ইরান নতুন করে পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করছে বলে তথ্য প্রকাশ করল জাতিসংঘের পরমাণু সংক্রান্ত সংস্থা।
বিজ্ঞাপন
মাটির তলায় ফের পরমাণু প্লান্ট তৈরি করছে ইরান। সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের পরমাণু পরীক্ষা সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান। গত জুলাই মাসে ইরানের বর্তমান পরমাণু কেন্দ্রটিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। ইরান দাবি করেছিল, চক্রান্ত করে ওই কেন্দ্রটিতে আগুন লাগানো হয়েছিল। ফের নতুন একটি পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ওই প্রতিনিধি।
জাতিসংঘে পরমাণু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি। সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রসি। বার্লিনে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ইরানের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। জানান, নতুন করে মাটির গভীরে পরমাণু প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে ইরান। জমাতে শুরু করেছে ইউরেনিয়ামও। তবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মতো ইউরেনিয়াম এখনো তাদের কাছে নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই খবরের শিরোনামে ইরান। ২০০২ সালে প্রথম স্যাটেলাইট ইমেজে ইরানের পরমাণু শক্তিকেন্দ্র নাটানজের ছবি ধরা পড়ে। পশ্চিম বিশ্ব বিষয়টি উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০০৩ সালে জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা ইরানের পরমাণু চুল্লি দেখতে যান। তাঁরা জানান, মাটি থেকে সাত দশমিক ছয় মিটার নীচে তৈরি করা হয়েছে ওই পরমাণু কেন্দ্র। বিমান হানাতেও যাতে কেন্দ্রটির কোনো ক্ষতি না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা এলাকা জুড়ে রাখা হয়েছে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল।
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
10 ছবি1 | 10
পরবর্তীকালে অবশ্য কম্পিউটার ভাইরাসের সাহায্যে ইরানের ওই কেন্দ্র অকেজো করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। অভিযোগ, অ্যামেরিকা এবং ইসরায়েল ওই কাজ করার চেষ্টা করেছিল।
ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে কারণে ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। চুক্তিতে ছিল অ্যামেরিকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য সহ একাধিক রাষ্ট্র। বলা হয়েছিল, পরমাণু গবেষণা করতে পারলেও ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়ামের বেশি জমা করা যাবে না বলেও চুক্তিতে স্থির হয়। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বহু জলঘোলা হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স সহ বহু দেশ এখনো ওই চুক্তিতে থাকলেও বাস্তবে চুক্তিটির আর কোনো বাস্তবতা নেই।
এরই মধ্যে গত জুলাই মাসে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আগুন লাগে। কারো নাম না করলেও ইরান দাবি করে, চক্রান্ত করে আগুন লাগানো হয়েছিল। এরপর ফের তারা পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করছে বলে তথ্য প্রকাশ করল জাতিসংঘ। যা নিয়ে ফের আন্তর্জাতিক কূটনীতি উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যামেরিকা দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করছে, গোপনে নিউক্লিয়ার অস্ত্রও তৈরি করছে ইরান। যদিও তার কোনো প্রমাণ এখনো সামনে আসেনি।