1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশাবাদী মেহেরুন্নেসা

৮ আগস্ট ২০১২

শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেই ক্ষান্ত হননি সাহসী নারী ও বলিষ্ঠ লেখিকা মেহেরুন্নেসা মেরী৷ তিনি এখনও তাঁর লেখনির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন একটি জাতি, একটি দেশের আত্মপ্রকাশের কাহিনি৷

ছবি: P.K.Niyogi

‘‘মধুমতী নদীর পাড়ে আমাদের বাড়ি ছিল৷ সেই নদী দিয়ে লঞ্চে করে পাক সেনারা যেতো৷ সেসময় আমরা পাকসেনাদের দেখার জন্য নদীর দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতাম৷ কিন্তু একদিন খুব মারাত্মক অবস্থা ছিল৷ পাক সেনারা শাঁ শাঁ করে গুলি করতে করতে যাচ্ছিল৷ সেদিন আমার কানের পাশ দিয়ে গুলি চলে গিয়েছিল৷ আর একটু হলেই গুলিটা আমার বুকে লাগতো৷ এই ঘটনাটা আমার ভয়ঙ্করভাবে মনে পড়ে৷ এছাড়া যুদ্ধের সময় আমার খুব কাছের অনেকেই আহত হয়েছেন এবং শহিদ হয়েছে তাদের কথা আমার খুব মনে পড়ে'', এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোর কথা বলছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মেরী৷

এছাড়া নিজের সহপাঠী হারানোর ব্যথার কথা জানালেন তিনি, ‘‘জীবন নামে আমার এক সহপাঠী ছিল৷ সে যুদ্ধে গিয়েছিল এবং যুদ্ধ করতে গিয়ে শহিদ হয়৷ তার মৃতদেহ যখন নিয়ে আসা হয় সেদিনের অবস্থা আমাকে এখনও নাড়া দেয়৷ আমি সেই ঘটনা নিয়ে একটি বইও লিখেছি৷''

পেশায় ব্যাংকার হলেও লেখনির মাধ্যমে জ্ঞান ও তথ্যের সম্প্রসারণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন মেরী৷ তাঁর লেখনিতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বারবার উঠে এসেছে বাংলার অহংকার বীর নারী-পুরুষদের গল্প৷ নিজের লেখালেখি সম্পর্কে মেহেরুন্নেসা মেরী জানান, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে আমি একটি উপন্যাস লিখি৷ এটির নাম ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য'৷ এছাড়া ডা. জোহরা বেগম কাজী, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী চিকিৎসক, তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি বই লিখেছি৷ আর শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি'র উপরে একটি বই লিখেছি আমি৷ এছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং শিশুদের উপযোগী আমার কিছু বই রয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘কিশোর বিজ্ঞানের মজার গল্প' এবং ‘আবিষ্কারের গল্প'৷ এছাড়া রয়েছে একটি কবিতার বই৷ এখন পর্যন্ত আমার মোট ১২টি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ আর এখন আমি একটি বই লিখছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এর উপরে৷ এটি আগামী বইমেলায় প্রকাশিত হবে বলে আশা করছি৷''

Week 32/12 Women 1: Meherunnesa Mery (Part 2) - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

মুক্তিযুদ্ধে এবং সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও সাহিত্য পদক ৯৯' নামে স্বর্ণ পদক পান৷ এছাড়া ডা. জোহরা বেগম কাজীর উপর তাঁর লেখা বইটির জন্য তিনি নতুন দিল্লি থেকে মহাত্মা গান্ধী অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার পেয়েছেন৷

বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সোনালী ব্যাংক থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪১ বছরে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে মেহেরুন্নেসা মেরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মেয়েদের যে অবদান ছিল সেই তুলনায় এখন পর্যন্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন খুব সামান্যই হয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মই বরং এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে এসেছে৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে গবেষণা করে দেখলাম, নারীদের যতোটা মূল্যায়ন হওয়া উচিত ছিল তার কিছুই হয়নি৷ এর পেছনে একটি অন্যতম কারণ হলো, মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের অধিকাংশই ছিল গ্রামের মেয়ে৷ আর গ্রামের মেয়েদের মধ্যে অনেকেই অল্প শিক্ষিত বলে তাঁরা নিজেদের তেমনভাবে তুলে ধরার কথা ভাবেননি৷ আর গ্রামের মানুষও তাঁদের কোন মূল্যায়ন করেনি৷ এছাড়া পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের ইতিবাচক ও সাহসী ভূমিকার কথা সহজে প্রচার করতে চায় না৷ ফলে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ স্বীকৃতি এবং সম্মান দেওয়া হয়নি৷''

গত ৪১ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অর্জন সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা ও সাহিত্যিক মেহেরুন্নেসা বলেন, ‘‘আমি মনে করি, আমরা যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত না হলেও বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে অনেক এগিয়ে গেছে৷ কারণ আমরা যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছিলাম, সেই পাকিস্তান অনেক অন্ধকারে এবং আমাদের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে৷ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খেলাধুলা, লেখাপড়া, জ্ঞান-বিজ্ঞান সবক্ষেত্রেই বিশ্বে একটা স্থান করে নিয়েছে৷ এছাড়া নতুন প্রজন্মের যে চিন্তা-ভাবনা এবং শিক্ষা প্রবণতা দেখছি তাতে মনে হয় তারা বাংলাদেশকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ