অনলাইনে ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এয়ারবিএনবি৷ তবে এই কোম্পানির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
বাড়ির মালিকরা এয়ারবিএনবি-তে নিবন্ধিত হয়ে কারও কাছে ভাড়া দিতে পারেন৷ দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তিতে বাসা ভাড়া দেয়ার চেয়ে এই প্রক্রিয়া লাভজনক৷ তাই অনেক বাড়ির মালিক এয়ারবিএনবি-র প্রতি ঝুঁকছেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এর ফলে ভাড়া দেয়ার মতো বাসা-বাড়ির সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ ফলে দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তিতে বাসা ভাড়া নিতে ইচ্ছুকরা পড়ছেন বিপদে৷
জার্মানিতে ফ্ল্যাট ভাড়া
জার্মানির ৪৮ শতাংশ মানুষ ভাড়া করা বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বাস করেন, যা কিনা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি৷ জার্মানিতে ফ্ল্যাট ভাড়া করতে গেলে কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার জানা থাকা দরকার৷
ছবি: picture-alliance/Wolfram Steinberg
‘পায়রার খোপ’
বার্লিনের সারির পর সারি ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে এককালে অসংখ্য ভাড়াটে গা ঘেঁষাঘেষি করে থাকতেন৷ এক অথবা দুই কামরার ফ্ল্যাটে বড় একটা পরিবারের বাসও কিছু আশ্চর্য ছিল না৷ এই পুরনো বাড়িগুলোকে বলা হয় ‘আল্টবাউ’৷ এগুলোর এখন আবার খুব চল হয়েছে৷ বার্লিনের প্রেনৎসলাউয়ারব্যার্গ এলাকার ভাঙাচোরা পুরনো ফ্ল্যাটবাড়িগুলো এখন মহার্ঘ৷
ছবি: picture alliance/ZB
‘প্লাটেনবাউ’
‘প্লাটে’ বলতে বোঝায় কংক্রিটের প্রিফ্যাব দেয়াল, যা দিয়ে পূর্ব বার্লিন জুড়ে পূর্ব জার্মানির কম্যুনিস্ট সরকার একের পর এক বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ি খাড়া করেছিলেন সস্তার আবাসন হিসেবে৷ কিন্তু এই নয়া ফ্ল্যাটগুলো পেলে পূর্ব জার্মানির লোক বর্তে যেতেন, কেননা এগুলো ‘আল্টবাউ’-এর চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক সুযোগসুবিধা যুক্ত ছিল: যেমন ফুটো ছাড়া জলের পাইপ, ইলেকট্রিকের নতুন সার্কিট-সুইচবোর্ড কিংবা গরম পানির গেইজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
ঝোলা বারান্দা
ফ্ল্যাটবাড়িতে যে সব জার্মানদের বাস, তাদের ‘বাগান’ হলো ঝোলা বারান্দা৷ বারান্দায় বসা যায়, বার্বেকিউ করা যায় – অন্যরা টবে ফুলগাছ থেকে শুরু করে টমেটোগাছ অবধি যা প্রাণ চায় লাগিয়ে বাগান করার শখ মিটিয়ে নেন৷
বার্লিনের ফ্ল্যাটবাড়িগুলো আসলে একটা নয়, দু’টো বাড়ি৷ রাস্তার উপর যে বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে, তার মাঝখানের গেট দিয়ে পিছনের আঙিনায় ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যাবে ‘ভিতরের বাড়ি’ – এটাও ফ্ল্যাটবাড়ি৷ এই মাঝের আঙিনাটা কারো নয়, আবার সবার বটে৷ ভাড়াটেরা এখানে তাদের সাইকেল রাখেন; ময়লা ফেলার ‘বিন’-গুলোও এখানেই রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Krause
নম্বর নয়, নেমপ্লেট
নেমপ্লেট বললে বেশি বলা হয়ে যাবে৷ আসলে প্রত্যেক ফ্ল্যাটের কলিং বেল-এর পাশে সেই ফ্ল্যাটের ভাড়াটের নাম লেখা থাকে৷ লেটারবক্সের ওপরেও ভাড়াটের নাম লেখা থাকে, ফ্ল্যাটের নম্বর নয়৷ তাই পিয়ন নাম না পড়তে পারলে উদোর চিঠি বুধোর কাছে চলে যাবার শঙ্কা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholz
ফ্ল্যাট শেয়ারিং
এর জার্মান নামটা একটু খটমটে: ‘ভোনগেমাইনশাফ্ট’ বা ‘আবাসিক সম্প্রদায়’, সংক্ষেপে ‘ভে.গে.’৷ ‘ভে.গে.’ আর কিছু নয়, ইংরেজিতে যাকে ‘চামারি ’ বলা হতো, অথবা বাংলায় মেস৷ অর্থাৎ যেখানে একাধিক জন মিলে একটি ফ্ল্যাট শেয়ার করেন৷ বার্লিনের মতো শহরে, যেখানে ছাত্রছাত্রী, শিল্পী, নতুন চাকুরে, এ ধরনের হাজারটা একলা মানুষ থাকার জায়গা খুঁজছেন, ওদিকে ফ্ল্যাটের ভাড়া বেড়েই চলেছে – সেখানে ‘ভে.গে.’ অগতির গতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
ফ্ল্যাট ছাড়বার আগে চুনকাম করতে হবে
জার্মানিতে ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে সাধারণত তা সারিয়ে-সুরিয়ে, চুনকাম করে, বাসযোগ্য করে দিয়ে যেতে হয়৷ এর সুবিধেটা ভোগ করেন পরের ভাড়াটে, যতক্ষণ না তাঁর নিজের ফ্ল্যাট ছাড়ার সময় আসে৷ ফ্ল্যাটের চুনকাম, মেরামতি কখন হবে, কিভাবে হবে, কে করবে বা করাবে – এর খানিকটা লেখা থাকে ভাড়ার চুক্তিপত্রে; বাকিটার নিষ্পত্তির জন্য আছে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন-কানুন৷
ছবি: picture alliance/Denkou Images
কিচেনের কি হবে?
জার্মানিতে বাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে রান্নাঘরের ক্ষেত্রে তিনটি পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে: (১) ফ্ল্যাটের সঙ্গে সাজানো-গোছানো, ফ্রিজ-কুকিং রেঞ্জ-ডিপ ফ্রিজ সুদ্ধু কিচেন আছে (এটা সাধারণত একেবারে নতুন ফ্ল্যাটে); (২) খালি রান্নাঘর, সাজ-সরঞ্জাম সব নিজেকে কিনে নিতে হবে; (৩) আগের ভাড়াটিয়াকে কিছু নগদ ধরে দিয়ে তার কিচেনের জিনিসপত্র ‘কিনে’ নেওয়া যাবে – যা সাধারণত ঘটে থাকে৷
ছবি: DW/S. Braun
পুরনো বাড়ি হলে বাথরুমটা দেখে নেবেন
তার কারণটা খুব সহজ: সে আমলের – মানে শ’খানেক বছর আগে তৈরি ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে বাথরুম-টয়লেটের ছড়াছড়ি ছিল না; কয়েকটি পরিবার মিলে হয়ত একই বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার করতেন৷ পরে এই বাড়িগুলোকে যখন ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে নেওয়া হলো, তখন যেখানে সম্ভব বাথরুম-টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ ফলে বাথরুম-টয়লেট একটা শোয়া কি বসবার ঘরের মতো বড় হতে পারে, আবার টেলিফোন বুথের মতো ছোট হতে পারে!
ছবি: DW/S. Braun
সব ঘরই কিন্তু শোয়ার ঘর নয়!
জার্মানিতে ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপনে কোন ঘর কত বর্গমিটার, সেটা বলে দেওয়া থাকে আর কিচেন-বাথরুম আলাদা করে দেখানো থাকে৷ নয়ত ভাড়াটিয়া কোন ঘরটাকে বেডরুম, আর কোন ঘরটাকে বসবার কিংবা পড়ার ঘর করবেন, সেটা তার নিজের মর্জি৷ আসল কথা হলো ফ্ল্যাটের সাইজ৷ জার্মানির যে তিনটি শহরে বাড়িভাড়া সবচেয়ে বেশি, সেগুলি হলো মিউনিখ (বর্গমিটার প্রতি ১৬ ইউরোর বেশি), ফ্রাংকফুর্ট (১৩ ইউরোর কিছু বেশি) ও স্টুটগার্ট (প্রায় ১৩ ইউরো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের কয়েকটি শহর কর্তৃপক্ষ আইন করেছে৷ বার্লিনেও ২০১৬ সালে এমন একটি গৃহায়ন আইন করা হয়৷ গতবছর তার সুফল পাওয়া গেছে বলে বার্লিনের স্থানীয় গণমাধ্যম আরবিবিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে৷ বার্লিনের ‘সেনেট ডিপার্টমেন্ট ফর আর্বান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হাউজিং'-এর বরাত দিয়ে আরবিবি জানাচ্ছে, নতুন আইনের কারণে ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া করার মতো অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা প্রায় আট হাজার বেড়েছে৷ এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট এয়ারবিএনবি-র মতো ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত ছিল৷
নতুন আইনে বলা হয়, যাঁরা অবৈধভাবে অল্প সময়ের জন্য বাড়ি ভাড়া দেবেন তাঁদের এক লক্ষ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে৷ আরবিবির প্রতিবেদন বলছে, গতবছর জরিমানার পরিমাণ ছিল ২৬ লক্ষ ইউরোর বেশি৷
সামাজিক গণতন্ত্রী বা এসপিডি দলের নেতৃত্বাধীন বার্লিনের সাবেক সেনেট ঐ আইন প্রনয়ন করেছিল৷ তবে এই আইন সংবিধানসম্মত কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত৷ বার্লিনের উচ্চতর প্রশাসনিক আদালত এ সংক্রান্ত মামলাটি সাংবিধানিক আদালতের কাছে পাঠিয়েছে৷ তবে এ বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কোনো তারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি৷
এদিকে, বাম, সবুজ আর এসপিডি মিলে গঠিত হওয়া সেনেটের নতুন সরকার আরেকটি আইন প্রনয়নের কাজ করছে৷ সেটি কার্যকর হলে বাড়ির মালিকরা বিশেষ অনুমতি ছাড়া পর্যটকদের কাছে বছরে সর্বোচ্চ ৬০ দিন ভাড়া দিতে পারবেন৷
উল্লেখ্য, আমস্টারডাম, প্যারিস, বার্সেলোনা সহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বাধার মুখে পড়েছে এয়ারবিএনবি৷
মিলান গাগনোন/জেডএইচ
বুদ্ধির গুণে স্বল্প জায়গাতেও বসবাস সম্ভব
থাকার জন্য জায়গা খুব কম হলেও মানুষ কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে তার সমাধান করতে পারে৷ আর তারই কিছু নমুনা পাওয়া যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Alexandra
নির্ঘুম রাত
বিশ্বে প্রায় সব বড় শহরগুলোতেই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তাই আর উপায় না দেখে ছোট ছোট ঘরকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগিয়ে থাকার উপযোগী করে তুলছেন কেউ কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেকড়ে বন্ধু
জাপানের দক্ষিণে তানেগাশিমা দ্বীপে মিনসইয়ুকু সাইরিয়ুকিয়োর একটি গেস্টহাউজ রয়েছে, যেখানে তিনি থাকেন এবং কাজ করে৷ নিজের যন্ত্রপাতিগুলো দেয়ালেই ঝুলিয়ে রাখেন তিনি৷ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কাপড়ের তৈরি নেকড়েটি, যা তিনি স্থানীয় বিনোদন পার্কের পরিচালকের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন৷
ছবি: Minsyuku Seiryukyo
কাপড় ধোয়া হয়
বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাপন এবং বাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে আমস্ট্রারডামবাসীদেরও৷ বাধ্য হয়ে রান্না ঘরেই তাঁদের রাখতে হচ্ছে কাপড় ধোয়ার ছোট্ট মেশিন৷
ছবি: clouds
ক্যারাভানে জীবনযাপন
বার্লিনে বাড়ি ভাড়া কম বলেই মানুষ জানতো৷ তবে গত পাঁচ বছরে সেটাও শতকরা ৪০ ভাগ বেড়েছে৷ বিনামূল্যে বাসস্থানের প্রতিযোগিতা সেখানে এতটাই বেড়ে গেছে যে, অনেকে ক্যারাভানে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Jones
বরফে কাপড় শুকানো হয়
অনেকের পরিবারেই কাপড় শুকানো হয় বাইরে দড়িতে ঝুলিয়ে৷ অর্থাৎ শীত-গ্রীষ্ম সারা বছরই কাপড় শুকানো হয় ঘরের বাইরে৷ এমনকি বাইরেটা যখন তুষারে ঢাকা থাকে তখনও এর ব্যাতিক্রম হয় না৷ কেমন করেই বা হবে? বাড়িতে তিলমাত্র জায়গা নেই যে!