আইএস জঙ্গি, নাম আবু রুমায়েশ৷ ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে কথা বলে৷ আসলে নাকি বঙ্গসন্তান, ধর্মান্তরিত হবার আগের নাম সিদ্ধার্থ ধর৷ ব়্যাডিকাল ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হয় সে৷ ইউরোপের অনেক তরুণদের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এক অভিযানে ‘প্রথম' জিহাদি জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল৷ ব্রিটিশ এই তরুণ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর নৃশংসতার প্রতিক হয়ে উঠেছিল৷ এবার আর এক ব্রিটিশ আইএস গোষ্ঠীর জঙ্গির মূল পরিচয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে৷
মুখোশ পরা সেই ব্যক্তি এক বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে হুমকি দিয়েছে৷ সেই ব্যক্তির সঙ্গে আবু রুমায়েশ-এর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে৷ ব্রিটেনে জন্মের সময় তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ ধর৷ ধর্মান্তরিত হবার পর সে আল মুহাজিরুন নামের এক কট্টরপন্থি গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি হয়ে পড়ে৷ তার বোন কণিকা ধর এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন, যে নতুন জিহাদি জন সত্যি তার ভাই কিনা৷
প্রথম অথবা দ্বিতীয় ‘জিহাদি জন'-এর জীবনকাহিনি মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়৷ ইউরোপে জন্মগ্রহণ করে, মুক্ত ও উদার সমাজে বড় হওয়া সত্ত্বেও অনেক তরুণ-তরুণী আইএস-এর ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে৷ আইএস তাদের লুফে নিয়ে নানাভাবে কাজে লাগাচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারকে ফ্রান্সের অন্যতম রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অলিভিয়ে রোয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এমন প্রবণতার বিশ্লেষণ করেছেন৷ তাঁর মতে, তরুণদের একাংশের বিদ্রোহী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে জিহাদি মনোভাবের মাধ্যমে৷ যেমনভাবে তিন দশক আগে চরম বামপন্থি ভাবধারা ইউরোপে তরুণদের আকৃষ্ট করতো৷ এছাড়া বিদেশি বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সংস্কৃতির সঙ্গে অনেকে ইউরোপের মূল স্রোতের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে পারছে না৷ গোটা বিষয়টির উপর বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছেন অলিভিয়ে রোয়া৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/J. Greve
6 ছবি1 | 6
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
আপনি কি নতুন এই জিহাদি জন সম্পর্কে আরো তথ্য জানেন? তাহলে জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷