গত সপ্তাহে মার্কিন বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন৷ টিরানোসরাস এক্স-এর মতো দেখতে এই ডাইনোসরদের হাত আপনাআপনি গজিয়ে ওঠে, যা বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের৷
বিজ্ঞাপন
Model of newly discovered dinosaur species unveiled
01:01
মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, আর্জেন্টিনায় পাওয়া এই দু'পায়ের জীবটির ফসিলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬ ফুট৷ এদের ওজন সাধারণত ৪৫০ কিলোগ্রাম৷ জীবাশ্মটি উত্তরাঞ্চলের রিও নেগ্রো প্রদেশে পাওয়া গেছে৷ সেখানে এ ধরনের ডাইনোসরররা গুয়ালিচো নামে পরিচিত৷ সেখানে বরবাসরত আদিবাসী তেহুয়েলচে সম্প্রদায় গুয়ালিচো বলতে প্রাণি ও বাতাসের শক্তিকে বোঝায়৷ প্রস্তরযুগের ডাইনোসরদের সবারই যে ধরনের হাত থাকে এরা তা থেকে ভিন্ন৷ এদের হাতও দেহের তুলনায় ছোট কিন্তু হাত আপনা-আপনি গজায়৷
তাই এদের কোনো নির্দিষ্ট ক্যাটেগরিতে ফেলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ হাত খসে যাওয়ার পরও কীভাবে তা আবার গজিয়ে ওঠে এ বিষয়টি গবেষণা করার পরই তাদের একটি নির্দিষ্ট ক্যাটেগরিতে ফেলা যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷ এটি থেরোপড প্রজাতির ডাইনোসর, যে ধরনের ডাইনোসর দুই পা বিশিষ্ট এবং পাখির মতো৷ তাই টিরানোসরাস এক্স-এর সঙ্গে এদের মিল থাকলেও এরা যে একই প্রজাতি নয় তা বোঝা যায়৷ নাইজারে এ ধরনের একটি ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল৷ ডেল্টাড্রমেয়াস নামের ঐ ডাইনোসর এদের পূর্বপুরুষ বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এত বড় একটি দেহ এবং বিশাল একটা মাথা সত্ত্বেও এদের হাতের আকার যেন দেহের সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ আর হাতে আঙ্গুল মাত্র দুটো৷
জার্নাল প্লস ওয়ানে এই গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণার ফলাফলে যা বেরিয়ে এসেছে, তাতে বোঝা যায় টিরানোসরাস এক্স, গুয়ালিচো'র মতোই মাংসাশী এবং ২ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে উত্তর অ্যামেরিকায় এদের বাস ছিল৷
গবেষণায় বলা হয়েছে, সমতল ভূমিতে, যেখানে প্রায়ই বন্যা হতো, এমন জায়গায় ছিল এসব ডাইনোসরদের বাস৷ তাদের সঙ্গে বৃহৎ আকৃতির অন্য ডাইনোসররাও চলাফেরা করত ঐ অঞ্চলে৷ এসব বৃহদাকৃতির ডাইনোসরের মধ্যে ছিল লম্বা ঘাড় ও চার পা বিশিষ্ট তৃণভোজী আর্জেন্টিনোসোরাস৷ এদের দৈর্ঘ্য ছিল ১১৫ ফুটের মতো৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯ কোটি বছর আগে যেসব ডাইনোসর ছিল, তাদের বিশাল মাথা এবং ধারালো দাঁত শিকারের কাজে ব্যবহৃত হতো৷ হাতের কাজ খুব একটা ছিল না৷ যতদিন না মাথার সাথে তাদের লেজের সামঞ্জস্য হয়েছে, ততদিন হাতের কোনো ব্যবহার না থাকায় হাত দেহের তুলনায় এত ছোট ছিল৷
ডাইনোসরদের রাজা বার্লিনে
টিরানোসরাস রেক্স-এর সাজানো কঙ্কাল সারা বিশ্বে বেশি নেই, বড়জোর ৫০টি৷ এবার ইউরোপেও: টি-রেক্স আসছে বার্লিনের ‘মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি’-তে, আগামী তিন বছরের জন্য৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
সুবিশাল মাথা
টিরানোসরাস রেক্স-এর মাথাটা তার বাকি দেহের তুলনায় এত বেশি ভারী যে, সেটা আলাদা করে একটি ডিসপ্লে কেস-এ দেখাতে হয়! ওদিকে টি-রেক্স-এর দেহটাই হলো লম্বায় ১২ মিটার৷ দেড় মিটার লম্বা মাথার খুলিটির প্রায় ৯৮ শতাংশ অক্ষত ছিল, কাজেই এটা টি-রেক্স-এর সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মাথার খুলি বলা চলে৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
এক্সপ্রেস ডেলিভারি
বার্লিনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সংগ্রহশালার কর্মীরা মাত্র এক মাস সময় পেয়েছিলেন টি-রেক্স-এর কঙ্কালটি জোড়া দেবার জন্য৷ আদত কঙ্কালটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যে৷ পরে সেটি বাক্স করে সাগরপাড়ি দিয়ে বার্লিন পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
টি-রেক্স সুপারস্টার
সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে টিরানোসরাস রেক্স বিলুপ্ত হয় – তা সত্ত্বেও সে হাল আমলের পপ সংস্কৃতির এক সেলিব্রিটি! বিশেষ করে ‘জুরাসিক পার্ক’ ফিল্মটির কল্যাণে৷ তবে গবেষকদের ধারণা যে, টি-রেক্স যত না শিকারি ছিল, তার চেয়ে বেশি পচা মাংসের খোঁজে থাকত৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
বার্লিনের এই টি-রের্ক্সটির নাম ট্রিস্টান হলো কী করে
ডেনমার্কের বাসিন্দা নিলস নিলসেন চিরকালই ডাইনোসরদের ফ্যান৷ পরে হন লন্ডনের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার – এবং এতই সফল যে, টি-রেক্স-এর সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত কঙ্কালটি কিনতেও তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি৷ নিলসেন কঙ্কালটির নাম রাখেন নিজের ছেলের নামে: ট্রিস্টান৷
ছবি: Niels Nielsen
দৈত্যাকার জিরাফ
ব্রাকিওসরাস ব্রাঙ্কাই সবচেয়ে অতিকায় ডাইনোসরদের মধ্যে গণ্য৷ গণ হিসেবে সরোপড৷ তারও একটি কঙ্কাল রাখা আছে বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামে৷ এই জীবটিও জুরাসিক আমলের৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
যে টিকটিকিকে ধরা যায় না
ডাইসালোটোসরাস মানে হলো ‘যে টিকটিকি-কে ধরা যায় না’৷ টি-রেক্স-এর মতো অতটা খ্যাত না হলেও, এই পাঁচ মিটার লম্বা জীবটিও ছিল টি-রেক্স-এর মতোই সর্বভূক, বিশেষ করে ছোট থাকাকালীন – অন্তত বিজ্ঞানীরা তাই বলেন৷
ছবি: Museum für Naturkunde Berlin
জীবাশ্ম-বিজ্ঞানের পথিকৃৎ
বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম বহুদিন ধরেই ডাইনোসরদের হাড়গোড়ের খোঁজ চালাচ্ছে৷ বিংশ শতাব্দীর সূচনায় এই মিউজিয়াম থেকে বর্তমান তানজানিয়ার তেঙ্গাদুরু হিল এলাকায় একটি অভিযাত্রী দল পাঠানো হয়, যারা বার্লিনে মোট ২৫০ টন ‘ফসিল’ পাঠায়৷ সেই সব ফসিলের মধ্যে বেশ কিছু এখনও মিউজিয়ামের সেলারে রয়েছে ও তা নিয়ে গবেষণা চলেছে৷
ছবি: Museum für Naturkunde Berlin
বার্লিনের একটি নতুন আকর্ষণ
বার্লিনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সংগ্রহশালা খোলা হয় ১৮৮৯ সালে৷ এটি জার্মানির বৃহত্তম ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম৷ টি-রেক্স-কে নিয়ে নতুন প্রদর্শনীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সক্রিয় বিবর্তন’৷ বিশ্বের বৃহত্তম ডাইনোসর কঙ্কালের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ছোট ছোট পোকামাকড় ও মাছ, যার সব কিছুই বিবর্তনের প্রতীক৷ প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ দর্শক আসেন এই মিউজিয়ামে৷