এত সহজে নিস্তার পাচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এফবিআই প্রধান হিসেবে জেমস কোমি-কে বরখাস্ত করে রাশিয়ার ‘ভূত' তাড়ানোর আশা করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত উলটে বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ও ট্রাম্প টিমের সঙ্গে রাশিয়ার অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ কমার বদলে আরও বেড়ে গেছে৷ কারণ,প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে বিষয়ে তদন্তে বাধা দেবার চেষ্টা করে চলেছেন৷ এবার মার্কিন কংগ্রেসের চাপে বিচার মন্ত্রণালয় প্রাক্তন এফবিআই প্রধান রবার্ট ম্যুলারকে নিরপেক্ষ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার সময়ে তিনি এফবিআই-এর প্রধান ছিলেন৷ সংস্থার বিশাল সংস্কার করে তিনি দলমতনির্বিশেষে শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছিলেন৷
রাশিয়ার প্রভাব সংক্রান্ত তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অর্থ ও ক্ষমতা পাচ্ছেন রবার্ট ম্যুলার৷ এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাঁকে বরখাস্ত করতে পারবেন না৷ তদন্তের ফলাফল সরাসরি বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে পেশ করবেন তিনি৷ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টিন এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করে বলেন, মার্কিন জনগণ এবার তদন্তের ফলাফলের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারবেন৷ অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস নিজে ট্রাম্প টিমের সদস্য হিসেবে সন্দেহের পাত্র হওয়ায় নিজেকে রাশিয়া সংক্রান্ত তদন্ত থেকে দূরে রেখেছেন৷
এই খবর পেয়ে ট্রাম্প অন্তত প্রকাশ্যে শান্ত থাকার চেষ্টা করছেন৷ যদিও নেপথ্যে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ বলে কিছু মহল দাবি করছে৷
তিনি নিজের টিমকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজে মন দেবার ডাক দিয়েছেন৷ এমনকি তিনি তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তিনি নিজে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করে আসছেন, যাতে দ্রুত প্রমাণ হয়ে যায় যে, তাঁর নির্বাচনি প্রচারের সঙ্গে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না৷ তবে জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার পর তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ আরও দানা বাঁধছে৷ বুধবার এক ভাষণে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইতিহাসে কোনো রাজনীতিক তাঁর মতো বঞ্চনার শিকার হননি৷
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷