ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে জার্মানির জন্য কঠিন পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷
বিজ্ঞাপন
জ্বালানি সংকট নিয়ে জনগণ যে ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন তার প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, জার্মানিকে এ বিষয়ে কেউ আর ‘ব্ল্যাকমেইল' করতে পারবে না৷
নতুন বছরের বার্তায় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ২০২২ সালে তারা যে ধৈর্য্য, শক্তি আর আস্থার পরিচয় দিয়েছেন ২০২৩ এও যেনো তা অব্যাহত থাকে৷
আজ রাতে বর্ষবরণের প্রাক্কালে টেলিভিশনগুলোতে তার সম্পূর্ণ ভাষণ প্রচার করা হবে৷ তবে ডয়চে ভেলের হাতে তার লিখিত বক্তব্য চলে আসায় তা প্রকাশ করা হলো৷
ইউক্রেন যুদ্ধ: পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন!
ফের ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রের সামনে রকেট হামলা রাশিয়ার। আরো অঞ্চল পুনর্দখলের দাবি জেলেনস্কির।
ছবি: REUTERS
রকেট হামলা
বৃহস্পতিবার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের খুব কাছে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। রকেটের আঘাতে একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ইউক্রেন প্রশাসনের স্থানীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ভাঙা বাড়ির নীচে এখনো অন্তত পাঁচজন আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারী। অন্যজনের অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হয়েছে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করতে চায়। বুধবার এবিষয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। পরমাণু কেন্দ্রটির সম্পূর্ণ হস্তান্তর চেয়েছিলেন তিনি।
ছবি: REUTERS
ইউক্রেনের বক্তব্য
ইউক্রেন কোনোভাবেই পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়ার হাতে দিতে প্রস্তুত নয়। বুধবার দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন ঝাপোরিজ্ঝিয়া অঞ্চলে আরো তিনটি জায়গা পুনর্দখল করেছে। কোনোভাবেই ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্র রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
ছবি: Ukrainian Presidency/AP/picture alliance
পরমাণু সংস্থার প্রধান ইউক্রেনে
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির প্রধান কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। কীভাবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। জেলেনস্কিকে আশ্বাস দিয়েছেন।
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
রাশিয়ার অধিকারে
যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করে। তার ভিতর থেকেই তারা লড়াই চালাচ্ছিল। কিন্তু পরমাণু কেন্দ্রটি দখল করলেও কর্মীদের তারা তাড়িয়ে দেয়নি। ইউক্রেনের কর্মীরাই সেখানে কাজ করছিলেন।
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
বাইডেনের ভয়
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার সেনা লড়াইয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এবং সে কারণেই তার ভয়, পুটিন যে কোনো সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর পরমাণু অস্ত্র নিয়ে এত চিন্তা করতে হয়নি বলে এদিন মন্তব্য করেছেন বাইডেন।
ছবি: picture alliance / Consolidated News Photos
রাশিয়ার অবস্থান
পুটিন আগেই জানিয়ে রেখেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব আঘাত পেলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতেও তিনি ভয় পাবেন না।
ছবি: Dmitry Astakhov/Sputnik/REUTERS
ইউক্রেনের অবস্থান
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের যে জমি দখল হয়েছে, দেশের সেনা তা উদ্ধeর করতেও বদ্ধপরিকর। যার অর্থ ইউক্রেন ক্রাইমিয়া দখলেরও চেষ্টা করবে। পুটিন আগেই জানিয়েছিলেন, ক্রাইমিয়ায় আঘাত হানলে রাশিয়া ফের কিয়েভের অভিমুখে যাত্রা করবে।
ছবি: dpa/APA Images/Zuma/picture alliance
9 ছবি1 | 9
২০২২ সালকে ‘কঠিন বছর' হিসেবে উল্লেখ করেছেন শলৎস৷ তবে তার দেশ ভবিষ্যতকে সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ আগামী বছরে জার্মানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শলৎস৷
‘ইউক্রেনের মানুষদের প্রতি সমব্যথী'
শলৎসের বার্তার মূল বক্তব্য ছিলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘অনেকেই যুদ্ধ নিয়ে চিন্তিত৷ আমাদের পূর্ণ সমবেদনা আছে ইউক্রেনের মানুষের প্রতি৷ বছরের শেষ দিনেও রাশিয়া সেখানকার মানুষের উপর বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে৷''
কিন্তু জার্মানির সহায়তায় ইউক্রেনীয়রা নিজেদের মাতৃভূমি রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতেও জার্মানি এই সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি৷
এই যুদ্ধের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো আগের চেয়েও অনেক ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি৷ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনের শরণার্থী৷
শলৎস বলেছেন, ‘‘যুদ্ধের প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পড়েছে৷ বাজার করতে, পেট্রোল ভরতে অথবা বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল দিতে গিয়ে সেটা আমরা সবাই টের পাচ্ছি৷''
কিন্তু জার্মানি আর রাশিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করতে দিবে না বলে জানান তিনি৷ বলেন, এই যুদ্ধ জার্মানদের আরো ঐক্যবদ্ধ করেছে৷ গ্যাস মজুদ এবং সরবরাহে তার সরকারের আরো পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান শলৎস৷
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনগণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে সরকার নতুন বছরে নানা প্যাকেজের ব্যবস্থা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷