আসন্ন বড়দিন ও নববর্ষ উৎসবের সময় জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন নেতারা৷ ১০ই জানুয়ারির পর তাই আরও কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ করোনায় মৃত্যুর হার রেকর্ড ছুঁয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির চলমান আংশিক লকডাউন আসন্ন বড়দিন ও নববর্ষ উৎসবের সময় কিছুটা শিথিল করা হলেও কড়াকড়ির মেয়াদ নতুন বছর পর্যন্ত বাড়ানো হলো৷ বুধবার ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতাদের আলোচনার পর বর্তমান বিধিনিয়ম কমপক্ষে ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই সময়কালে করোনা মহামারির পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরও কড়া সিদ্ধান্তেরও পূর্বাভাষ দিয়েছেন নেতারা৷
গত ২রা নভেম্বর থেকে জার্মানিতে যে ‘লকডাউন লাইট’ শুরু হয়েছে, তার ফলে দৈনিক সংক্রমণের হার আর না বাড়লেও ধারাবাহিকভাবে কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দিনে ২২,০০০-এরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত দেশের কিছু অংশে স্থানীয় পর্যায় আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে৷ বার্লিনের মতো বড় শহরের হাসপাতালের আইসিইউ প্রায় ভরে গেছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে ৪৮৭ জন মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, জার্মানির জন্য যা এক রেকর্ড৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পূর্বশর্ত হিসেবে এক লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন৷ টানা সাত দিন ধরে দৈনিক সংক্রমণের হার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পঞ্চাশের কাছাকাছি নেমে এলে তবেই কড়াকড়ি শিথিল করতে চান তাঁরা৷ বর্তমানে সেই গড় হার প্রায় ১৩৫৷ আগামী ৪ঠা জানুয়ারি ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চান৷
আসন্ন বড়দিন ও নববর্ষ উৎসবের সময়ে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ৷ সে সময়ে অসংখ্য মানুষ বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন৷ সর্বোচ্চ দশ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সমাবেশের অনুমতির ফলে করোনা সংক্রমণের হার আরও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে লকডাউনের বিধিনিয়ম আরও কড়া করতে হবে৷ তাঁর মতে, এখনো এমন সময় আসে নি৷ অন্য এক মুখ্যমন্ত্রী স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বন্ধ রাখা ও দোকানবাজারের সম. কমিয়ে দেবার মতো পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বুধবারের আলোচনায় করোনার টিকা কর্মসূচি সম্পর্কে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ তাঁর মতে, সবকিছু ঠিকমতো চললে ডিসেম্বর মাসের শেষেই জনসাধারণকে টিকা দেবার কাজ শুরু হবে৷
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো প্রথম টিকার জরুরি অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নি৷ তবে চলতি মাসেই সেই অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে৷ জার্মানি টিকা বিতরণের অবকাঠামো প্রস্তুত রাখার কাজ করছে৷
ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবের কারণে জার্মানি আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারছে না৷ ম্যার্কেল ও স্যোডারের মতো নেতারা শুরু থেকেই আরও কড়া বিধিনিয়মের পক্ষে সওয়াল করলেও কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয় নি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷