নতুন-পুরাতন মামলা আর সাজার চাপে বিএনপি
১ জুন ২০২৩ইতিমধ্যেই বিএনপি এব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপি বলছে সরকার এখন বিএনপিকে দমনের জন্য এই নতুন কৌশল নিয়েছে।
বিএনপি নেতা ও তাদের আইনজীবীরা দাবি করছেন, শুধু উচ্চ আদালতে দুর্নীতির মামলার বিচার নয়, নিম্ন আদালতে ৩৭ টি মামলা দ্রুত বিচারের কাজ চলছে। প্রতিটি মামলায় দিনে তিন-চার জনের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। এমকি সন্ধ্যার পরও সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। এই নিয়ে আদালত এলাকায় অওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে গত কয়েকদিনে দুই দফা হাতাহাতি হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, "এক হাজার ৩০০ মামলা নিয়ে সরকার মাঠে নেমেছে, যাতে আগামী নির্বাচনের আগে মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠনো যায় এবং নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষ ছাড়া খালি মাঠে গোল দিতে পারে।”
তিনি দাবি করেন, "বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী ড. জোবাইদা রহমানের ২০০৭ সালের মামলাগুলো চালু করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।”
তার অভিযোগ, "একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়াকে খালাস দেয়া হলেও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রীকে সাজা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সারাদেশে বিএনপির সাত শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গত ১২ দিনে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫২টি নতুন মামলা হয়েছ। এসব মামলার আসামি পাঁচ হাজার ৫০০।”
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, "সরকার এখন আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে দুইটি কাজ করতে চাইছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করা। এবং বিএনপির মাঠ পর্যায় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের শাস্তি দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করা।”
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কেউ কোনো মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য।
এই কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়েছে সাত বছর। তারেক রহমানও দুইটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত।
ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছর ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দিয়েছেন ।
এছাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে বলে সম্প্রতি আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দুর্নীতি মামলা সচলের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, "ওয়ান ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো বাতিল করা হলেও খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা বহাল রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, "এখন তারেক রহমান ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা সচল হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালের ৩৭টি মামলার বিচার চলছে নিম্ন আদালতে । ওই মামলাগুলো সব রাজনৈতিক এবং এই সরকারের আমলে দায়ের করা। ওই সব মামলার আসামি যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা। ওই সব মামলায় প্রতিদিন দুই-তিন জনের করে সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। রাতেও নেয়া হচ্ছে।”
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবু বলেন, "যে ৩৭টি মামলার কথা বলা হচ্ছে এগুলো ফৌজদারি মামলা। আসামিদের বিরুদ্ধে আগুন ও ভাঙচুরসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চার্জশিট হওয়ার পর বিচার চলছে। বিএনপি রাজনৈতিক বলতে পারে, কিন্তু আমরা তা মনে করি না। আর সাক্ষী যদি আসে তাহলে আমরা তাদের সাক্ষ্য না নিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেব?” তিনি রাতে সাক্ষ্য নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আদালতে বিশাল মামলা জট, অনেক মামলার বিচার বছরের পর বছর ঝুলে আছে তারপরও এই মামলাগুলো বিচারের জন্য সামনে এলো কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই এসেছে।”
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম বলেন, "আমরা বিএনপি বা আওয়ামী লীগ নেতা দেখি না। আমরা দেখি মামলা। এই মামলাগুলো কৌশলে বিলম্বিত করা হচ্ছিল। এখন সামনে আসছে।” আরো কত মামলা সামনে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখন আমার কাছে হিসাব নেই। আসলে জানতে পারবেন।”
এই নিয়ে চেষ্টা করেও আইনমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, "শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো সরকার বাতিল করেনি। আদালত বাতিল করেছে। কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকায় মামলাগুলো উচ্চ আদালতে বাতিল হয়। ”
তার কথা, "সরকার আদালতকে কোনোভাবে প্রভাবিত করছে না। আদালত স্বাধীন। বিএনপির নেতাদের নির্বাচনে দাঁড়ানো বাধাগ্রস্ত করা বা আন্দোলন মামলার বিচারের মাধ্যমে স্তিমিত করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নাই।”