নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তক কেমন হবে তা নিয়ে এবার রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ৷ কারণ ২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তকের নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা চলেছে বছর জুড়ে৷ বিতর্কে ছিল ওড়না আর ছাগল৷ প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেয়া নিয়েও তৈরি হয় নানা বিতর্ক৷
২০১৭ সালের বইছবি: bdnews24.com
বিজ্ঞাপন
প্রাথমিকের পাঠ্য বইয়ে যে ওড়না বিতর্ক ছিল তার অবসান হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না৷ ‘ও তে ওড়না দাও' এটা প্রাথমিকের বইয়ে থাকছে না৷ তবে জানা গেছে, এবার ওড়না জায়গা করে নিয়েছে প্রাক প্রাথমিকে৷ সেখানে আছে ‘ও তে ওড়না'৷
অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক রশিদ আল রুহানী ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘নানা সূত্র থেকে যোগাড় করে আমার নতুন বছরের কিছু বই দেখার সুযোগ হয়েছে৷ চলতি বছরের প্রাথমিকের বাংলা পাঠ্যপুস্তকে ওড়না এবং ছাগলের গাছে উঠে আম খাওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল৷ নতুন বছরে বইয়ে সেই ওড়না পড়া মেয়েটিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সেখানে ওজনের একটি চিত্র দেয়া হয়েছে৷ ওজনের ওপর মেয়েটিকে রাখা হয়েছে৷ পাঠও পরিবর্তন করা হয়েছে৷ আর যেখানে ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছিল তার জায়গায় ছাগলটিকে গাছ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে৷
‘অজ নিয়ে এর আগে বিতর্ক হবার পরও শব্দটি পরিবর্তন করা হয়নি’
This browser does not support the audio element.
রুহানী বলেন,‘‘প্রাথমিক থেকে ওড়না সরানো হলেও প্রাক প্রাথমিকে নতুন করে তা জায়গা করে নিয়েছে৷ প্রাক প্রাথমিকে ‘ও' দিয়ে ওড়না চেনানো হয়েছে এবং একটি মেয়েকে ওড়না পরিয়ে রাখা হয়েছে৷ আর ছাগলকে গাছ থেকে নামানো হলেও ছাগলকে আগের মত ‘অজ' ই লেখা হয়েছে৷ অজ অর্থ ছাগল হলেও এমন একটি অপরিচিত শব্দ ব্যবহার নিয়ে এর আগে বিতর্ক হবার পরও শব্দটি পরিবর্তন করা হয়নি৷ আর ছাগলের আম খাবার বিষয়টি এখানে অপ্রাসঙ্গিক এবং হাস্যকর৷''
এই সাংবাদিক আরো বলেন, ‘‘ওই একই ছাগলের ছবি আরো পাঁচ জায়গায় প্রাথমিকের একই বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে৷ একটি পাঠ্যপুস্তকে এত ছাগল কেন?''
এছাড়া চলতি পাঠ্যপুস্তক নিয়ে রয়েছে আরো গুরুতর অভিযোগ৷ যেমন অনেকে মনে করছেন, পাঠ্যপুস্তকে হেফাজতে ইসলামের নানা আবদার মানা হয়েছে৷ তাদের দাবিতে হিন্দু এবং প্রগতিশীল লেখকদের কিছু লেখা বাদ দেয়া হয়৷ নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তকে তার কোনো পরিবর্তন আছে কিনা জানতে চাইলে রুহানী বলেন, ‘‘না সেখানেও কোনো পরিবর্তন বা পরিমার্জন আসেনি৷ নতুন বইয়ে তা আগের বইয়ের মতই আছে৷ যাদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছিল তাদের লেখা নতুন করে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷''
‘ওড়না আসলে কোনো ভুল ছিলো না, এটা নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হয়েছে’
This browser does not support the audio element.
নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক বিতর্ক নিয়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের(এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন,‘‘ওড়না আসলে কোনো ভুল ছিলো না৷ এটা নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হয়েছে৷ তাই আমরা নতুন প্রাথমিকের বইয়ে ওড়না রাখিনি৷ আর ছাগল গাছ থেকে নামিয়ে দিয়েছি৷''
প্রগতিশীল ও হিন্দু লেখকদের যেসব লেখা বাদ দেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘ওই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই৷ আর তাদের লেখা নতুন বছরের বইয়েও থাকছে না৷'' তিনি দাবি করেন, এবার শিক্ষার্থীরা ভুল ভ্রান্তি মুক্ত বই পাচ্ছে৷
নানা সমালোচনা থাকলেও জানা গেছে এবারের বইয়ের ছাপা এবং কাগজের মান ভালো৷ আর সব বইয়ের কাভারই মোটা কাগজে লেমিনেটিং করা৷
প্রতিবছরের মত এবারও সারাদেশের স্কুলগুলোতে পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে৷ বছরের প্রথম দিনেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীরা পাবে বিনামূল্যে সরকারি বই৷ এরইমধ্যে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নতুন বই পৌঁছে গেছে৷ এবার প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার চার কোটি ৪২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৩৫ কোটি বই বিতরণ করা হবে৷
ছোটদের জন্য ১০টি ক্ল্যাসিক জার্মান বই
ম্যাক্স আর মরিৎস থেকে শুরু করে বোবো ডরমাউজ অবধি জার্মান ভাষায় লেখা বহু ছোটদের বই সারা বিশ্বে নাম করেছে৷ সেরকম ১০টি ছোটদের ‘ক্ল্যাসিক’ নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Hollemann
ছোট্ট ছুছুন্দরী
জার্মান ভাষায় তার নাম ‘মাউলভুর্ফ’, ইংরেজিতে বলে ‘মোল’৷ ভল্ফ অ্যারব্রুখ-এর ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত বইটির শীর্ষক ছিল: ‘যে ছোট্ট ছুছুন্দরী নিজের চরকায় তেল দিতে জানত’৷ বেচারা ছুছুন্দরীর মাথায় গু লেগে গেছে, এই হলো তার সমস্যা – বড়রা নাক কুঁচকোলেও, কাহিনিটা ছোটদের কাছে খুবই মজার৷ এমনকি অ্যারব্রুখ বইটার জন্য ২০১৭ সালে প্রথম জার্মান লেখক হিসেবে অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন পুরস্কার লাভ করেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Peter Hammer Verlag
ম্যাক্স আর মরিৎস
উইলহেল্ম বুশের লিখিত ও চিত্রিত ‘ছেলেদের সাতটি দুষ্টুমি’ ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং আজ প্রায় প্রবচনের পর্যায়ে উঠে গেছে৷ দু’টি পাজি ছেলের নানা ধরনের দুষ্টুমির গল্পগুলো আবার গদ্যে নয়, পদ্যে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Hollemann
খরগোশের স্কুল
আলব্যার্ট সিক্সটাস-এর ‘ডি হেজশেনশুলে’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে, অলঙ্করণ করেছিলেন ফ্রিৎস কখ-গোটা৷ এটাও বস্তুত ছড়ার বই৷ খরগোশ ভাই-বোন হান্স আর গ্রেটে – অবশ্যই গ্রিম ভাইদের প্রখ্যাত রূপকথা হান্সেল ও গ্রেটেল থেকে এদের নাম নেওয়া হয়েছে – এরা স্কুলে যেত এমন একটা সময়ে, যখন মাস্টাররা কড়া আর শেয়ালরা ধূর্ত ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/F.Kraufmanm
পুতুলনাচে গণ্ডগোল
নিল্স ভ্যার্নারের ১৯৫৮ সালের বইটির অলংকরণ করেছিলেন হাইঞ্জ বেহলিং৷ কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে বইটি খুবই জনপ্রিয় ছিল, এমনকি তার উপর ভিত্তি করে একটি ফিল্মও তৈরি করা হয়েছিল৷ আজও জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বইটির জনপ্রিয়তা অম্লান৷ কাহিনি হলো: ঠাম্মার জন্মদিনের পার্টির জন্য তৈরি করা প্যানকেকগুলো চুরি করেছে কোনো এক খুদে শয়তান৷ তারপর তাকে সে কি তাড়া, সে কি তাড়া...!
ছবি: Eulenspiegel
লেখার বদলে আঁকা
আলি মিটগুচ-কে তথাকথিত ‘লুকনো ছবির বই’-এর জনক বলে গণ্য করা হয়৷ তাঁর প্রথম বই বেরোয় ১৯৬৮ সালে, নাম ছিল ‘রুন্ডহেয়ারুম ইন মাইনার স্টাট’ বা ‘আমার শহরের চারপাশে’৷ বইটি তার পরের বছর জার্মান কিশোর সাহিত্য পুরস্কার পায়৷ সেযাবৎ মিটগুচের আরো বই বেরিয়েছে এবং শুধু জার্মানিতেই নয়৷ তাঁর বইতে কথা থাকে না বটে, কিন্তু থাকে ঠিক সেই পরিমাণ হাসি৷
ছবি: Ravensburger
তিন বন্ধু
হেল্মে হাইনে-র ‘ফ্লেন্ডস’ বইটি বেরোয় ১৯৮২ সালে: একটি শুয়োর, একটি মুর্গি ও এক ইঁদুরের অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনি৷ আদতে বার্লিনের বাসিন্দা হাইনে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে বাস করেন৷ তাঁর বই নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে৷ ‘ফ্রেন্ডস’ বইটিকে ভিত্তি করে জার্মান ভাষার একটি কার্টুন ছবি বেরোয় ২০০৯ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোবো ডরমাউজ
বোবো নামের খুদে ডরমাউজ ইঁদুরকে নিয়ে লেখা বইটিতে চিড়িয়াখানা, খেলার জায়গা অথবা খিড়কির বাগানে রোজ যা ঘটে, তা নিয়ে সহজ-সরল করে আঁকা ছবিগুলোর সাথে কিছু কিছু লেখা যোগ করা হয়েছে৷ সুইস লেখক মার্কুস অস্ট্যারভাল্ডার-এর বইটি বেরোয় ১৯৮৪ সালে; সেযাবৎ বোবো ডরমাউজকে নিয়ে নানা কার্টুন সিরিজ তৈরি হয়েছে৷
ছবি: rowohlt
রংধনু মাছ
সুইশ লেখক মার্কুস ফিস্টার-এর রংচঙে ছবির বইটি বেরোয় ১৯৯২ সালে৷ নানারঙের আঁশযুক্ত মাছটির কাহিনির উপজীব্য হলো সব কিছু পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, বন্ধুত্ব ও নিজেকে আবিষ্কার করা৷ গল্পটা বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে ও একটি মিউজিক্যাল ও কার্টুন সিরিজে পরিণত করা হয়েছে৷ বাথটবে নিয়ে খেলা করার জন্যও প্লাস্টিকের রংধনু মাছ কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Nord Süd Verlag
‘নেক্সট প্লিজ’
ডাক্তারের চেম্বারে গেলে রোগীর যখন ডাক আসে, তখন তার হৃৎকম্প নিয়ে লেখা এই কবিতাটির রচয়িতা অ্যার্ন্সট ইয়ান্ডল৷ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে৷ ১৯৯৭ সালে নর্মান ইয়ুঙ্গে কবিতাটির উপর ভিত্তি করে লেখা একটি ছোটদের বই-এর অলংকরণ করেন ও বইটি জার্মান কিশোর সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়৷
ছবি: Beltz und Gelberg
‘গ্রাফেলো’
ব্রিটিশ লেখক জুলিয়া ডোনাল্ডসন আর জার্মান অলংকরণশিল্পী আক্সেল শেফলার মিলে এই ক্ল্যাসিকটি সৃষ্টি করেন ১৯৯৯ সালে৷ তার জার্মান সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে৷ কাহিনি হলো: একটি ইঁদুর অন্যান্য জীবজন্তুদের তার কাল্পনিক বন্ধুর কথা বলে ভয় দেখাচ্ছে৷ পরে দেখা গেল, সেই ভীতিকর গ্রাফেলো সত্যিই আছে! এই কাহিনির ভিত্তিতে তৈরি ২০১১ সালের একটি কার্টুন ছবি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/ZDF/Orange Eyes
10 ছবি1 | 10
এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷