ এটা করার সময় অনেক বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, সভা-সেমিনার কথা হয়েছে৷

তারপর একটা রূপরেখা দাঁড় করানো হয়৷ এটা প্রধানমন্ত্রীকেও দেখানো হয়েছে৷ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেখেছে৷ রূপরেখার দু'এক জায়গায় প্রধানমন্ত্রী সংশোধন দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেওয়ার পর কারিকুলাম অনুমোদনের জন্য সচিবের নেতৃত্বে সর্বোচ্চ কমিটি ন্যাশনাল কমিটি ফর কারিকুলাম কোডিনেশন (এনসিসিসি) অনুমোদন দেয়৷ 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সকলের উপস্থিতিতে এটা তুলে ধরা হয়৷ কিছু মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনের পর এটা পাশ করা হয়েছে৷ এটার নাম জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১৷ এর উপর ২০২২ সালে ৬০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়৷ এর ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই প্রবর্তন করেছি৷ ২০২৪ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই প্রবর্তন করা হবে৷ ২০২৫ সালে দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে যাবে একাদশ শ্রেণি আর ২০২৭ সালে যাবে দ্বাদশ শ্রেণির বই৷ এই রূপরেখায় কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে৷ নাইনের পরীক্ষা নাইনেই হয়ে যাবে৷ এসএসসি পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণির কিছু নির্বাচিত বিষয়ের উপর হবে৷ এতে পাবলিক পরীক্ষার চাপ কমে যাবে৷ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা একাদশ শ্রেণিতেই ফাইনাল হয়ে যাবে৷ আর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দ্বাদশ শ্রেণিতেই হবে৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত রেজাল্ট এইচএসসির রেজাল্ট হিসেবে গণ্য হবে৷ ক্লাস নাইন টেনে আর বিজ্ঞান, বাণিজ্য বলে কিছু থাকবে না৷ সবাইকে সব বিষয় পড়তে হবে৷ একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে তারা শাখা ভিত্তিক পড়াশোনা করবে৷

এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কী?

এই কারিকুলাম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ কিন্তু শিক্ষার্থীরা না৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আনন্দের সঙ্গে এটা গ্রহণ করেছে৷ তাদের পড়াশোনার যে ভীতি বা পরীক্ষার যে ভীতি সেটা এখন আর নেই৷ তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে৷ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের শিক্ষকেরা৷ তারা কোন পরিবর্তন গ্রহণ করতে অভ্যস্ত না৷ শুধু এই কারিকুলাম পরিবর্তনের সময় না, তারা সব সময় একটা বাধা ছিলেন৷ তারা অভ্যস্ততার ভিত্তিতে ক্লাস নিতে পছন্দ করেন৷ তারা সব সময় বলেন আগেরটাই ভালো ছিল৷ তারা যে কোন পরিবর্তনে যেন অস্বস্তিতে পড়েন৷ এবারও তাই৷ তারা পরিবর্তনে অভ্যস্ত হতে চাচ্ছেন না৷ আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হল, এদেশে নোট গাইডের একটা বিশাল ব্যবসা আছে৷ এই ব্যবসায়ীরা এটার সফলতার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন৷ আবার অনেক অভিভাবক ভাবছেন, পরীক্ষার খাতায় লেখা নেই, ফাস্ট, সেকেন্ড নেই এ আবার কেমন পরীক্ষা৷ তারাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ৷

শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়৷ তারা আন্দোলনেও মাঠে নেমেছেন৷ তাদের এই বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তারা ভুল পথে আছেন৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব নয় বলে কী আমরা পেছাতেই থাকব৷ আমাদের তো শুরু করতে হবে৷ অবশ্যই যে কোন শুরুতে কিছু সমস্যা থাকতে পারে৷ এটার কারণে যদি আমরা পিছিয়ে থাকি, তাহলে তো আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পারবে না৷ তারা তো পৃথিবীর অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে পারবে না৷ আপনি তো জানেন, দুনিয়াদারির একটা ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ এটার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে আমাদের এই শিক্ষাক্রমের কোন বিকল্প নেই৷

শিক্ষকদের হাতে কিছু নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে: মো ফরহাদুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

বলা হচ্ছে, এই কারিকুলামে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে৷ কিন্তু শিক্ষকদের অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ এতে করে শিক্ষকেরা কী শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জনের একটা সুবিধা নিতে পারেন না?

কথাটা তো কিছুটা সত্যি৷ প্রত্যেকটা ব্যবস্থারই তো একটা বিকল্প থাকে৷ ইতিবাচকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং তারাই সারা বছর যে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন তাদের যাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে এজন্য শিক্ষকদের হাতে কিছু নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে৷ আরেকটা বিষয় হল, এতদিন আমরা পেপার পেন্সিলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরীক্ষা নিতে পারতাম৷ কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি বা ভ্যালুজের মূল্যায়ন করতে পারতাম না৷ এটার মূল্যায়ন করতে পারেন একজন শিক্ষক কাছ থেকে দেখার মাধ্যমে৷ একটা ছেলেকে না দেখে তো আপনি তার খাতা দেখে মূল্যায়ন করতে পারেন না৷ খাতা দেখে কী লিখেছে সেটার মূল্যায়ন করা সম্ভব৷ নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা পারদর্শিতার মূল্যায়ন করতে চাচ্ছি৷ উদাহরণ দিয়ে বলি, ওজুর ফরজ কত প্রকার ও কী কী? এটা সে মুখস্ত বলত৷ এটার তো দরকার নেই৷ সে যদি ওজু করে দেখাতে পারে তাহলে বুঝব যে তার যোগ্যতা অর্জন হয়েছে৷ সে পূর্ণমার্ক পাবে৷

কোন কোন দেশের কারিকুলাম দেখে এই কারিকুলাম বানানো হয়েছে?

শিক্ষা নিয়ে যে বড় বড় দেশ যেমন ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্টেলিয়াসহ ইউরোপীয় অনেক দেশের কারিকুলাম দেখা হয়েছে৷ পাশাপাশি জাপান, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তানের কারিকুলামও দেখা হয়েছে৷

এই দেশগুলোর শিক্ষকদের মান, শিক্ষা বাজেট বা শিক্ষা অবকাঠামো কী বাংলাদেশের সঙ্গে মেলানো সম্ভব?

আমি বলছি না যে, মেলানো সম্ভব৷ আমরা কিন্তু ওদের মতো করে হুবহু নিয়ে এসেছি তা কিন্তু না৷ আমরা বলছি, থিংক গ্লোবালি, এ্যাক্ট লোকালি৷ অর্থাৎ গ্লোবালি চিন্তা করব, কিন্তু দেশের সীমাবদ্ধ সম্পদ, অবকাঠামোর মধ্যে আমরা ডিজাইন করেছি৷ আমরা কিন্তু ইউরোপ থেকে ধার করে পুরোপুরি চালিয়ে দিচ্ছি, বিষয়টি এমন না৷

এখন পর্যন্ত কত ভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে?

আগের শিক্ষাক্রমগুলোকে শিক্ষাক্রম চালু করার পর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু এবার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তারপর কারিকুলাম চালু করা হয়েছে৷ গত বছর আমরা নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ দিয়েছি তারপর জানুয়ারিতে চালু করেছি৷ এবারও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে৷ সবাই প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে৷

সৃজনশীলতা বিকাশে আসলেই কী এই কারিকুলাম বিশেষ কোন ভূমিকা রাখবে?

মূলত সৃজনশীলতা বিকাশের জন্যই এই কারিকুলাম৷ মুখস্ত পদ্ধতির পরিবর্তে সে নিজে নিজেই করবে৷ শিক্ষার্থীরা মুখস্ত না করে যদি নিজে কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে তো তার সৃজনশীলতার তো অবশ্যই বিকাশ ঘটবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ