1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন পাঠক্রম ও বই : নতুন পদ্ধতিতে আগামীর সোপান?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ জানুয়ারি ২০২৩

চলতি বছর থেকেই বাংলাদেশে নতুন পাঠক্রম চালু হয়েছে৷ কিন্ত এবার নতুন পাঠক্রম শুধু প্রথম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য৷ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এটা চালু করতে ২০২৮ সাল লেগে যাবে৷

Bangladesch Lehrbuchverteilungsfestival in Mymensingh
ছবি: bdnews24

ওই তিনটি শ্রেণির বইয়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা মূল বইয়ের সাথে পেয়েছে সহায়ক বই৷ এর পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্যও গাইড বই থকার কথা৷ তবে তারা এখনো তা পাননি৷ নতুন পদ্ধতির এই পাঠক্রমকে বলা হচ্ছে ‘অ্যাক্টিভিটি-নির্ভর’ শিক্ষাব্যবস্থা৷ এই পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের মধ্য থেকেই ‘মাস্টার ট্রেইনার’ করা হয়েছে৷ তারা এখন সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন৷ তবে প্রশিক্ষণের সময় এবং পর্যাপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ দেশের ৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই এই পদ্ধতির পাঠক্রম চালু ছিল৷

কেমন হবে এই শিক্ষা পদ্ধতি?

বলা হচ্ছে,  নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না৷ শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুসারে এসএসসি পরীক্ষা হবে৷ একাদশ ও  দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পবালিক পরীক্ষা হবে৷ দুটি পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করে চূড়ান্তভাবে এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা করা হবে৷

শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বেন৷ একাদশ শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য- এই তিন বিভাগে ভাগ হবে৷ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন৷

তাদের শেখার ১০টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ক্ষেত্রগুলো হলো: ভাষা ও যোগাযোগ,গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি৷ প্রাথমিকে থাকবে ছয়টি আর মাধ্যমিকে ১০টি বই৷ সপ্তাহে ছুটি হবে দুইদিন৷

যা শিখবে তা যেন বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারে: মোহাম্মদ তারিক আহসান

This browser does not support the audio element.

প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে৷ তবে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রচলিত কোনো পরীক্ষাই হবে না৷ এরপর থেকে পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন থাকবে৷ দুটি মিলিয়ে ফলাফল নির্ধারণ করা হবে৷ শ্রেণি অনুযায়ী মূল্যায়ন শতকরা ৩০ থেকে ৬০ ভাগ হবে ক্লাসে শিক্ষার সময়ে৷ বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে৷

প্রাথমিকে এরপর প্রতিবছর একটি করে শ্রেণিতে নতুন পাঠক্রম শুরু হবে৷ ২০২৭ সালে প্রাথমিকে পুরো চালু হবে৷ একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতি বছর একটি করে শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত হবে৷ ২০২৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালুর মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে৷

নতুন এই পদ্ধতিতে এখনকার মতো কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন থাকবে না, এমনকি এখন যেভাবে এমসিকিউ করা হয়, তা-ও থাকবে না৷ বছরজুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন চলতে থাকবে৷

বই কেমন?

প্রথম শ্রেণিতে আছে তিনটি বই৷ ‘আমার বাংলা বই'- এর প্রথম পাঠ শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীর নিজের পরিচয় লেখার মধ্য দিয়ে৷ দ্বিতীয় পাঠ রং করা এবং আঁকা৷ তৃতীয় পাঠ ‘আমি ও আমার বিদ্যালয়' মূলত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে কথোপকথন৷ চতুর্থ পাঠ ‘আমি ও আমার সহপাঠীরা' শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথোপকথন৷ বর্ণমালা শিক্ষা আছে৷ প্রত্যেকটি পাঠেই শিক্ষার্থীদের নিজেদের করার অনেক কাজ আছে৷ আছে শিক্ষকদের সহায়তায় কাজ৷ বইটিতে ছবির ব্যবহারও অনেক৷

ষষ্ঠ শ্রেনিতে বই মোট ১০টি৷ তবে এর সঙ্গে অনুশীলন বই আছে আলাদা৷ বিজ্ঞান অনুশীলন বইটিতে দেখা গেছে যে, পুরো বইটিই মূল বইয়ের আলোকে শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনুশীলন করার নানা মডিউল দেয়া হয়েছে৷ যেমন, আকাশ কত বড়?- এই পাঠে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে৷ তার উত্তর পাওয়ার কৌশল বলে দেয়া আছে৷ শিক্ষার্থীরা নিজেরাই উত্তর খুঁজে তা লিখবে৷ আমাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি- এই পাঠেও একইভাবে শিক্ষার্থীদের কাজ দেয়া হয়েছে৷ মূল বইয়ের নাম ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ'৷ মূল বইটি বর্ণনামূলক হলেও প্রত্যেক পাঠ শেষে শিক্ষার্থীর জন্য অনুশীলন আছে৷ সপ্তম শ্রেণিরও ১০টি বই৷ সঙ্গে আছে সহায়ক বই৷ ইতিহাস বিষয়ক বইয়ের নাম ‘ইতিহাস ও  সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ'৷ এই বইয়ে বর্ণনার পাশপাশি প্রচুর প্রয়োজনীয় ঐতিহাসিক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে৷ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুশীলন আছে৷ এর আলাদা অনুশীলন বই আছে৷ সেই বইয়ে ঐতিহাসিক ও সামাজিক বিষয়ে অনুসন্ধানের কাজ আছে৷ অনুসন্ধানের পদ্ধতি বলে দেয় আছে৷ শিক্ষার্থীরা বিষয় নির্ধারণ করে অনুসন্ধান করবে৷

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন খান জানান," ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠক্রমের সব বই এখনো শিক্ষার্থীরা পায়নি৷ যা পেয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে এটা ভিন্নধর্মী শিক্ষাপদ্ধতি৷ আগের বই পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতিতে লেখা হয়েছে৷ মূল বইয়ের সহায়ক বই আছে৷ আর শুধু পরীক্ষা নয়, শ্রেণিকক্ষের কাজসহ শিক্ষকদেরও অনেক কাজ আছে৷ সব মিলিয়ে মূল্যায়ন করা হবে৷ আমাদের শিক্ষকরা কিছুটা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন৷ তবে তাদের পাঠদান পদ্ধতি বুঝতে সময় লাগবে৷”

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির  সভাপতি মো. শামসুদ্দিন জানান,‘‘প্রথম শ্রেণির বইয়ে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ যেমন গণিত বইয়ে প্রচুর ছবি দিয়ে বুঝানো হয়েছে৷ কম-বেশি বুঝাতে কয়েকটি পাঠে নানা কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আগে এত বিস্তারিত ছিল না৷ আর তাদের অনুশীলন বইও আছে৷”

ঢাকার একটি সরকারি প্রাথকি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পিংকী ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণির বই পরিবর্তন করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় শ্রেণির ‘ট্রেন’ কবিতাটির প্রথমাংশ প্রথম শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে৷ অনেক অনুশীলন আছে৷ কিন্তু আমরা কীভাবে পড়াবো তার প্রশিক্ষণ আমরা এখনো পাইনি৷ আমরা ক্লাসে যাওয়ার আগে কীভাবে পড়াবো তার একটা পাঠ লিখতে হয়৷ কিন্তু প্রথম শ্রেণির জন্য কীভাবে করবো তা বুঝে উঠতে পারছি না৷”

শুধু বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হবে না

কারিকুলাম উন্নয়ন ও পুনর্বিবেচনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, ‘‘আমাদের এখনকার শিক্ষার যে অ্যাপ্রোচ, তা হলো, শিক্ষার্থী শুধু বই পড়ে জানবে না, সে আরো পারিপার্শ্বিক সূত্র থেকেও জানবে৷ তার পরিবেশ, পরিবার, সমাজ প্রকৃতি এমনকি তার সহাপাঠীর কাছ থেকে৷ তাই তার মূল্যায়ন শুধু বছরে কয়েকটি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে হবে না৷ তার ক্লাস, তার শিক্ষক, তার সহপাঠী- এমনকি যে সমাজে সে শিক্ষার নানা কাজে যাবে, তারাও তাকে মূল্যায়ন করবে৷ এমনকি শিক্ষার্থী নিজেকেও নিজে মূল্যায়ন করবে৷ টার্গেট হলো- সে যা শিখবে তা যেন সে বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারে৷”

২০২৭ সালের মধ্যে এই পদ্ধতিকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠক্রম চালু হবে৷ দশম শ্রেণি পর্যন্ত  সায়েন্স , আর্টস বা কমার্স আলাদা কোনো বিভাগ থাকবে না৷ একাদশ ও দ্বাদশে বিভাগ থাকবে৷ তবে গুচ্ছ বিষয়ের কারণে কেউ আর্টসে পড়েও তার প্রয়োজনে গণিত বা  বিজ্ঞানের বিষয় পড়তে পারবে বলে জানান তিনি৷

২০২৮ সাল নাগাদ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন পাঠ্যক্রম চালু করতে পারব: মশিউজ্জামান

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘এই পদ্ধতির শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ খুব জরুরি৷ আর অবকাঠামো পরিবর্তন করতে হবে৷ এটা যেহেতু একপাক্ষিক নয়, অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা, তাই ক্লাসের হাইবেঞ্চ, লোবেঞ্চ তুলে দিতে হবে৷”

তিনি জানান, ‘‘শিক্ষকদের টিচিং গাইড বই থাকবে৷ এখন আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছি ৷”

অনলাইনে প্রশিক্ষণ

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর সদস্য (পাঠ্যক্রম) মশিউজ্জামান জানান," ২০২৮ সাল নাগাদ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন এই পাঠক্রম আমরা চালু করতে পারবো৷ এখন যে তিনটি শ্রেণিতে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে, তাদের বই পরিবর্তন করা হয়েছে৷ অন্য কোনো শ্রেণির বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়নি৷ পর্যায়ক্রমে যখন যে ক্লাসে পরিবর্তন আসবে, সেই ক্লাসের বইও পরিবর্তন হবে৷”

এখন পর্যন্ত মাস্টার ট্রেইনার করা হয়েছে দুই হাজার ১০০ জনকে৷ আর উপজেলা পর্যায়ে ১৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷  উপজেলা পর্যায়ের এই ট্রেইনাররা তিন লাখ ৫০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানান তিনি৷ তবে সেই প্রশিক্ষণ এখনো শুরু হয়নি৷

মোহাম্মদ তারিক আহসান জানান, ‘‘শিক্ষকরা অনলাইনে দুই ধাপে এবং সরাসরি পাঁচ দিনের একটা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন৷” আর আগের প্রশিক্ষণগুলো ছিল দুই দিনের৷ অনলাইন প্রশিক্ষণ হবে দুই ঘণ্টার৷ মশিউজ্জামান জানান, শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে এক লাখ ১৯ হাজার স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে চার লাখ তিন হাজার শিক্ষক দুই কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন৷

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ হাজার ৮৭৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষক ৮৯ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ