চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের অমীমাংসিত সমস্যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় চ্যালেঞ্জ৷ চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান নৈকট্য দিল্লির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে থাকবে৷ কাশ্মীর ইস্যু জিইয়ে রাখার ইন্ধন জোগাবে এই নৈকট্য৷
বিজ্ঞাপন
ভারত-মার্কিন সহযোগিতার করমর্দনে দিল্লিকে হাত বাড়াতে হবে সতর্কভাবে, মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা৷ বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক থাকবে অটুট৷
বহু-কেন্দ্রিক নতুন বিশ্ব পরিস্থিতি শীতল যুদ্ধের পর ক্রমশই জোরালো হচ্ছে৷ এর প্রধান কারণ, শক্তিধর দেশগুলির নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, উগ্র-দক্ষিণন্থি রাজনৈতিক দলগুলির উত্থান, মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং জঙ্গিবাদ দমনে আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার আঁচ ভারতের সামনে এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে নতুন বছরে৷ ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাবে৷ অন্যদিকে ভারতের সিকিম, চীনের তিব্বত এবং ভূটানের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে স্ট্র্যাটেজিক ডোকলাম এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল সীমান্তে চীনের তৎপরতা বৃদ্ধিতে ভারত-চীন সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ এশিয়া, তথা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ওপর চীনের চাপ অব্যাহত থাকবে, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মহল৷
ত্রিদিব চক্রবর্তী
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) বাস্তবায়িত হচ্ছে, যেটা যাবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত গিলগিট-বালটিস্তানের মধ্য দিয়ে৷ যুক্ত করবে করাচির পশ্চিম উপকূলের গদর বন্দরকে চীনের সিংজিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে৷ অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তা রক্ষা করতে যদিও পাকিস্তান বারো হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করবে, কিন্তু কালক্রমে গিলগিট-বালটিস্তানের নিরাপত্তার ভার নেবে চীনের লাল ফৌজ৷ পাকিস্তানে ব্যাপক সংখ্যায় লালফৌজের উপস্থিতি এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিপদের কারণ হতে পারে বলে ধারণা কূটনৈতিক মহলের৷ বালুচিস্তান, সিন্ধ ও গিলগিট-বালটিস্তানে জঙ্গিবাদ নতুন করে মাথা তুলছে৷ দেখা দিচ্ছে তালিবানিকরণ, বাড়ছে জাতিগত উত্তেজনা এবং ফলে ভেঙে পড়ছে অর্থনৈতিক কাঠামো৷ পরিণামে ঐ অঞ্চলে বাড়বে রক্তপাতের আশংকা৷ এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে নতুন বছরে ভারতের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ দ্বিতীয়ত, চীন-পাকিস্তান করিডরের পেছনে আছে ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ রাশিয়ার সমর্থন৷ শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক মহড়াতেও যোগ দেয় রাশিয়া৷ আগ্রহ প্রকাশ করে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে৷ সেটাও হবে ভারতের স্বার্থের পরিপন্থি৷
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
কাজেই অ্যামেরিকাকে পাশে নিয়ে রাশিয়াকে কিভবে হাতে রাখা যায়, সেটাও হবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্র এবং কূটনীতির পক্ষে এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ ভারতের পাকিস্তান নীতিতে কোনো পরিবর্তনের আশা দেখা যাচ্ছে না৷ তবে কাশ্মীর নীতিকে আরও শান্তিমুখী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷ ডোনাল্ড প্রশাসনের পাকিস্তান বিরোধী নীতি, বিশেষ করে সন্ত্রাসে মদত দেবার অভিযোগে পাকিস্তানকে যেভাবে তুলোধোনা করা হয়েছে, তাতে ভারতের কাশ্মীর, তথা পাকিস্তান নীতির নৈতিক জয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে সেটা মনে হলেও এখনই এই নিয়ে উদ্বেলিত হবার কারণ নেই৷ ট্রাম্পের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে চীন৷ এই অবস্থায় দিল্লিকে আরও সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের মতে, দিল্লির উচিত হবে ভারত-চীন-আ্যামেরিকার মধ্যে এক ত্রিস্তরীয় কূটনৈতিক পরিসর তৈরি করা৷ তবে সেটাকে কিভাবে করা হবে সেটাই হবে দিল্লির সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷
পাকিস্তানে ভারতের যেসব পণ্য নিষিদ্ধ
একই ধরনের খাদ্যাভ্যাস, প্রায় একই ধরনের সংস্কৃতি, এরপরও ব্যবসার ক্ষেত্রে দু'দেশের চরম বৈরি সম্পর্ক৷ পাকিস্তানে এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ৷ ছবিঘরে এ সবের মধ্যে কয়েকটি পণ্যের একটি তালিকা দেয়া হলো৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
নিষিদ্ধ তালিকা
গত বছর পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে আমদানি করা যাবে না – এমন এক হাজারেরও বেশি পণ্যের তালিকা তৈরি করে আদেশ জারি করে৷ তবে এর বাইরে শর্তসাপেক্ষে যে কোনো পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে পারবে পাকিস্তান৷
ছবি: DW/F. Khan
টুথপেস্ট
ছবি: Fotolia/djama
ডায়পার
ছবি: Getty Images/Tim Boyle
নোটবুক, ডায়রি, ফাইল
ছবি: DW/M Shawyder
পেন্সিল
ছবি: HECTOR RETAMAL/AFP/Getty Images
পেন, নিব, কালির রিফিল
ছবি: picture-alliance/OKAPIA/Dr. M. Baumgärtner
পেন্সিল শার্পনার
ছবি: Fotolia/picsfive
অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম
ছবি: Getty Images/AFP/M. Rasfan
চোখের ড্রপ
ছবি: Colourbox
রান্নার বাসনপত্র
ছবি: DW/S. Waheed
মিক্সার
ছবি: Vanillaechoes/colourbox
চা বা কফি মেশিন
ছবি: R. Gellatly/Z. Marks
ট্র্যাক্টর
ছবি: AFP/Getty Images
যে কোনো ধরনের বাক্স
ছবি: Imago/Arnulf Hettrich
সুটকেস
ছবি: Picture-alliance/dpa/epa/Jagadeesh NV
বিভিন্ন ধরনের কাগজ
ছবি: bahrialtay - Fotolia.com
টয়লেট পেপার
ছবি: picture-alliance/dpa
তোয়ালা ও রুমাল
ছবি: colourbox.de
স্যান্ডেল ও জুতা
ছবি: NOAH SEELAM/AFP/Getty Images
টাইলস
ছবি: Colourbox
এলইডি লাইট
ছবি: Reuters
খেলাধুলার সরঞ্জাম
ছবি: Getty Images/AFP/J. Watson
ব্লেড, রেজার
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
নাটাই
ছবি: UNI
অটোমোবাইল
ছবি: Daimler AG
গাড়ির যন্ত্রপাতি
ছবি: Reuters
সাইকেল ও তার যন্ত্রাংশ
ছবি: DW
৩০০ লিটারের চেয়ে বড় পানির ট্যাংকি
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Jallanzo
প্লাস্টিকের চুড়ি
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
পারফিউম বা সুগন্ধি
ছবি: DW/L. Tarek
চামড়ার ব্যাগ বা পণ্য
ছবি: DW/Vishwaratna Srivastava
সিংক বা বাথটাব
ছবি: Dounia Cherfaoui
32 ছবি1 | 32
পাশাপাশি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কুলভূষণ যাদবের ফাঁসি আটকাতে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতে কুলভূষণের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে পারলে নিঃসন্দেহে সেটা হবে বড় কূটনৈতিক সাফল্য৷ ভারতের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান স্তম্ভ বলা বাহুল্য লুক-ইস্ট নীতি৷ প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতাভিত্তিক সুসম্পর্ক অটুট রাখা৷ সেই লক্ষ্যে নতুন বছরের প্রথমেই দক্ষিণ-পূর্ব আশিয়ান দেশগুলি সফরে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ দশটি আশিয়ানভুক্ত দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবেন দিল্লিতে ২৬শে জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে৷ পাশাপাশি সার্ক দেশগুলির গুরুত্ব ক্রমশই ক্ষীয়মান৷ ভবিষ্যতে ভারতীয় উপমহাদেশে, তথা দক্ষিণ এশিয়ায় এর প্রয়োজনীয়তা বিশেষ থাকবে বলে মনে হচ্ছেনা৷ কাজেই ভারতের লক্ষ্য হবে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক-স্তরে সহযোগিতা আরও মজবুত করা৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ত্রিদিব চক্রবর্তী অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করে ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘নতুন বছরে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক৷ তারমধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ পাকিস্তান৷ অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে লাগাতার সমরাস্ত্র জুগিয়ে এসেছে৷ এখন চাকা ঘুরে গেছে৷
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
10 ছবি1 | 10
পাকিস্তান এখন চীনের কাছে হাত পেতেছে৷ চীনের দ্বারা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে ইসলামাবাদ৷ যেমন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর৷ দ্বিতীয়ত, চীন যেভাবে দ্রুত উন্নতি করছে সব ক্ষেত্রে, ভারতকেও তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ কারণ, ভারতের দিক থেকে সবথেকে বড় হুমকি চীন৷ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক সন্দেহাতীত৷ তবে বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণঅর্থী ইস্যু দু'দেশের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে৷ দিল্লির উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রেখে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা, যাতে ঢাকার শরণার্থী সমস্যার সুরাহা হয়৷'' অধ্যাপক চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে আরও বললেন যে, অ্যামেরিকা এখন ভারতের দিকে হাত বাড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভুললে চলবে না, অত্যধিক মার্কিন নির্ভরশীলতা কাম্য নয়৷ অতীত অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলছে৷ ওয়াশিংটন ভারতকে এখন কাছে টানছে নিজের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে৷ চীনকে আটকাতে৷