মার্কিন ড্রোন হামলায় মনসুর নিহত হবার পর তালেবানের নতুন শীর্ষ নেতা হলেন আখুনজাদা৷ অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়াও আফগান সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সামলাতে হবে তাঁকে৷
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় মোল্লাহ আখতার মনসুর নিহত হবার পর তালেবানের নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন মৌলভী হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদা৷ তালেবানের মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে বাকি শীর্ষ নেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে৷
শনিবার মোল্লাহ আখতার মনসুরের মৃত্যুর পর রবিবার থেকে পাকিস্তানে তিন দিন ধরে চলেছে শুরা বা নেতৃত্ব পরিষদের বৈঠক৷ অবশেষে মনসুরের মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করে মৌলভী হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদাকেই নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ ফলে নেতৃত্বের দায়িত্ব তথাকথিত কান্দাহার গোষ্ঠীর হাতেই রয়ে গেল৷
আখুনজাদা সম্পর্কে বেশি তথ্য জানা যাচ্ছে না৷ জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি তালেবানের প্রধান বিচারপতি ছিলেন৷ তালেবান প্রধান মোল্লাহ ওমরের ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন বলেও জানা গেছে৷ সরাসরি সংঘাত-সংঘর্ষে তিনি অংশ নেননি৷ এতকাল তিনি নেতৃত্বের সামনের সারিতেও ছিলেন না৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে তিনি সফল হবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও তাঁর সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷
আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রশ্নে আখুনজাদা কী অবস্থান নেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে অনেক মহল৷ তাঁর পূর্বসূরি মনসুর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন৷ মার্কিন ড্রোন হামলার প্রেক্ষাপটে শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে৷ নির্বাচিত হবার মাত্র ৯ মাসের মধ্যে মনসুরকে যেভাবে হত্যা করা হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানের উপর চাপ বজায় রাখতে ওয়াশিংটন আরও হামলা চালাতে পারে বলে মনে করছে কিছু মহল৷
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা
এক বছর আগে শিশুদের রক্তে ভেসেছিল পেশাওয়ারের একটি স্কুল৷ স্কুলের শিক্ষার্থীসহ দেড়শ’রও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তালেবান৷ এবার পেশাওয়ারের কাছেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তালেবান৷ পাকিস্তানে রক্তবন্যা চলছেই৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
ভয়াবহ সেই দিন
গত ডিসেম্বরেই পেশাওয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তি হলো৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শোকাবহ সেই দিনকে স্মরণ করতে গিয়ে শুধু নিহত ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাই জানাননি, পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছিলেন৷ওপরের ছবিতে ২০১৪ সালে পেশাওয়ারের স্কুলে তালেবান হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী৷
ছবি: Reuters
আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
২০১৪ সালে স্কুলের শিশুদের ওপর চালানো সেই হামলার বর্ষপূর্তির এক মাস পেরোতেই পেশাওয়ারের কাছের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিল জঙ্গিরা৷ পেশোয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের চারসাড্ডা এলাকার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার সময় হাজার খানেক শিক্ষার্থী ছিল৷ হামলার পর দ্রুতই সেখানে সেনাসদস্যরা চলে আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
‘হামলাকারীদের কোনো ধর্ম নেই, ধর্ম বিশ্বাস নেই’
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলার খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হামলাকারীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ একজন ধর্মবিশ্বাসী কখনো অকারণে হত্যা বা নিরীহ মানুষ হত্যা করতে পারে না – এমন যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘‘এই হামলাকারীদের কোনো ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস নেই৷’’ শরিফ জানান, তাঁর সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত করার সংগ্রাম আরো দৃঢ়ভাবে চালাবে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আরো ব্যাপক হতে পারত ক্ষয়ক্ষতি
হামলায় এ পর্যন্ত ২১ জন নিহত এবং ৭০ জানের মতো আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান শুরু না করলে রক্তক্ষয় ও প্রাণহানি আরো ব্যাপক হতে পারতো৷ ওপরের ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
কেন এই হামলা?
ইতিমধ্যে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তালেবান৷ জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে তাদের সঙ্গীদের হত্যা করেছে তার প্রতিশোধ হিসেবেই চালানো হয়েছে এই হামলা৷ওপরের ছবিতে দুই তালেবান জঙ্গি৷