৭০৯ জন সদস্য বিশিষ্ট নতুন জার্মান সংসদ সাবেক অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে-কে নতুন সংসদ সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করেছে৷ ৭৫ বছর বয়সি শয়েবলে ১৯৭২ সাল খেকে বুন্ডেস্টাগের সদস্য৷
বিজ্ঞাপন
প্রদত্ত ও বিধিসম্মত ৭০৪টি ভোটের মধ্যে শয়েবলে পেয়েছেন ৫০১টি ভোট ৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল প্রথমে শয়েবলে-কে অভিনন্দন জানান৷
সংসদ সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রথম ভাষণে শয়েবলে এই পদে তাঁর পূর্বসুরী নরব্যার্ট লাম্যার্টকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷ লাম্যার্ট ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল অবধি সংসদ সভাপতি ছিলেন৷
‘‘গণতন্ত্রের হৃদস্পন্দন হলো এই সংসদ,'' শয়েবলে তাঁর ভাষণে বলেন ও ঘোষণা করেন, ‘‘আমি মনে-প্রাণে একজন সাংসদ৷''
বিতর্ক ও বিরোধ সংসদীয় গণতন্ত্রের বুনিয়াদি সংস্কৃতির অঙ্গ হলেও, ন্যায়সম্মত ব্যবহার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে বাদ দেওয়া চলবে না বলে শয়েবলে মনে করেন৷ বিগত কয়েক মাসে যে ধরণের বিদ্বেষ ও অবমাননা সূচক মন্তব্য শোনা গেছে, সভ্য বিতর্কে তার কোনো স্থান নেই বলে শয়েবলে ঘোষণা করেন৷ ‘‘আমাদের এখানে মারামারি করলে চলবে না৷''
দক্ষিণপন্থি-জাতীয়তাবাদি এএফডি দল সংসদে আসন গ্রহণ করা সত্ত্বেও শয়েবলে সাংসদদের পরস্পরের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আদানপ্রদানে ধৈর্য না হারাবার আবেদন জানান৷ তবে তিনি জানেন যে, উত্তেজনা ও বৈরিভাব অতীতেও এসেছে ও গেছে; কাজেই আগামীতে সংসদে যে ধরণের বিতর্কের অবতারণা ঘটবে, সে বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন বলেও জানিয়েছেন৷
প্রবীণতম সাংসদ নিয়ে বিতর্ক
নতুন বুন্ডেস্টাগের ‘আল্টার্সপ্রেসিডেন্ট' বা ‘বয়োজ্যেষ্ঠ সভাপতি' হবার কথা বস্তুত ৭৭ বছর বয়সি ভিলহেল্ম ফন গটব্যার্গ-এর, যিনি এএফডি দলের সাংসদ৷ কিন্তু এ বছরের সূচনায় নিয়ম বদলে বয়সের পরিবর্তে সংসদীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ‘আল্টার্সপ্রেসিডেন্ট' মনোনয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রেও বস্তুত শয়েবলের ‘বয়োজ্যেষ্ঠ সভাপতি' হবার কথা ও অধিবেশন উদ্বোধন করার কথা৷ কিন্তু যেহেতু আগে থেকেই স্থির করা ছিল যে, শয়েবলে সংসদ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হবেন, সেহেতু এফডিপি দলের ৭৬ বছর বয়সি সাংসদ অটো সল্মস নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধনের দায়িত্ব পান৷
সল্মস তাঁর ভাষণে নির্বাচনি আইনের সংস্কার দাবি করে বলেন, ‘‘সংসদের এই অতিকায় আয়তন নাগরিকদের দৃষ্টিতে তার কর্মক্ষমতা ও ভাবমূর্তির হানি ঘটায়৷'' বর্তমান সংসদের সদস্যসংখ্যা ৭০৯, যা শুধু জার্মানিতেই নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের অপরাপর সংসদের সঙ্গে তুলনাতেও একটা রেকর্ড৷ এছাড়া সংসদে উপস্থিত দলগুলির সংখ্যা চার থেকে বেড়ে ছয় হয়েছে৷
বিরোধীদলের ভূমিকায় এসপিডি
সামাজিক গণতন্ত্রী দল আগামীতে সংসদে মুখ্য বিরোধীদলের ভূমিকা নেবে৷ মঙ্গলবারের প্রথম অধিবেশনেই এসপিডি দল একটি প্রস্তাব আনে যে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কমপক্ষে বছরে চার বার সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেবেন৷ ‘‘বুন্ডেস্টাগকে আবার রাজনৈতিক বিরোধ ও বিতর্কের প্রধান মঞ্চ করে তুলতে হবে,'' বলেন সংসদে এসপিডি দলের পার্টি হুইপ কার্স্টেন শ্নাইডার – এফডিপি দলের পার্টি হুইপমার্কো বুশমান যাকে ‘‘লোক-দেখানো ফাঁকা চমক'' বলে অভিহিত করেন৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, এএফডি, রয়টার্স)
জার্মানিতে সরকার গঠন করবে জামাইকা কোয়ালিশন?
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ সিডিইউ-সিএসইউ ওএসপিডি-কে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট নয়, নতুন সরকারের রং হতে পারে কালো-হলুদ-সবুজ৷ অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ-এর সঙ্গে জোট গড়তে পারে এফডিপি ও সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
জার্মানিতে বিদেশি পতাকার রং
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবারো নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে সিডিইউ বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা৷ অর্থাৎ চতুর্থবারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত কালো-হলুদ নয়, দেখা দিতে পারে জামাইকা, কেনিয়া বা ট্র্যাফিক লাইটের মতো কোয়ালিশন৷
ছবি: Getty Images
কালো-লালের দিন শেষ?
চার বছর আগে, সিডিইউ-সিএসইউ আর সামাজিক গণতন্ত্রী, মানে এসপিডি দল একত্রে জোট সরকার গঠন করেছিল৷ অর্থাৎ বৃহৎ কোয়ালিশনের রং ছিল কালো-লাল৷ কিন্তু ২০১৭ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস বেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে এবার আর মহাজোটের সম্ভাবনা নেই৷ বরং বিরোধী দল হিসেবেই সংসদে বসবে এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
তৃতীয় বৃহত্তম দল এএফডি
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা জার্মানির জন্য বিকল্প দল (এএফডি)৷ এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে৷ তুলনামূলকভাবে জার্মানির রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন দল হলেও, প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাস পরের নির্বাচনেই প্রায় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দেয় এই দল৷ আর এবার, সেই এএফডি-ই তৃতীয় বৃহত্তম দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জামাইকা কোয়ালিশন
নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালেই এএফডি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি, মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি), সবুজ দল এবং বামদলের মতো বড় দলগুলি৷ নির্বাচনের পরেও তারা সেই অবস্থানেই রয়েছে৷ তাই এএফডি যদি জোটের বাইরে থেকে যায়, তবে সরকার গঠন করতে সিডিইউ-সিএসইউ দলের হাত ধরতে পারে এফডিপি আর সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কেনিয়া কোয়ালিশন
ভোটের অঙ্ক অনুযায়ী অবশ্য আরো একটি কোয়ালিশনের সুযোগ আছে৷ আর সেটা হচ্ছে সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি এবং সবুজ দলের, যদিও প্রথম দুটি দলেরই সম্মিলিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে৷ অর্থাৎ কেনিয়ার ফ্ল্যাগের রঙে কালো-লাল-সবুজের৷ অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিলেও গত বছর স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যেও কিন্তু জোট গঠন করেছিল এই দলগুলি৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
লাল-লাল-সবুজ
এসপিডি আর বামদলের সঙ্গে সবুজ দলের জোট হলে তা হতে পারতো লাল-লাল-সবুজের জোট৷ তবে সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে এসপিডি দলের ভরাডুবির ফলে সে সম্ভাবনা আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Reichel
ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন
যথেষ্ট আসনসংখ্যা না থাকার কারণে লাল-হলুদ-সবুজ বা এসপিডি-এএফডি আর সবুজ দলেরও আর জোট গড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷