উত্তর কোরিয়া ফের ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলে দাবি জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার।
বিজ্ঞাপন
জাপানের কোস্ট গার্ড প্রথম বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। তাদের দাবি, কোরিয়ান পেনিনসুলার সমুদ্রে উত্তর কোরিয়া নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। তবে সেটি ব্যালেস্টিক মিসাইল কি না, তা তারা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াও সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে জানায়, সম্ভবত সমুদ্রে নতুন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার বক্তব্য, কিম জং উন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রই পরীক্ষা করেছেন কি না, তা স্পষ্ট না হলেও তারা যে সমুদ্রে অস্ত্রের পরীক্ষা করেছে, তা পরিষ্কার। গোয়েন্দাদের ধারণা সেটি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
ঘটনার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ করেছেন। তার বক্তব্য, একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে কিম জং উন কোরিয়া পেনিনসুলার শান্তি নষ্ট করছেন। কোরিয়ার সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করে উত্তর কোরিয়া সাধারণ মানুষের খাবারের দিকে মন দিক।
কিম অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাবেন। বছর শেষের বক্তৃতায় কিম বলেছেন, আত্মরক্ষার অধিকার তাদের আছে। যেভাবে কোরিয়া পেনিনসুলায় তাদের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে, তার মোকাবিলায় অস্ত্র পরীক্ষা করতেই হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে কিম বলেন, এর জন্যই দেশের মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। সকলে যাতে খাবার পান, সে দিকে সরকার নজর রাখবে।
জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, উত্তর কোরিয়ায় তীব্র খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। নারী এবং শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ। অপুষ্টিতে ভুগছেন বহু মানুষ। বস্তুত, অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশ। জাতিসংঘও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। ফলে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে না উত্তর কোরিয়া।