নতুন বছরেও বিশ্ব অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
২৮ ডিসেম্বর ২০২২২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারির কারণে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি ২০২২ সালে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে, এক বছর আগে এমন আশা দানা বাঁধছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট ও রেকর্ড মাত্রার মূল্যস্ফীতি সেই প্রবণতা পুরোপুরি বানচাল করে দিলো৷ পরিস্থিতি সামলাতে শিল্পোন্নত দেশগুলিকে বরং বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কিছুটা হলেও কমানোর উদ্যোগ নিতে হয়েছে৷ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, সরকারি হস্তক্ষেপ এবং চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক মুক্ত বাজার অর্থনীতির পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করায় শিল্প-বাণিজ্য জগতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঐতিহাসিক অ্যাডাম ট্রুজ এই অবস্থাকে ‘পলিক্রাইসিস' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷
২০২৩ সালেও পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখছেন না একাধিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ৷ বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আরও কিছুকাল থেকে যাবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন৷ এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি চলতি বছর সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ ফলে ২০২৩ সালে বিশ্বের একাধিক অঞ্চলে চরম মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো এলাকায় মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করলেও শিল্প-বাণিজ্য জগতের পক্ষে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে উঠেছে৷
অর্থনীতির উপর প্রবল চাপ সামাল দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা জার্মানি অভূতপূর্ব অংকের অর্থ ব্যয় করে কৃত্রিম উপায়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ব্র্যুগেল নামের এক থিংক ট্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ২০২৩ সালের জন্য ইইউ সেই লক্ষ্যে ৬,৭৪০ কোটি ইউরো ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে৷ এর মধ্যে শুধু জার্মানিই ২,৬৪০ কোটি ইউরো ব্যয় করতে চলেছে৷ এর মাধ্যমে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির মানুষের কমে চলা ক্রয়ক্ষমতার সমস্যা সামাল দেওয়া যাবে কিনা, তা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়৷ নতুন বছর জার্মানি ও ইটালি মন্দার কবলে পড়বে বলে অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন৷ কাঁচামাল ও শ্রমিক-কর্মীর অভাবের কারণে জার্মান কোম্পানিগুলি চাহিদা সত্ত্বেও উৎপাদন বাড়াতে না পারায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে৷
চীনে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলাতে কড়া লকডাউন বন্ধ হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাবার কারণে সে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা হিমশিম খেলেও দীর্ঘ বিরতির পর আমদানি-রপ্তানির গতি আবার স্বাভাবিক হলে বিশ্ব অর্থনীতি উপকৃত হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি আগামী ৮ই জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রার ক্ষেত্রেও কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে৷
যুদ্ধবিগ্রহের মতো মানুষের সৃষ্টি করা সংকট দূর করা সম্ভব হলেও জলবায়ু সংকটের থাবা অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি করে চলেছে৷ প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি বিপর্যয়ের ফলে শুধু ২০২২ সালেই ২,৬৮০ কোটি ডলার অংকের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সুইস আরই নামের রিইনসুরেন্স কোম্পানি৷ শুধু হারিকেন আয়ান নামের ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬৫০ কোটি ডলার৷ মিশরে জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলির ঝুঁকি সামাল দিতে এক বিশেষ তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
এসবি/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)