বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ অনেকেই বলছেন এই আইন মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন বিরোধীরা সত্য ‘বিকৃত’ করছে৷
বিজ্ঞাপন
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সংঘর্ষে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ বিক্ষোভ ও সহিংসতা কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
গত সপ্তাহে পাস হওয়া এই আইনে প্রতিবেশি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভারতের নাগরিকত্ব আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে৷ কিন্তু এই সংখ্যালঘুর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে মুসলিমদের৷ বিক্ষোভকারীরা পরদিনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ তাদের দাবি, এই আইন ভারতের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷
এই বিক্ষোভের মধ্যেই দিল্লির নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন মোদী৷ রাজধানী দিল্লির এই সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘এই আইন ১৩০ কোটি ভারতীয়র ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ এবং আমি ভারতের মুসলিমদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই আইন তাদের অবস্থানেও কোনো পরিবর্তন আনবে না৷’’
তার সরকার কোনো ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সংস্কার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে বলেও দাবি করেন মোদী৷ তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় আমরা কাউকেই জিজ্ঞেস করি না, তিনি মসজিদে যান না মন্দিরে৷’’
বরং বিরোধী দলগুলোর দিকে পালটা তির ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ বলছেন, সরকারকে দুর্বল করার জন্য সত্য বিকৃত করছে তারা৷
রোববারও রাজধানী নতুন দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে৷ আগামি বছরের শুরুতেই দিল্লিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
কঠোর অবস্থান
বিক্ষোভ মোকাবেলায় মোদীর সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে৷ জমায়েত ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা৷ বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ মাধ্যমকে সহিংসতা ‘উসকে দেয়' এমন সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে৷
নতুন দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ কিন্তু এতো কিছুর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের৷
শনিবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে নতুন আইন নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা জানাতে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ বিজেপি দেশজুড়ে দুই শতাধিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে৷
এডিকে/এফএস (এপি, রয়টার্স)
ভারতে গত এক দশকের সাড়া জাগানো নাগরিক আন্দোলন
গত দশ বছরে ভারতে বেশ কিছু নাগরিক আন্দোলন হয়েছে৷ খুব সাড়া জাগানো আন্দোলনগুলো সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: AFP
নির্ভয়া আন্দোলন, ২০১২
ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে এক নারীর গণধর্ষণের ঘটনা নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে৷ বিচার চেয়ে পথে নামে হাজার হাজার মানুষ৷ কয়েক সপ্তাহব্যাপী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন সমাজের সবস্তরের মানুষ৷ ফলে দিল্লি ছাড়াও একাধিক রাজ্যে চালু হয় সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন৷ দ্রুতগতিতে বিচারের কাজ সারতে শুরু হয় ‘ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট’৷ বিচারশেষে অভিযুক্ত চারজনের মৃত্যুদণ্ড হলেও এক অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের তিন বছরের কারাবাসের সাজা হয়৷
ছবি: DW/B. Das
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, ২০১১
কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা ইউপিএ সরকারের সাথে জড়াচ্ছে তখন একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিযোগ৷ ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে দুর্নীতি দমনে নতুন, কঠোর আইনের দাবিতে অনশনে বসেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে৷ সেই আন্দোলন থেকেই জন্ম নেয় নতুন রাজনৈতিক দল ‘আম আদমি পার্টি’৷ ২০১২ সালে দলটি দিল্লিতে সরকার গঠন করে৷ সরকারি কার্যকলাপকে বিচারের অধীনে আনতে ২০১৩ সালে পাশ হয় ‘লোকপাল বিল’৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন, ২০১১
পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়তে ব্যবসায়ী রতন টাটাকে কিছু জমি দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ শিল্পের অছিলায় কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশে পান সাধারণ মানুষ থেকে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের৷ ফলস্বরূপ, ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর পতন হয় বামফ্রন্ট সরকারের৷ মুখ্যমন্ত্রীত্ব পান মমতা, নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পায় তৃণমূল কংগ্রেস৷
ছবি: UNI
‘হোক কলরব’, ২০১৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করতে কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই শুরু হয় প্রতিবাদ৷ কর্তৃপক্ষ না টললে এই আন্দোলন গড়ায় অনশনে৷ রাতের অন্ধকারে পুলিশ ডেকে আনেন তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী৷ ক্যাম্পাসে লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ শুরু হয় ‘হোক কলরব’ আন্দোলন৷ ক্রমাগত আন্দোলনের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য হয় অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটি বা আইসিসি গঠন করতে৷
ছবি: Ronny Sen
রাষ্ট্রদ্রোহী জেএনইউ, ২০১৬
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান, এই শুরু৷ গ্রেপ্তার হন দুই ছাত্রনেতা উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও তৎকালীন ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার৷ তদন্তে রাষ্ট্রবিরোধিতার কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এই তিন ছাত্র ও গোটা জেএনইউকে ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ আখ্যা দেন অনেকে৷ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে লড়েন কানহাইয়া৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Chakraborty
সাধারণ ধর্মঘট, ২০১৬
২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সারা দেশজুড়ে পালন করেন ২৪ ঘন্টাব্যাপী কর্মবিরতি ও ধর্মঘট৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে বাড়ন্ত বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সংগঠিত এই ধর্মঘট এখন পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আকারের ধর্মঘট৷ মোট দশটি শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি অসংগঠিত শ্রমিকদেরও স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এই ধর্মঘটে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Paul
কৃষক আন্দোলন, ২০১৮ ও ২০১৯
পরপর দুই বছর, ২০১৮ ও ২০১৯, পথে নামলেন ভারতের কয়েক লাখ কৃষক৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে দিল্লিতে পৌঁছান তারা৷ কমতে থাকা ফসলের দাম, কৃষকের জন্য বরাদ্দ ভর্তুকি ও বীমার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন তারা৷ কিন্তু তার বদলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে আহত হন অনেক কৃষক৷ জল কামান ও লাঠিতে আহত হন অনেকে৷ কিন্তু আগামী বছর আবার পথে নামার কথা বলেছেন তারা৷