ব়্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, দুই বছর থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই তরুণেরা নিরুদ্দেশ হয় ৷ পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ে তাদের জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে ৷
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন ব়্যাব মুখপাত্র ৷
গ্রেপ্তাররা হলেন- কুমিল্লার মসজিদুল কোবার ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ (৩২), নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মোহাম্মদ হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮), সাইফুল ইসলাম ওরফে জায়দ চৌধুরী রনি (১৯) ৷
রোববার রাতে ব়্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও ব়্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় ৷
ব়্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, হাবিবউল্লাহ দুই বছর আগে নেয়ামতউল্লাহর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য হন ৷ তখন থেকেই হাবিবউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন ৷ সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে ৷
‘‘তিনি এই সংগঠনের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারীও। বিভিন্ন মাদ্রাসার কথা বলে চাঁদা তুলে তিনি সংগঠনে দিয়েছেন ৷ কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাতজন ছাত্রকে রিক্রুট করা, ব্রেইন ওয়াশের দায়িত্ব ছিল হাবিবউল্লাহর ৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেছেন ৷’’
ব়্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘‘পার্বত্য অঞ্চলে কিছু বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিখোঁজদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ৷ সেখানে তারা নতুন ওই জঙ্গি সংগঠনের নামেই অবস্থান করছে ৷ নিখোঁজদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৷ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৷
‘‘তাদের নাশকতার কী পরিকল্পনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৷ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে ৷ আরও গ্রেপ্তার হলে তারপরে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বলা যাবে৷’’
কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ আগস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার ৷ পরে জানা যায়, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়ে' লাপাত্তা হয়েছে ওই তরুণরা৷ তাদের মধ্যে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর গত ৬ অক্টোবর ব়্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত৷
ওই সাতজনের কাছ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, জঙ্গি সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ', জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছিল৷
সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেছিলেন, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুই তরুণ গত এক বছর ধরে কুমিল্লার মসজিদ কোবার ইমাম হাবিবউল্লাহর সংস্পর্শে ছিলেন৷ হাবিবউল্লাহই তাদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করেন, পরে গত ২৩ আগস্ট তারা বাড়ি ছেড়েছিলেন৷ রোববার রাতে র্যাবের অভিযানে হাবিবউল্লাহসহ সেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
হাবিবুল্লাহর বাড়ি কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের লইপুরা এলাকায়৷ কুমিল্লা শহরের কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর সেখানেই শিক্ষক ছিলেন তিনি৷ পরে কোবা মসজিদের ইমাম হিসেবে যোগ দেন ৷ কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করতেন তিনি৷
নতুন জঙ্গি দলে যুক্ত যে ৫৫ জনের সন্ধান ব়্যাব পেয়েছে, তাদের ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করে ব়্যাব কর্মকর্তা মঈন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিকদের৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
২০১৯ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
নানা মত, নানা পথকে পাথেয় করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো৷ বাংলাদেশে মসজিদ থেকে আদালত, মেলা থেকে সিনেমা হল- কিছুই বাদ যায়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর থাবা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
ছবি: bdnews24.com২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
ছবি: DW/ISPR২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
ছবি: bdnews24.com২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
ছবি: APবিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
ছবি: Robert Richter২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
ছবি: bdnews24.com২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munirকিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com