1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

১৪ জুন ২০১৪

তালেবানি হামলার হুমকি এবং জালিয়াতির আশঙ্কার মধ্যেই শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে অংশ নিচ্ছেন আফগানিস্তানের জনগণ, যার মধ্য দিয়ে তাঁরা হামিদ কারজাইয়ের উত্তরসূরি হিসাবে নতুন একজন নেতাকে বেছে নেবেন৷

Afghanistan Wahlen Wahlurnen werden nach Kabul gebracht
ছবি: BANARAS KHAN/AFP/Getty Images

সব ঠিক থাকলে এই ভোটের মধ্য দিয়েই আফগানিস্তানে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে৷ দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেবেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ এবং সাবেক বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফ গনি আহমাদজাইয়ের মধ্যে যে কোনো একজন৷

তবে এমন একটি সময়ে নতুন এই প্রেসিডেন্টকে নেতৃত্বের আসনে বসতে হবে, যখন তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৩ বছরের যুদ্ধের ইতি টেনে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সৈন্যরা দেশে ফিরছে৷

গত ৫ই এপ্রিল প্রথম দফার ভোটে ফলাফলের নিষ্পত্তি না হলেও ওই নির্বাচনকে ‘সফল' বিবেচনা করা হচ্ছে দুটি কারণে৷ প্রথমত রেকর্ড ৫৮ শতাংশ ভোটার এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ দ্বিতীয়ত বড় ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকলেও তেমন কিছু সেদিন ঘটেনি৷ অবশ্য শনিবারও একই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে আফগানিস্তানকে৷ দ্বিতীয় দফা বা ‘রান অফ' ভোটের চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে আগামী ২২শে জুলাই৷

প্রথম দফায় ভোট দিয়েছেন রেকর্ড ৫৮ শতাংশ ভোটারছবি: Reuters

তালেবান জঙ্গিরা ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে তারা অবিরাম হামলা চালাবে৷ তাদের ভাষায়, এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের মাথার ওপর নিজেদের একটি পুতুল বসিয়ে দিতে চাইছে৷

অন্যদিকে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর জেনারেল আফজাল আমান ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘‘প্রথম পর্বের ভোটের দিন যারা নাশকতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে, তারা আবারো চেষ্টা করবে৷ তবে আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, তারা আবারো পরাজিত হবে৷''

এদিকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের উত্তেজনার মধ্যে ভোট জালিয়াতির আশঙ্কাও চোখ রাঙাচ্ছে৷ কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস কানিংহ্যাম এক বার্তায় বলেন, ‘‘আমরা দুই প্রার্থীর প্রতি আহ্বান জানাব, তাঁরা যেন কর্মী-সমর্থকদের ভোট জালিয়াতি থেকে দূরে রাখেন৷''

বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানের তালেবান জঙ্গিদের হটিয়ে দেয়ার পর ২০০১ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হামিদ কারজাই৷ দুই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় আফগানিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী এবার আর তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি৷

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মোট আটজন৷ কিন্তু কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থীর মধ্যে আবার এই ভোটাভুটির আয়োজন৷

প্রথম দফায় মোট ভোটের ৪৪.৯ শতাংশ পাওয়া আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটা এগিয়ে আছেন, যিনি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গোত্র ও তাজিকদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়৷ তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফ গনি প্রথম পর্বে পেয়েছেন মোট ভোটের ৩১.৫ শতাংশ, যার একটি বড় অংশ এসেছে পশতু ভোটারদের কাছ থেকে৷

আব্দুল্লাহ ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু প্রথম পর্বের ভোট শেষে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তিনি দ্বিতীয় দফার নির্বাচন বর্জন করলে আবারো সরকারের দায়িত্ব নেন হামিদ কারজাই৷

আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ

১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের মানুষ চেনে ডাক্তার আবদুল্লাহ নামে৷ পেশায় চিকিৎসক হলেও সোভিয়েতবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি অস্ত্র তুলে নেন এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে আফগান গৃহযুদ্ধের দিনগুলোতে বুরহানউদ্দিন রাব্বানির ঐক্যমত্যের সরকারের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন৷ সে সময়ই অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা এবং মার্জিত ব্যবহারের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের নজর কাড়েন তিনি৷

১৯৯৬-২০০১ সময়ে তালেবানবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন আবদুল্লাহ৷ সে সময় তাঁকে বলা হতো তাজিক কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের ডান হাত৷

প্রথম পর্বের ভোটে এগিয়ে আছেন আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহছবি: S.Marai/AFP/GettyImages

তালেবান শাসনের অবসানের পর হামিদ কারজাই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবদুল্লাহ৷ তবে ২০০৫ সালে তিনি পদত্যাগ করেন এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনে কারজাইয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হন৷

পশতু বাবা এবং তাজিক মায়ের সন্তান আবদুল্লাহকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে দুই গোত্রেরই সমর্থন পেতে হবে৷ প্রথম পর্বের ভোটে ফার্সিভাষী তাজিক অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে আব্দুল্লাহ পেয়েছিলেন ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট৷ কিন্তু পশতু অধ্যুষিত দক্ষিণ ও পূর্বে তিন শতাংশের মতো ভোট পান তিনি৷ চূড়ান্ত সাফল্য পেতে হলে তাঁকে পশতুভাষী ভোটারদেরও মন জয় করতে হবে৷

আশরাফ গনি

অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া আশরাফের জন্ম ১৯৪৯ সালে৷ লেখাপড়ার জন্য ১৯৭৭ সালে দেশ ছাড়ার পর দীর্ঘদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, চাকরি করেছেন বিশ্বব্যাংকে৷ ২৪ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশ পুনর্গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি যোগ দেন রাজনীতিতে৷

তালেবান শাসনের অবসানের পর আফগানিস্তানের প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন আশরাফ৷ ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি হামিদ কারজাই সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷

আশরাফ গনির ভোটব্যাংক পশতুভাষীরাছবি: W.Kohsar/AFP/GettyImages

ওই সময়ে নতুন মুদ্রা চালু করে, কর ব্যবস্থার সংস্কার করে এবং দাতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন৷ কিন্তু বদমেজাজ, ঔদ্ধত্য এবং কাউকে কাছে ঘেঁষতে না দেয়ার মনোভাবের কারণে যথেষ্ট বদনামও তাঁকে কুড়াতে হয়েছে৷

২০০৯ সালের নির্বাচনে আশরাফও অংশ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেবার তিনি ভোট পান মাত্র ৩ শতাংশ৷ তবে এবার সাবেক মিলিশিয়া কমান্ডার আবদুল রশিদ দস্তুমকে ‘রানিং মেট' বানিয়ে প্রথম দফার নির্বাচনে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী হিসাবে৷ প্রথম পর্বে তাঁর পাওয়া ভোটের উল্লেখযোগ্য অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতু ভোটারদের কাছ থেকে এসেছে৷ হামিদ কারজাইয়ের মতো আশরাফও একজন পশতুভাষী৷

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা আবদুল রশিদ দস্তুমের সঙ্গে জুটি বাঁধায় তরুণ ভোটারদের অনেকের ভোট হারিয়েছে আশরাফ৷ বিশ্লেষকদের মতে, তিনি জয়ী হতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের হয়ত উন্নতি ঘটবে৷ কিন্তু নিজের মেজাজ বদলাতে না পারলে দেশ চালানো তার জন্য কঠিনই হবে৷

জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি, উইকিপিডিয়া)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ