২০১৪ সালের শেষ কয়েক মাস ধরে ইউরোজোনের অর্থনীতিতে ‘ডিফ্লেশন’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ কারণ মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান হার এখন ০ দশমিক ৩ শতাংশ, যেটা ২ শতাংশের মতো হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
পরিস্থিতির উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ যেমন সুদের হার কমানো, ব্যাংকগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি৷ কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় বিশ্লেষকরা এখন ‘কিউই' (কোয়ান্টিটিভ ইজিং) কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এর মানে হচ্ছে বন্ড কেনা৷
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইসিবি-র নীতিনির্ধারকদের অনেকেই এই কর্মসূচির পক্ষে তাঁদের সমর্থনের কথা বলেছেন৷ কেননা ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুফল পেয়েছে৷
তবে এর বিরোধিতাও রয়েছে৷ বিশেষ করে জার্মানি এই কর্মসূচির পক্ষে নয়৷ জার্মান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ইয়েন্স ভাইডমান মনে করেন, কর্মসূচি শুরুর পর সেটা নিয়ে যে হতাশা নেমে আসবে সেটা নিশ্চিত৷ ‘‘এর ফলে সমস্যার আসল রূপ চাপা পড়ে যেতে পারে'', বলে মনে করেন তিনি৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের সঙ্গে একমত জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থার উন্নতি করতে কাঠামোগত সংস্কারের বিকল্প নেই৷''
এছাড়া ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক ও আইনগত কাঠামোটা ভিন্ন হওয়ায় ইউরোপও যে বন্ড কেনা কর্মসূচি থেকে সুফল পাবে, সেটা মনে করার কারণ নেই বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করে, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৫ থেকে সাড়ে ৫ ভাগের বেশি হবে না – বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যা হবে একটি বড় ধাক্কা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অনিশ্চিত অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন এই মহিলা যাত্রী৷ অবরোধের কারণে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটায় কখন যে ট্রেন আসবে তার কোনো ঠিক নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিপর্যস্ত অর্থনীতি
অবরোধের কারণে সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ৷ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘকালীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে৷ তাই সহিংসতা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় সম্প্রতি সাদা পতাকা মিছিল করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ী৷
ছবি: DW/M.Mamun
নীরব বাস টার্মিনাল
মহাখালী বাস টার্মিনালে থেমে আছে দূরপাল্লার বাস৷ বিরোধী জোটের চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে বাসগুলো টার্মিনাল ছেড়ে যেতে পারেনি৷ এতে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি তো হয়েছেই, ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির হিসেব নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
চারদিন ধরে কাজ নেই
আশি বছর বয়সি শুকুর আলীর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এই ঠেলাগাড়ি৷ গত চারদিন ধরে গাবতলীতে কোনো পণ্য না আসায় অলস বসে আছেন তিনি৷ এই কদিনে একটি পয়সাও হাতে না আসায় কিভাবে চলবে, তাই ভাবছেন এই বৃদ্ধ৷ আর ভাবছেন, নিজের প্রিয় দেশ আজ কোন পথে?
ছবি: DW/M.Mamun
ভোগান্তির শেষ কবে?
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে নিয়মিত জুতার পসরা সাজিয়ে বসেন শুভ৷ অন্য সময় টার্মিনালে বহু মানুষের আনাগোনা থাকায় ব্যবসা মন্দ চলে না৷ তবে অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ তার বিক্রিও৷ শুভ রাজনীতি বোঝে না, ওর মনে শুধু প্রশ্ন, ওদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের এই ভোগান্তির শেষ কবে?
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
মহিলা শ্রমিকদের কি হবে?
অবরোধের কারণে পরিবহণ সংকট ও সহিংসতার ভয়ে এই পোশাক শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে৷ না গেলে চাকরির ভয় , তাছাড়া সংসার চলবে কি করে,আছে সেই চিন্তাও? ছবিটি ঢাকার কল্যাণপুরের৷ টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অলস সময়
অবরোধের কারণে ট্রাক শ্রমিকদের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকে৷ ঢাকার গাবতলীতে কাজের অপেক্ষায় আছেন এই শ্রমিকরা৷ দেশের রাজনীতিকরা কি চায় সেটা তারা জানতে চান না৷ তবে তাদের চাহিদা খুব বেশি নয় – শুধু পেট ভরে খাওয়া, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো আর নিশ্চিন্তে ঘুমানো৷
ছবি: DW/M.Mamun
আবারো শূন্য হাতে?
অবরোধের কারণে নৌকা চালকদের ব্যস্ততা নেই বললেই চলে৷ ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের এই নৌকা চালকদের মনে প্রশ্ন – কোনো যাত্রী আসবেন কি, নাকি শুধুই অপেক্ষা, অর্থাৎ আবারো খালি হাতে বাড়ি ফেরা?
ছবি: DW/M.Mamun
কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া বন্ধ নয়!
ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পণ্য কম আসায় কাজ নেই শ্রমিকদের৷ কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ থাকতে পারে না! দু’বেলা যে খাওয়া চাই৷ খেতে বসে কেউ কেউ ভাবছেন ঘরে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা কি কিছু খেতে পেল? কারণ গত কয়েকদিন ধরে যে কোনো রোজগার নেই৷
ছবি: DW/M.Mamun
সাধারণ মানুষেরই কষ্ট
কারওয়ান বাজারে ভ্যান শ্রমিকদেরও কাজ নেই৷ শুয়ে বসে কতক্ষণ? আর খিদে পেলে? অবরোধের কারণে যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অবস্থা নিয়ে কি কেউ ভাবছেন?
ছবি: DW/M.Mamun
আড়ত শ্রমিকদেরও কাজ নেই
অবরোধের কারণে কারওয়ান বাজারের এই আড়ত শ্রমিকরা তাস খেলে সময় কাটাচ্ছেন৷ কিন্তু এভাবে ক’দিন চলে? সংসারের কথা মনে হলে তাস খেলে সময় কাটানোর সামান্য আনন্দটুকুও যে আর থাকে না!
ছবি: DW/M.Mamun
11 ছবি1 | 11
অবশ্য বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসিবি নতুন বছরের শুরুতে কিংবা তার পর বন্ড কেনা কর্মসূচি চালু করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ জানুয়ারির ২২ কিংবা মার্চের ৫ তারিখে ইসিবি-র বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে৷
প্রসঙ্গ গ্রিস
পর পর তিনবার চেষ্টা করেও একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেনি গ্রিস৷ তাই জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী৷ ঐ নির্বাচনে বামপন্থি সিরিজা দল ক্ষমতায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফ-এর ব্যয়সংকোচ নীতির বিরোধী৷ তাই দলটি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে গ্রিসে যে হারে সংস্কার চলছে, সেটা ধীর হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷